ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

এনসিটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া চলবে

এনসিটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া চলবে

.

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫ | ০১:০৮ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ | ০৭:১৯

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ছয় মাস টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  

বৈঠক শেষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল-সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানালেও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরই সিদ্ধান্ত নেবে– কারা এ টার্মিনাল পরিচালনা করবে। তবে দরপত্র ডাকা হবে না। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এবং ছয় মাসের জন্য আপাতত দায়িত্ব দেওয়া হবে। বুধবার (আজ) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

বৈঠকে উপস্থাপিত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমানে এনসিটি পরিচালনাকারী সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৬ জুলাই। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার জন্য টার্মিনাল অপারেশন সচল রাখা অবশ্যক। কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে বর্তমান অপারেটরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর টার্মিনালটি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত ছয় মাস চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে টার্মিনালের যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য বিষয় পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক টেকনিক্যাল জনবল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা প্রয়োজন হবে। 

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, টার্মিনালটি ছয় মাস মেয়াদে পরিচালনার জন্য বর্তমানে বিদ্যমান কি-গ্যান্ট্রি ক্রেন, বাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট পরিচালনা এবং আইটি ব্যবস্থাপনা পরিচালনায় মাসিক সাড়ে আট কোটি টাকা হারে ছয় মাসে আনুমানিক ব্যয় হতে পারে ৫১ কোটি টাকা। 

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২২-এর ১৮ ধারা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ বন্দরে পণ্য গ্রহণ, বোঝাই, সংরক্ষণ, খালাস ও সরবরাহের জন্য প্রয়োজন মনে করলে বন্দরের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বার্থ বা টার্মিনাল অপারেটর হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে। 

এনসিটিতে জেটি আছে পাঁচটি। এগুলোতে চারটি সমুদ্রগ্রামী জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী একটি জাহাজ ভিড়তে পারে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল। টার্মিনালটি ১৭ বছর ধরে দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক পরিচালনা করে আসছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় নৌবাহিনীকে এ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। গত শনিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বন্দর কর্মকর্তাদের বৈঠকে বন্দরের সহায়তায় নৌবাহিনীর মাধ্যমে টার্মিনালটি পরিচালনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে ওই বৈঠক হয়।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছে। 

এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সমকালকে বলেন, ‘সরকার থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও জানানো হয়নি বন্দরকে। সিদ্ধান্ত পেলে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করব।’ বন্দর নিজে, নাকি নৌবাহিনী পরিচালনা করবে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুই ধরনের প্রস্তুতিই আমাদের রয়েছে। মন্ত্রণালয় যেভাবে সিদ্ধান্ত দেয়, সেভাবেই তা বাস্তবায়ন করা হবে।’

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে কয়েক মাস ধরে  বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিদেশিদের হাতে বন্দর ছেড়ে দিলে দেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে– এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অরাজনৈতিক সংগঠন মত দিয়েছে।

আরও পড়ুন

×