ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ভেষজ গুণের কারিপাতা

ভেষজ গুণের কারিপাতা

গাজীপুরের শালবনে পাওয়া কারিপাতা -লেখক

মোকারম হোসেন

প্রকাশ: ২০ মে ২০২১ | ২১:২৮

কারিপাতার সঙ্গে পরিচয় অনেক আগেই। নগর উদ্যানে বিক্ষিপ্তভাবে গাছটি চোখে পড়ে। কিন্তু এই গাছ যে দেশেই প্রাকৃতিকভাবে জন্মে, সেটি নিশ্চিত হলাম কয়েক দিন আগে। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় শালবনে বেশ কয়েকটি গাছ দেখে বুঝতে পারি, গাছটি শালবনেরও আত্মজ। 

প্রাকৃতিক আবাসে গাছটি টিকে থাকা মহাআনন্দের খবর। তবে দেখা গাছগুলো বয়সে নবীন। গাজীপুরের অবশিষ্ট শালবন অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা নানাভাবে দেখা হয়েছে। প্রতিটি ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে বনের যে পরিবর্তন সূচিত হয়, তার আবহটুকু অনুভব করতে অজস্রবার শালবনে ঘুরে বেড়িয়েছি। প্রতিবারই পেয়েছি নতুন কিছু। কারিপাতাও তেমনি একটি উদ্ভিদ। নিজস্ব আবাসে যাকে প্রথমবার দেখার সুযোগ হলো।

আমরা অনেকেই গাছটির পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানলেও এখানে খুব একটা প্রচলন নেই। দক্ষিণ ভারতে গিয়ে সেখানকার খাবারে কারিপাতার সর্বোচ্চ ব্যবহার লক্ষ্য করেছি। দক্ষিণ ভারতীয়দের খাবারের প্রধান অনুষঙ্গ এই পাতা। প্রথম কয়েক দিন খাবারের স্বাদটা একটু ভিন্ন মনে হলেও পরে তা সহনীয় হয়ে আসে। সেখানে ভাত, তরকারি, পোলাও, মাংস সবকিছুতেই অনিবার্য কারিপাতা। 

মূলত কারি বা ঝোল তরকারি রান্নার জন্য এ গাছের পাতা ব্যবহার করা হয় বলে ইংরেজি নাম কারি লিফ, বাংলায় কারিপাতা। অবশ্য স্থানীয় আরও কিছু নাম আছে- নিমভূত, বারসাঙ্গা ইত্যাদি। তামিল ভাষায় বলে কারিভেম্পু, তেলেগুতে কারেপাকু। হিন্দি ভাষায় প্রচলিত নাম কাঠনিম, মিঠানিম, কারিপাত্তা ইত্যাদি।

কারিপাতা (Murraya koenigii) কামিনী গোত্রের উদ্ভিদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক হাজার ৫০০ মিটার উঁচুতেও কারিপাতা গাছ জন্মাতে পারে। মাঝারি উচ্চতার এই গাছ পাঁচ থেকে ছয় মিটার উঁচু হতে পারে। পাতা দেখতে অনেকটা নিমপাতার মতো। পাতায় সালফারজনিত এক ধরনের উদ্বায়ী তেল থাকায় সুন্দর ঝাঁজাল গন্ধ পাওয়া যায়। কাঁচা পাতা ঘষলে গোলমরিচ, লবঙ্গ, মরিচ, আদা ইত্যাদি মসলার মিশ্রিত ঘ্রাণ পাওয়া যায়। মূলত এই সুগন্ধির জন্যই রান্নায় মসলাপাতা হিসেবে এর ব্যবহার। 

পাতা পক্ষল ও যৌগিক, ডালের মাথা থেকে চারদিকে সূর্যের রশ্মির মতো ছড়িয়ে থাকে। প্রতিটি পাতায় অনুপত্রকের সংখ্যা ৯ থেকে ১৫টি। অনুপত্রকের কিনারা খাঁজকাটা ও অগ্রভাগ সুচালো। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ডালের মাথায় পুষ্পমঞ্জরিতে সাদা রঙের সুগন্ধি ফুল ফোটে। ফুল শেষে ডিম্বাকৃতির ফল আসে। দেখতে অনেকটা নিমফলের মতোই। পরিপক্ক ফলের রং লালচে বা কালো।

গাছটির পাতা, গাছ, শিকড়- সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। শিকড় অর্শ্ব রোগে উপকারী। পাতা আমাশয় ও ডায়রিয়া সারাতে কার্যকর। কয়েকটি সবুজ পাতা চিবিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। পাতা সেঁকে বা ক্কাথ তৈরি করে খেলে বমি ভাব দূর হয়। রেচনতন্ত্রের ব্যথা দূর করতে পাতার রস সেবন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। 

বিষাক্ত পোকার কামড়ে কাঁচা পাতা ঘষে সেখানে লাগালে দ্রুত উপশম হয়। যকৃতের ব্যথা সারাতে রোগীদের গাছটির শিকড়ের রস খাওয়ানো হয়। বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায়, তার গন্ধ অনেকটা নারকেল তেলের মতো আর স্বাদ মরিচের মতো ঝাঁজাল।

আরও পড়ুন

×