ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

চার্জশিটে মূল আসামিদের অন্তর্ভুক্তসহ আট দফা দাবি সাঁওতালদের

চার্জশিটে মূল আসামিদের অন্তর্ভুক্তসহ আট দফা দাবি সাঁওতালদের

সাঁওতালপল্লীতে আগুনের ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ | ০৯:৪৯ | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ | ০৯:৫৬

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের গুলিতে তিন সাঁওতাল নিহতের বিচার হয়নি তিন বছরেও। সাঁওতালরা ফিরে পাননি বাপ-দাদার ভিটে। ঘটনার আড়াই বছরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে, সেটিকে 'পক্ষপাতমূলক' দাবি করে প্রত্যাখ্যান করেন মামলার বাদী। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সাঁওতাল নেতারা। এ সময় তারা আট দফা দাবি তুলে ধরেন।

ওই ঘটনার দ্রুত বিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, এএলআরডি এবং কাপেং ফাউন্ডেশন।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের জমিতে বসতি গড়ে তোলা সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়। ঘটনার আড়াই বছর পর চলতি বছরের জুলাইয়ে ৯০ জনকে আসামি করে মামলার চার্জশিট দেয় পিবিআই। সাঁওতাল নেতাদের অভিযোগ- চার্জশিট থেকে প্রধান আসামি, পুলিশসহ ঘটনার মূল হোতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তারা বলেন, বারবার আশ্বাস সত্ত্বেও তাদের নিজেদের মাটিতে ফেরত যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। উল্টো সাঁওতালরা আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসনের কারণে তারা নানা রকম হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন।

মামলার বিষয়ে সাঁওতাল নেতারা বলেন, দীর্ঘ তদন্ত শেষে চার্জশিট থেকে মূল আসামিদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় যারা মূল হোতা তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হয়নি। প্রশাসনের কয়েকজন প্রত্যক্ষভাবে সেই ঘটনায় জড়িত থাকলেও তাদের কারও নাম চার্জশিটে নেই। এ কারণে ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইর দেওয়া চার্জশিট বাতিল এবং সাবেক স্থানীয় সাংসদ আবুল কালাম আজাদসহ ঘটনার মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনাসহ আটটি দাবি তুলে ধরেন সাঁওতাল নেতারা। তারা বলেন, ওই ঘটনায় স্থানীয় বাঙালি এবং সাঁওতালদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। উচ্ছেদের শিকার পরিবারগুলোকে নিজেদের ভিটেতে পুনর্বাসন, স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ আবাসনের যাবতীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

মামলার বাদী থমাস হেমব্রম বলেন, সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদসহ ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছিল। অজ্ঞাত আসামি ছিল ৫০০-৬০০ জন। তদন্তেই প্রশাসনের লেগেছে আড়াই বছর। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষেও তারা যে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে, সেটি সম্পূর্ণ পক্ষপাতমূলক। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১১ আসামিকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পুনঃতদন্তের দাবিতে আদালতে আরজি জানিয়েছি।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, সাঁওতালরা এখনও এলাকায় স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারছেন না। সারাক্ষণ পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হয়। অভিযোগপত্রে মূল আসামিদের বাদ দেওয়ায় তারা সাধারণ সাঁওতালদের নানারকম ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, যাদের নির্দেশে গুলি হয়, হামলা-নির্যাতন হয়, তাদের মামলা থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনাটি বিস্ময়কর।

সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান বলেন, সাঁওতাল ও বাঙালি মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি পরিবার উচ্ছেদের শিকার হয়েছিল। তাদের মধ্যে কয়েকটি পরিবার নিকটস্থ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে অধিকাংশই উদ্বাস্তুর মতো ছাউনি বা তাঁবুর নিচে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আখ কাটাকে কেন্দ্র করে রংপুর চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও পুলিশের সঙ্গে আদিবাসী সাঁওতালদের কয়েক দফা সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে তিন সাঁওতাল নিহত হন। সাঁওতালপল্লিতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়।

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যা দিবস পালিত: গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, সাঁওতাল হত্যা দিবস উপলক্ষে বুধবার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর মধ্যে ছিল অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্যদান, মোমবাতি প্রজ্বালন, শোকসভা ও শোকর‌্যালি। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ ও জনউদ্যোগের আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়। 

সকাল ১১টায় উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের মাদারপুর গির্জার সামনে শোকসভায় বক্তব্য দেন সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কে, বাংলাদেশ কৃষক ও গ্রামীণ মজুর ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রংপুর বদরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি ডা. শ্যামল মার্ডি, সিপিবি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুফল হেমব্রম, কোষাধ্যক্ষ প্রিসিলা মুরমু, সদস্য ভবেন মার্ডি প্রমুখ।

আরও পড়ুন

×