স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকায় বিব্রত ইসি, তিন পৌরসভার ফল স্থগিত

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১০:৫০
চলমান পৌরসভার ভোটে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকায় বিব্রত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মাদারীপুরের কালকিনি ও শিবচর পৌরসভায় পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ ওঠায় সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।
এদিকে, অনিয়মের অভিযোগে ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর, ঝালকাঠির নলছিটি ও সাতক্ষীরার কলারোয়ার বেসরকারি ফল স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, গত তিন ধাপে পৌরভোটে সংঘাত, সহিংসতা ও অনিয়মের ঘটনায় বিব্রত ইসি। মাদারীপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক একজন প্রার্থীকে ঢাকায় উঠিয়ে আনা এবং সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যানকে ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের শিথিলতার কারণে নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
সোমবার নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, তৃতীয় ধাপে কয়েকটি পৌরসভা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার সামান্য বিঘ্ন ঘটেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর দেখে সংশ্নিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেন বিঘ্ন ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে, কেন ভঙ্গ হলো, কারা দায়ী- এ বিষয়গুলোর ওপর তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর যদি দেখা যায় অপরাধ ঘটেছে, তাহলে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হবে। দরকার হলে ফৌজদারি বা নির্বাচনী আইনে মামলা করা হবে। ইসির পক্ষ থেকে একটা বার্তা দেওয়া প্রয়োজন বলেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক চাপে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পক্ষে সঠিক প্রতিবেদন না আসার সম্ভাবনাই বেশি। অনিয়মের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরও সংশ্নিষ্টতা রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক : ভোটে অনিয়ম ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক শুরু করেছে ইসি। সোমবার কমিশনার কবিতা খানম, ইসি সচিব খোন্দকার হুমায়ুন কবির রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন।
এর ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিকেল ৩টায় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আগামী বুধবার দুপুর ১২টায় ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করবেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
এবার পাঁচ ধাপে পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪টি, ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি, ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে ৬২টি পৌরসভায় ভোট হয়। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৫৬টি ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ৩১টি পৌরসভার ভোট গ্রহণ হবে।
সাত ডিসির বদলি আদেশ স্থগিত চেয়ে চিঠি : পৌর নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাত ডিসির বদলির আদেশ স্থগিত রাখার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ইসি। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, ফল ঘোষণার পর ১৫ দিন পর্যন্ত ইসির পরামর্শ ছাড়া সংশ্লিষ্টদের বদলি না করার বিধান রয়েছে।
গত ২৮ জানুয়ারি ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, ঝিনাইদহ, জামালপুর ও ভোলায় ডিসি পদে রদবদলের আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে জামালপুরের ডিসিকে ময়মনসিংহে এবং হবিগঞ্জের ডিসিকে কুষ্টিয়ায় বদলি করা হয়। অন্য সাত জেলায় নতুন কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।