বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর: ক্ষোভ প্রতিবাদ অব্যাহত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে সোমবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ঢাবি শিক্ষক সমিতি- সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ | ১০:৪০
কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। সোমবারও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
দেশজুড়ে এসব প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা এবং ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী ও তাদের ইন্ধনদাতাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। পৃথক বিবৃতিতে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারাও একই দাবি জানান।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুুরের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে সোমবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, সৃজনশীল শিল্প প্রকাশের মাধ্যম হলো ভাস্কর্য। ভাস্কর্যবিদ্যা বাধাগ্রস্ত হলে মানবিকতাও বাধাগ্রস্ত হয়। সভ্যতাবিরোধী এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক রহমত উল্লাহ, সিনেট সদস্য ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ, টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁঁইয়া প্রমুখ।
রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-চিকিৎসক (প্রকৃচি) সংগঠনের মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত হানা মানে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চরমভাবে অপমান করা। কোনোভাবেই জঙ্গি-মৌলবাদীদের এ ধরনের কার্যকলাপ বরদাশত করা হবে না।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ূয়া, প্রকৃচির সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সহসভাপতি প্রকৌশলী নুরুজ্জামান, প্রকৌশলী মনজুর মোর্শেদ, প্রকৌশলী মনজুরুল হক মনজু, সম্মানী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শাহাদাৎ হোসেন শিবলু, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (কেআইবি) যুগ্ম মহাসচিব কৃষিবিদ মুকসুদ আলম খান মুকুট ও দপ্তর সম্পাদক কৃষিবিদ এস এম মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন জেলার নেতারা। সঞ্চালনা করেন বিএমএর দপ্তর সম্পাদক ডা. শেখ শহীদ উল্লাহ।
জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগ রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সুরাইয়া আক্তারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রহিমা আক্তার সাথী, কার্যকরী সভাপতি শামসুন নাহার এমপি প্রমুখ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য শব্দ। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত করে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীরা বাঙালির হূৎপিণ্ডে আঘাত হেনেছে, যা ক্ষমার অযোগ্য। শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদেরই নয়, এ ঘটনার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সাংবাদিক ওবায়দুল হক খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সুভাষ চন্দ্র বাদল, মাইনুল আলম, রহমান মুস্তাফিজ, এম এ কুদ্দুস, অমরেশ রায়, মানিক লাল ঘোষ, হেমায়েত হোসেন, আবু সাইদ, আছাদুজ্জামান, জাহাঙ্গীর খান বাবু, সমীরন রায় প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে নাট্য ও চলচ্চিত্র শিল্পীদের মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের উপদেষ্টা চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি শাকিল খান, সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিন জাহান, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম, সাংবাদিক সমীরন রায়, অভিনেত্রী দীপাবলী দীপা, নুর মোহাম্মদ, কণ্ঠশিল্পী এইচ এম ইকবাল হাসান হৃদয়, রোকন উদ্দিন পাঠান প্রমুখ।
বিবৃতিতে বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা-প্রতিবাদ: বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। এতে বলা হয়, রাতের আঁধারে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার এই ঘটনা দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা মাত্র। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এ অপচেষ্টা রুখে দিতে বদ্ধপরিকর। বিবৃতিতে সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্নিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়।
একাত্তরের ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াতিদের কূটকৌশলে ও হেফাজতে ইসলামের লেবাসে দুর্বৃত্তরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলা ও বাঙালিকে অপমান করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। এই দেশের শত্রুদের সমূলে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লাখো শহীদের রক্তস্নাত বাংলার জমিনে এই নব্য রাজাকারদের ঠাঁই হবে না। পাকিস্তানি প্রেতাত্মা-অপশক্তির বিরুদ্ধে গোটা দেশকে এক হয়ে লড়তে হবে।
বিবৃতিতে সই করেছেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমেনা আহমেদ, সিপিবির উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টের সভাপতি শেখর দত্ত, সম্পাদক মুহম্মদ হিলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কার্যকরী সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর কমান্ডার মাহবুব জামান এবং সমন্বয়ক কামরুজ্জামান ননী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নূরে আলম আব্দুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শামীমা বেগম পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে ষড়যন্ত্রকারী রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের দোসরদের ঠাঁই নেই। মৌলবাদী অপশক্তির সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সোনার বাংলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।