ভরসা যখন ৯৯৯

ইন্দ্রজিৎ সরকার
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ | ১৫:০৩
পরিবারের সঙ্গে রাঙামাটির সাজেক ভ্যালিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন গৃহবধূ রোকসানা আক্তার লাকী। সেখানে রুইলুইপাড়া থেকে আড়াই ঘণ্টার পথ হেঁটে তিনি একটি ঝরনা দেখতে যান। পাহাড়ের ঢালু পথ বেয়ে নামার সময় তার পা ফসকে যায়। কোনো রকমে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও তার পা ভেঙে যায়। ওই অবস্থায় তার পক্ষে হেঁটে ফেরা সম্ভব ছিল না। বিপদগ্রস্ত অবস্থায় তার পরিবারের সদস্যরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। তাৎক্ষণিক তাদের সঙ্গে রুইলুই পুলিশ ক্যাম্প ও খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ করিয়ে দেয় ৯৯৯। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল স্থানীয় জনগণের সহায়তা নিয়ে বাঁশের মাচা তৈরি করে লাকীকে উদ্ধার করেন। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। গত ১ ডিসেম্বর সকালে ঘটে এ ঘটনা। প্রতিদিন এমন অনেক ঘটনার মুখোমুখি হন ৯৯৯-এর কর্মীরা। তাদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন বিপদগ্রস্ত মানুষ।
সম্প্রতি তিন বছর পূর্ণ করেছে ৯৯৯। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর থেকে চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২ কোটি ৬১ লাখ ৭২ হাজার ৮৪৪টি কল পেয়েছেন তারা। তবে সব কলই সত্যিকারের প্রয়োজনে করা হয়নি। ভুল করে, না বুঝে, মজা বা বিরক্ত করার উদ্দেশ্যেও কিছু কল আসে। সেই হিসাবে প্রয়োজনীয় সেবা পেয়েছেন ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৩ জন কলার। এর হার মোট কলের মাত্র ২১ শতাংশ। বাকি ৭৯ শতাংশ বা ২ কোটি ৬ লাখ ৯০১টি কল ছিল অপ্রয়োজনীয়।
৯৯৯-এর দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ সমকালকে বলেন, তিন বছরে অনেক বেশি ভরসার জায়গায় পৌঁছেছে ৯৯৯। মানুষ কোনো সমস্যায় পড়লে বিপদের বন্ধু হিসেবে এই জরুরি সেবাকে বেছে নেয়। সম্প্রতি কক্সবাজারের পাহাড়ে পথ হারান চার তরুণ। তারা ৯৯৯-এ কল করে সাহায্য চেয়েছিলেন। এর পর বিমানবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের উদ্ধারের অনুরোধ জানানো হয়। পরে বিমানবাহিনী সাফল্যের সঙ্গে তাদের উদ্ধার করে আনে। ৯৯৯ এখন বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। ফলে সেবার পরিধি বেড়েছে।
৯৯৯ সূত্র জানায়, প্রতিদিনই তাদের কাছে প্রচুর কল আসে। এর মধ্যে তুচ্ছ বিষয় যেমন থাকে, তেমনি মারাত্মক বিপদের অনেক ঘটনাও থাকে। সব ক্ষেত্রেই কলারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যেমন গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া ফ্লাইওভারের নিচের এলাকা থেকে ফোন করেন এক ব্যক্তি। তিনি জানান, রাস্তার পাশে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। প্রসূতির প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ঠান্ডার মধ্যে নবজাতক ও প্রসূতি উভয়েই খোলা আকাশের নিচে। এর মধ্যে কয়েকজন পথচারী সেখানে জড়ো হয়েছেন; তারা কে নবজাতককে নিয়ে যাবেন তা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত। কিন্তু কেউ চিকিৎসার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ৯৯৯ থেকে তখনই ওই ব্যক্তিকে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। রূপগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায় এবং মা-সন্তানকে উদ্ধার করে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, ৯৯৯ বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত একটি কল সেন্টার। এখানে ১০০টি ওয়ার্ক স্টেশন রয়েছে। কর্তব্যরতরা প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ ১২০টি কল গ্রহণ করতে পারেন। ২৪ ঘণ্টাই এটি খোলা থাকে। এর মধ্যে বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কল আসে। আর রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কল আসে সবচেয়ে কম। পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস সংক্রান্ত সেবা ছাড়াও নানা তথ্য জানতে বা অন্যান্য প্রয়োজনেও লোকজন কল করেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জরুরি প্রয়োজনে কল (কল ফর সার্ভিস বা সিএফএস) করেছেন ৪ লাখ ২০ হাজার ১৬ জন। এর মধ্যে পুলিশ সম্পর্কিত সহায়তার কল ৭৭ শতাংশ, ফায়ার সার্ভিস সম্পর্কিত কল ১২ শতাংশ ও অ্যাম্বুলেন্স সম্পর্কিত কল ছিল ১১ শতাংশ। এ ছাড়া বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়ে ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯৬ জন পুরুষ, ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯২৭ জন নারী ও ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮৬২ জন শিশু কল করেছেন। পুলিশের ডিপার্টমেন্টাল কলের সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজার ৬৪২।