ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বই প্রকাশের জন্য যারা হত্যা করে, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু: আদালত

বই প্রকাশের জন্য যারা হত্যা করে, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু: আদালত

প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা মামলার রায় ঘোষণার জন্য বুধবার আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়- ফোকাস বাংলা

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ০৭:৩১

লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের হত্যার অংশ হিসেবে অভিজিত রায়ের বই প্রকাশের জন্য জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয়। এখানে আসামিদের কারো ভূমিকা ছোট-বড় করে দেখার সুযোগ নেই। যারা বই প্রকাশের দায়ে মানুষ হত্যা করতে পারে, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু। ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যায় অংশগ্রহণকারীরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহী হবে।

জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যার মামলার ৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষণে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবর রহমান বুধবার এসব কথা বলেন। রায়ে মামলার আট আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসাল আল ইসলাম বা আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের সদস্যদের তথা অত্র মামলার আসামিদের লক্ষ্য ছিল জিহাদের নামে ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের হত্যা করে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া এবং মানুষের মনে আতংক তৈরি করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা। আর এসবের উদ্দেশ্য হলো মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ করে দেওয়া এবয় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও অসম্প্রদায়িক চরিত্র ধ্বংস করে দেওয়া।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, যেহেতু অভিযুক্ত আসামিরা আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে সাংগঠনিকভাবে ফয়সাল আরেফীন দীপনকে হত্যায় অংশ গ্রহণ করেছে, সেজন্য তাদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বাঞ্চণীয়। আসামিরা কোনো সহানুভুতি পেতে পারে না। আসামিদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে সমাজে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে এবং এটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। এতে একদিন নিহতের পরিবার ও আত্মীয়রা মানসিক শাস্তি পাবে এবং অন্যদিকে ভবিষ্যতে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে অন্যরা ভয় পাবে এবং নিরুৎসাহিত হবে।

দীপন হত্যার কারণ সম্পর্কে রায়ে বলা হয়, লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের হত্যার অংশ হিসেবে অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশের জন্য জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক দীপনকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হলেন চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। তার মূল কাজ ছিল জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মূল হত্যাকারীদের অর্থায়ন করা। আর দীপন হত্যার পরিকল্পনা করেন আসামি আকরাম হোসেন।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আসামি মইনুল হাসান শামিম অস্ত্র সংগ্রহ করেন। আসামি মোজাম্মেল হোসেন দীপন হত্যার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করে ঘটনাস্থল রেকি করে আসেন। হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসামি শেখ আবদুল্লাহ। এই আসামিদের অভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল ব্লগার, প্রকাশক ও সমকামীদের হত্যার অংশ হিসেবে ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা।
আনসার আল ইসলামের সদস্যরা সাভারে ব্লগার রিয়াদ মোর্শেদ বাবুকে হত্যা করে। একই দিনে শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন এবং লালমাটিয়ায় শুদ্ধাস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল, লেখক রণদীপম বসু ও প্রকৌশলী আবদুর রহমানকে হত্যার চেষ্টা চালায়।

পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেন, সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলাম অর্থাৎ আনসারউল্লা বাংলাটিমের সদস্যরা রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, সংহতি বিনষ্ট করতে এবং দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয় তারা আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দেশের গণতন্ত্র ও সংহতিকে বিপন্ন করতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।

২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ এলাকার আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে ফয়সল আরেফিন দীপনকে ঘাড়ের পেছনে আঘাত করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা অফিসের দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। দীপনকে হত্যার পর ওই দিনই তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান শাহবাগ থানায় মামলা করেন।


আরও পড়ুন

×