ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

বিরোধীদের ছেঁটে দিলেন জি এম কাদের

বিরোধীদের ছেঁটে দিলেন জি এম কাদের

.

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | ০১:১০

নেতৃত্ব নিয়ে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরোধে সপ্তমবারের মতো ভাঙনের মুখে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলীয় সম্মেলন নিয়ে মাসখানেকের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পর গতকাল সোমবার জাপার মহাসচিব পদ থেকে মুজিবুল হক চুন্নুকে সরিয়ে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে নিয়োগ দিয়েছেন চেয়ারম্যান। চুন্নুর মতো সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকেও সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
যদিও জি এম কাদেরের এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছেন আনিস, হাওলাদার ও চুন্নু। তারা বলেছেন, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর কাউকে পদ থেকে সরানোর এখতিয়ার চেয়ারম্যানের নেই। তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা মানা হবে না। আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরবেন তারা। 

নতুন মহাসচিব শামীম পাটোয়ারী বলেছেন, গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জি এম কাদের, যা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। 
আওয়ামী লীগ শাসনামলে সব বিষয়ে সরকারের সুরে কথা বলে গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পাওয়া জাপা শেখ হাসিনার পতনে ৫ আগস্টের পর চাপে পড়েছে। দলটিকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়েছে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্ব। জাপা কার্যালয়েও হামলা হয়েছে। ছাত্রনেতৃত্ব তাঁকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দেওয়ায় সরকারও কোথাও ডাকছে না দলটিকে। 
এ পরিস্থিতিতে গত মে মাসে জাপার প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২৮ জুন দলের কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। জুনের শুরুতে ব্যারিস্টার আনিস ঘোষণা দেন, তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবেন। রুহুল আমিন জানান, মহাসচিব প্রার্থী হবেন। 

কিন্তু ১৮ জুন জি এম কাদের জানান, প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচির কারণে ২৮ জুন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সম্মেলন হবে না। সম্মেলন স্থগিতের সিদ্ধান্তে আনিস ও হাওলাদাররা বিবৃতিতে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। ২৮ জুন সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। পাল্টা হিসেবে একই দিনে একই স্থানে সমাবেশ ডাকেন জি এম কাদের। শেষ পর্যন্ত কোনো পক্ষই কর্মসূচি গ্রহণ করেনি।
মুজিবুল হক চুন্নু সমকালকে বলেছেন, জি এম কাদের সারাক্ষণ গণতন্ত্রের কথা বলেন। যখন তাঁকে বললাম, ‘২০ ধারা সংস্কার করেন।’ তিনি রাজি হলেন না; বরং আমাকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দিলেন। তবে তাঁর এ সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক। 
১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর জাপার ৯ জন মহাসচিবের আটনজনই স্বাভাবিক নিয়মে বিদায় নিতে পারেননি। একই ধারা অব্যাহত রেখেছেন জি এম কাদের। মহাসচিব বদলের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। 

দুই পক্ষই আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ
ব্যারিস্টার আনিস ও মুজিবুল হক চুন্নু ২০০৬ সাল থেকেই জাপার আওয়ামীপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত। তাঁরা দু’জনেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার নির্বাচনে টানা চারবার এমপি হয়েছেন। ছিলেন শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য। জি এম কাদের ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে এমপি হন। ছিলেন বিরোধীদলীয় উপনেতা। ৭ জানুয়ারির ডামি ভোটখ্যাত নির্বাচনে অংশ নিয়ে হন বিরোধীদলীয় নেতা। 
জাপা সূত্র জানিয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনে জাপা চাপে পড়ায় পূর্ববর্তী ভূমিকার দায় এড়াতে নেতারা বিরোধে জড়িয়েছেন। ফ্যাসিবাদের দোসর তকমামুক্ত হতে জি এম কাদেরের পরিবর্তে জাপায় নতুন নেতৃত্ব আনার চেষ্টা করছেন। জি এম কাদেরপন্থিরা তা প্রতিরোধে একাট্টা হয়েছেন। দলের ৪১ সদস্যের প্রেসিডিয়ামের ২৬ জন সদস্য জি এম কাদেরকে সমর্থন করছেন। তবে বিরোধীরা বলছেন, ২০ ধারার বলে জি এম কাদের সবাইকে জিম্মি করে রেখেছেন। নির্বাচনে শুধু আসন নয়, আর্থিক ফায়দাও তুলেছেন। এ থেকে মুক্তি প্রয়োজন। 

আরও পড়ুন

×