সত্যপ্রিয় মহাথের আর নেই

সত্যপ্রিয় মহাথের -ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক ও রামু (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ | ১১:০৯
সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার প্রাক্তন সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বৌদ্ধধর্মীয় গুরুপণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের আর নেই। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। বার্ধক্যজনিত জটিলতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন কক্সবাজারের রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের এই অধ্যক্ষ।
বাংলাদেশের বৌদ্ধদের তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু উপসংঘরাজ সত্যপ্রিয় মহাথেরর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শুক্রবার এক শোকবার্তায় রাষ্ট্র্রপতি সত্যপ্রিয়র বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও শোকবার্তা পাঠিয়েছেন।
শুক্রবার বিকেল ৩টায় সত্যপ্রিয় মহাথেরর মরদেহ রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারে পৌঁছায়। এ ময় শোকাহত হাজারো বৌদ্ধ নারী-পুরুষসহ সর্বস্তরের জনতা, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের প্রতিনিধি প্রবীণ এই বৌদ্ধ ভিক্ষুর প্রতি সম্মান জানান। সন্ধ্যা ৬টায় পুণ্যদান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রয়াত ভিক্ষুকে বিহারে প্রবেশ করানো হয়। বিহারে শয়নদান অনুষ্ঠানে পুণ্যদান করেন বিজয় রক্ষিত মহাথের, প্রিয়রত্ন থের, সারমিত্র মহাথের, সুনন্দপ্রিয় থের, করুণাশ্রী থের, প্রজ্ঞাবোধী থের, শীলপ্রিয় থের ও প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের সাধারণ সম্পাদক রাজু বড়ূয়া জানান, শুক্রবার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরর মরদেহ বিহারে রাখা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ মরদেহ পেটিকাবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হবে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।
সত্যপ্রিয় মহাথের ১৯৩০ সালের ১০ জুন কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হরকুমার বড়ূয়া ও মা প্রেমময়ী বড়ুয়া। তিন সন্তানের মধ্যে সত্যপ্রিয় সবার ছোট। তার পারিবারিক নাম বিধু ভূষণ বড়ুয়া। ১৯৫০ সালে তিনি প্রবজ্যায় দীক্ষিত হয়ে সত্যপ্রিয় নাম ধারণ করেন। পরের বছর ভিক্ষু দীক্ষিত হন। ১৯৫৪ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য মিয়ানমার পাড়ি জমান। সেখানে তিনি ১০ বছর লেখাপড়া, গ্রন্থ রচনা ও সাধনা করেন।
মিয়ানমার থেকে ১৯৬৪ সালে দেশে ফিরে তিনি রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারে পাঠদানে যোগ দেন। মৃত্যুর আগে তিনি ওই বিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রামু বিহারে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাইকে আশ্রয় দিয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন সত্যপ্রিয়। ২০০৬ সালে বাংলাদেশি বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘের সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংগঠন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতির পদ লাভ করেন তিনি। একুশে পদক ছাড়াও ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ তাকে শান্তি পুরস্কার ও ২০০৩ সালে মিয়ানমার থেকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হন।
- বিষয় :
- সত্যপ্রিয় মহাথের
- সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা