সিস্টেম জটিলতায় চার মাস ভাতাবঞ্চিত ৫২৯৭ মুক্তিযোদ্ধা

আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ১০ মে ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ মে ২০২১ | ১৬:৩৮
ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতি অর্থাৎ জিটুপির (গভর্নমেন্ট টু পারসন) আওতায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদানের সুফল পাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এর আওতায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। সবশেষ গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এমআইএসে (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) তালিকাভুক্ত ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩ ব্যক্তিকে তাদের নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও ঈদ উৎসব ভাতা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক হিসাবসহ নানা জটিলতায় গত চার মাস ধরে এসব ভাতা পাননি ৫ হাজার ২৯৭ জন।
মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন একটি সিস্টেম (জিটুপি) ডেভেলপ করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদান শুরু হয়েছে। যেসব ত্রুটি শনাক্ত হচ্ছে বা হয়েছে তা নিরসনে মন্ত্রণালয় সচেষ্ট। প্রতি মাসেই জিটুপির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংবলিত এমআইএসে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৮২ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে মারা গেছেন তাদের সেই ভাতা ভাগ করে উত্তরাধিকারদের পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে জিটুপির আওতায় ভাতা প্রদান করা হচ্ছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩ জনকে। কিন্তু তাদের মধ্যে ৫ হাজার ২৯৭ জনের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের ভাতা বাবদ ছয় কোটি ৪৭ হাজার ২০০ টাকা ফেরত এসেছে। ব্যাংক আকাউন্ট নম্বর, অ্যাকাউন্টধারী ব্যক্তির নাম বা অন্যান্য তথ্যের ঘাটতি, ব্যাংকের নাম ও ব্র্যাঞ্চের নামের ভুল বা তথ্যের ঘাটতিসহ নানা কারণে এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে। তেমনই একটি ঘটনায় গত ফেব্রুয়ারিতে ভাতা পাওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ২১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সোনালী ব্যাংক সখীপুর ব্র্যাঞ্চের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এমআইএসে তাদের ভাতা প্রদানের ব্যাংক হিসাবে ব্র্যাঞ্চের নাম সখীপুরের স্থলে ঘাটাইল লেখা হয়েছে। যে কারণে টাকা মন্ত্রণালয়ে ফেরত আসে। তবে ওই সমস্যা ইতোমধ্যে সমাধান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সখীপুর উপজেলার বহুরিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়েজ উদ্দিন। অবশ্য তার সমস্যার সমাধান হলেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, নানা জটিলতায় ঈদের আগে ৫ হাজার ২৯৭ জন এবার ভাতা পাচ্ছেন না।
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, আমরা জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতা দেওয়া শুরু করেছি। প্রথমিক অবস্থায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। সেটা আমাদের দিকে হতে পারে। আবার ব্যাংক বা মুক্তিযোদ্ধার দিকেও হতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানে উপজেলা থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা যাদের নাম এমআইএসে আছে তারা সবাই ভাতা পাবেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই পাইলট প্রকল্পের (পরীক্ষামূলক) আওতায় প্রথম পর্যায়ে মহেশখালীর ৩৪৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে জিটুপির মাধ্যমে তাদের সম্মানী ভাতাসহ অন্যান্য টাকা দেওয়া শুরু হয়। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হওয়ায় পর চলতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের সব মুক্তিযোদ্ধার ভাতা জিটুপি পদ্ধতিতে প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। দেশে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৩৮৭ জন গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা থাকলেও বর্তমানে চূড়ান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। এ জন্য প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার নথিপত্র এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আবেদনকারীদের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এর আওতায় গত ২৫ মার্চ এবং ৯ মে দুই ধাপে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। অবশ্য গেজেটভুক্তদের মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় থাকা বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান এখনও অব্যাহত রাখা হয়েছে। যার ফলে এমআইএসে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তার উত্তরাধিকার ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩ জনকে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও শহীদ, যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত ১২ হাজার ৬৭৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা দেওয়া হয়। তারা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে শ্রেণিভেদে ১৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাতা পান। ভাতার পাশাপাশি সব ধরনের মুক্তিযোদ্ধা পাঁচটি উৎসব ভাতা, চিকিৎসাসহ সন্তানদের জন্য নির্ধারিত অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন।