ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

সাংবাদিকদের সিইসি

ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে

ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে

এ এম এম নাসির উদ্দিন

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫ | ০১:১৭ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ | ০৭:৫৪

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে নির্বাচনের তারিখ বা সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা বলেছিলেন। লন্ডন বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারির কথা এসেছে। দুটি টাইমফ্রেমই সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকার যখন নির্বাচন করতে চায়, তখনই যাতে করা যায়– আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি। অসুস্থতার কারণে গত দুই কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকার পর গতকাল প্রথম অফিস করেন তিনি। এর পর বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিইসি।

গত ২৬ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিইসি। ওই সাক্ষাতের বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর কিংবা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। এরই মধ্যে কর্মস্থলে সিইসির অনুপস্থিতি নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়।

নাসির উদ্দিন জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। তারপরও কিছু বিষয় আলোচনায় এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। ইসি পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা জানানো হয়েছে।

গত দুই-তিন দিন সিএমএইচে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নানা খবর পেয়েছি। আমার কী অসুস্থ হওয়ার অধিকারও নেই!’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। অনেক টকশোতে দেখলাম– এ সাক্ষাৎ হতে পারে কিনা, এটি করা ঠিক হয়েছে কিনা, আইনসম্মত হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্ন করছেন। একজন তো বললেন, সাক্ষাতের কারণে হয় প্রধান উপদেষ্টা, নয়তো সিইসি যেকোনো একজনের পদত্যাগ করা উচিত!

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষ, আমিও তো নিরপেক্ষ। তাই এটি ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎ। এখন যেহেতু সমস্ত মনোযোগের কেন্দ্র নির্বাচন, সেহেতু কথা প্রসঙ্গে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

ইসিকে সরকারের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ রাখতে হয় জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, সরকার তো কেবল প্রধান উপদেষ্টা নন। সরকার বলতে ব্যাপক অর্থ বোঝায়। কমিশনকে নানাভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। কেবল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করাই কিন্তু সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা নয়।

লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের সময়সীমা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধ বলা হয়েছে। এ সময়সীমা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা– প্রশ্নে সিইসি জানান, নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি। তিনি বলেন, নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ বিষয়ে আপনারা (সাংবাদিক) যেটুকু জানেন, আমরাও ততটুকুই জানি।

নাসির উদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চান। তিনি এ ব্যাপারে ইসির প্রস্তুতি জানতে চেয়েছিলেন। আমরা তাঁকে জানিয়েছি– ইসি জোরেশোরে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সেটি উদ্দেশ্যও ছিল না। নির্বাচনের সময় নির্ধারণ হলে সবাই জানতে পারবেন। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত।

সংসদ নাকি স্থানীয় সরকার– ইসি কোন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশনের প্রস্তুতি এ মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রস্তুতি নেই। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে ভোটার তালিকা কী ব্যবহার করতে পারব না? অন্যান্য বিষয় কী ব্যবহার করতে পারব না? স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে তো প্রধান উপদেষ্টা কিছু বলছেন না। তিনিও তো জাতীয় নির্বাচনের কথাই বলছেন, জাতিকেও ওয়াদা দিচ্ছেন।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের ফসল উল্লেখ করে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক বিতর্ক রাজনীতিকরা ফয়সালা করবেন। তবে কোনো রাজনৈতিক দলের কথায় নয়, ইসি নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন করবে। ইসির কর্মকাণ্ড দেখেই তার ওপর দলগুলো ও রাজনীতিকদের আস্থা ফিরে আসবে। এ মুহূর্তে অবশ্যই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিগত তিনটি নির্বাচনে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির মামলায় সাবেক দুই সিইসির গ্রেপ্তার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মন্তব্য করতে রাজি হননি নাসির উদ্দিন।

ভোটের অর্থ ছাড়ে কার্পণ্য করা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
গতকাল সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে সংসদ নির্বাচনে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে অর্থ ছাড় করতে কোনো কার্পণ্য করা হবে না।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশনের অনুকূলে গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বাড়িয়ে ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সূত্র জানায়, এর মধ্যে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন খাতে ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। তবে প্রয়োজন হলে এ খাতে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের অনুকূলে ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।

আরও পড়ুন

×