পুষ্প
বলধায় ফোটা জহুরিচাঁপা

বলধা উদ্যানে বর্ষায় ফোটা জহুরিচাঁপা ফুল - লেখক
মৃত্যুঞ্জয় রায়
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫ | ০১:০৬ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ | ০৭:০৭
কয়েকবার নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়িতে গিয়েছি। দু’বার রাজবাড়ির অন্দরমহল ও প্রাসাদ সংযুক্ত ইটালিয়ান গার্ডেন ঘুরে গাছগুলো দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির নাম পাল্টিয়ে উত্তরা গণভবন করা হলেও ইটালিয়ান গার্ডেনের নাম বদলায়নি।
ধারণা করা হয়, ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে রাজবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি পুনর্গঠনের সময় উদ্যানটি তৈরি করা হয়। বাগানের অলংকার ও মূর্তি ইতালি থেকে আনা হয়েছিল বলে শোনা যায়। এ কারণে বাগানটির নাম হয় ইটালিয়ান গার্ডেন। বাগানের এক পাশে একটা গাছ দেখিয়ে জনৈক মালী বলেছিলেন, ‘ওটা ডিম ফুলের গাছ; ঝিলের পাড়ে আছে হৈমন্তী গাছ’। দুটি নামই নতুন মনে হওয়ায় গাছ দুটি দেখানোর অনুরোধ করি। হৈমন্তী গাছের কাছে গিয়ে শনাক্ত করি, ওটি আসলে কুরচি বা গিরিমল্লিকা গাছ। এগ-প্লান্ট বা ডিম-ফুল বলে যাকে দেখানো হলো, সেটিতে ফুল দেখে চিনতে কষ্ট হলো না, ওটাই জহুরিচাঁপা।
আহা, জমিদারদের কী বিলাসিতাই না ছিল! আর বাগান পরিকল্পনাও চমৎকার। প্রাসাদের একটি কক্ষের জানালার কোলে লাগানো জহুরিচাঁপা গাছে ফুল ফোটে রাতে বেলায়; সুগন্ধ বিলায়। সেই সৌরভ হাওয়ায় ভেসে ঢোকে কক্ষের ভেতর। কক্ষবাসীকে দেয় নির্মল প্রশান্তি।
১ মে একটা ফেসবুক পোস্টে দেখলাম, রমনায় জহুরিচাঁপা ফুটেছে। পরদিন সকালে গিয়ে হাজির হলাম সেখানে। শাপলাকুঁড়ি পানির ট্যাঙ্কের কাছে তিনটি রাস্তা দিয়ে ঘেরা জায়গাটায় দুটি জহুরিচাঁপা গাছ। একটিতে ফুল নেই। শেষে গামারি গাছের কাছে পেলাম অন্য গাছটিকে। তাতে দুটি ফুল, কয়েকটা কুঁড়ি। ফুলের দু-একটা পাপড়ি খসে পড়েছে। মৃদু সুগন্ধ টের পাচ্ছি। কিন্তু হায়! ছবি তোলার জন্য ফুলকে একটু বোঁটা ধরে উঁচু করতেই প্রায় সব পাপড়ি খসে পড়ল। মন খারাপ করে ফিরে এলাম, তবু সান্ত্বনা পেলাম– রমনায় দুটি জহুরিচাঁপা গাছ আছে। অন্যদিন না হয় ছবি তোলা যাবে।
প্রকৃতিসখা রবিনকে নিয়ে আরেকবার গেলাম রাতের বেলায়। একটি ফুটি ফুটি করা ফুলের দেখা পেলাম। তাতে ঠিক ছবি তোলার জন্য মন ভরল না। অবশেষে মাঝ আষাঢ়ে বলধা উদ্যানের সাইকীতে গিয়ে আরাধ্য ফুলের দেখা পেলাম। মালী হাফিজুর রহমান সাহায্য করলেন ফোটা ফুলের ছবি তুলতে।
জহুরিচাঁপা নামটা যত সুন্দর, ফুল দেখে তত সুন্দর মনে হয় না। এটি ম্যাগনোলিয়া গোত্রের। কিন্তু ম্যাগনোলিয়া বা উদয়পদ্মের মতো পাপড়ি পুরোপুরি খোলে না। তাই ফোটা ফুল দেখতে ডিমের মতো লাগে। এ জন্যই ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে এগ-প্লান্ট। দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির মালীদের মুখে মুখে নাম রটেছে বাংলা নাম ডিম-ফুল।
জহুরিচাঁপার উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ম্যাগনোলিয়া লিলিফেরা (Magnolia lillifera) ও গোত্র ম্যাগনোলিয়েসি। গুল্ম প্রকৃতির এ গাছ গোড়া থেকে কয়েকটা খাড়া কাণ্ড নিয়ে ঝোপালো হয়ে বাড়তে থাকে। গাছ বড় জোর ২ মিটার লম্বা হয়। পাতা খসখসে, ধূসর সবুজ, মাঝারি আকারের, উপবৃত্তাকার, ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল ঘিয়ে-সাদা, সুগন্ধি। কিছুটা আনারসের মতো ঘ্রাণ পাওয়া যায়। এই ঘ্রাণ প্রশান্তিদায়ক ও মানসিক চাপ মুক্ত করে। ফুলের পাপড়ির গড়ন কিছুটা ঝিনুকের মতো। তবে জাতভেদে ফুলের কিছু পার্থক্য দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি ফুল ফোটে গ্রীষ্ম-বর্ষায়। বীজ হয় না। তাই গুটিকলম ও দাবাকলম দিয়ে চারা তৈরি করা হয়। ইন্দোমালয় অঞ্চল জহুরিচাঁপার আদি নিবাস। বাগানে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে দুর্লভ গাছ হিসেবে এটি লাগানো হয়।
- বিষয় :
- পুষ্পা