ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

ইস্টার্ন রিফাইনারির জন্য আবার বিনিয়োগের খোঁজ

ইস্টার্ন রিফাইনারির জন্য আবার বিনিয়োগের খোঁজ

.

 হাসনাইন ইমতিয়াজ

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | ০১:১৮

দেশে জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগের বয়সই ১৫ বছর। ২০১০ সালে ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মাঝে একাধিক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছুদূর এগিয়ে আবার থেমে গেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। 
ইআরএল ইউনিট-২ বাস্তবায়নে ফের উদ্যোগ নিয়েছে বিপিসি। ইতোমধ্যে সংশোধিত ডিপিপির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, নতুন প্রস্তাবে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। 

বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান জানান, নতুন করে বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছে। প্রকল্পের জন্য ২ থেকে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হবে। বাকি টাকা বিপিসি নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে। 
জানা গেছে, বিপিসি এই প্রকল্পের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল আলাদা করে রেখেছে। এ ছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, চীনা ব্যাংকসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে চীনা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাচ্ছে না বিপিসি। কারণ, তাদের অর্থ নিলে ঠিকাদার ও যন্ত্রপাতিও চীন থেকে নিতে হবে। আর চীনের কাজ মানসম্মত হয় না বলে মনে করছে বিপিসি। 

সূত্র জানিয়েছে, এআইআইবির সঙ্গে আলোচনা এগিয়েছে। তবে তাদের ঋণের সুদ হতে পারে ৫ থেকে ৬ শতাংশ। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ইআরএল ইউনিট-২-এর জন্য বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছে। আমরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করতে চাই। 
২০১০ সালে প্রকল্পের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ সংশোধিত খসড়া ডিপিপিতে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, প্রকল্প শুরুর আগেই ব্যয় বেড়েছে তিন গুণ। তবে পরামর্শক, প্রস্তাবনা তৈরিসহ বিভিন্ন খাতে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। এর মাঝেই প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) একাধিকবার সংশোধন হয়ে ব্যয় হয়েছে তিন গুণ।
এদিকে ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাগর থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল আনার ৮ হাজার কোটি টাকার সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প পূর্ণ সক্ষমতায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

প্রকল্প ঝুলছে ১৫ বছর
দেশের জ্বালানি তেলের একমাত্র সরকারি শোধনাগার ইআরএল ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করা হয়। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত ইআরএলের পরিশোধন ক্ষমতা বছরে ১৫ লাখ টন ক্রুড অয়েল। দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ৯০-৯৫ লাখ টন। শোধন সক্ষমতা না থাকায় তেলের চাহিদার বেশির ভাগই আমদানি করা হয় পরিশোধিত অবস্থায়। ক্রুড অয়েল থেকে পরিশোধিত তেলের দাম বেশি। এতে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ জন্য ২০১০ সালে বছরে ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারির ২০০ একর জমির এক পাশের ৭০ একর জমিতে দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের কথা। প্রকল্পের জন্য বাড়তি জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। পরে সংশোধিত হয়ে প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের ফিড কন্ট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ পায় ফ্রান্সের টেকনিপ। প্রতাষ্ঠানটি  প্রকল্পের (ইআরএল-২) ডিজাইন সম্পন্ন করে। 
অন্যদিকে, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। এসব কাজে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয় ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে টেকনিপের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিও হয়। এর পর বিদেশি ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে সাড়া মেলেনি।

বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল এস আলমও
২০২৩ সালের শুরুতে যৌথভাবে ইআরএল-২ বাস্তবায়নের জন্য জ্বালানি বিভাগের কাছে প্রস্তাব পাঠায় এস আলম গ্রুপ। প্রস্তাব অনুসারে দ্বিতীয় ইউনিট হবে ৫০ লাখ টন পরিশোধন ক্ষমতার। 
এস আলম যৌথ কোম্পানিতে ৫১ শতাংশের মালিকানা চায়। বিপিসি তাদের মতামতে জানায়, যৌথ কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা ৬০ শতাংশ রাখা উচিত। পরে অংশীদারিত্বের বিষয়টি চূড়ান্ত না করে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সমঝোতা স্মারকের খসড়াটি ভেটিংয়ের জন্য ২০২৪ সালের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৫ আগস্ট সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার ২৯ আগস্ট এস আলমকে প্রকল্প থেকে বাদ দেয়। 

আরও পড়ুন

×