ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

হাইকোর্টের নির্দেশনা

‘গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে’

‘গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে’

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২১ | ০৭:৩৪ | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২১ | ০৯:৩৩

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। তাই ছয় মাসের মধ্যে মামলা শেষ করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ মামলা থেকে অব্যহতি চেয়ে দুই আসামির করা আবেদন খারিজ করে ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট এ রায় দেন।


রায় ঘোষনার প্রায় তিন বছর পর পুর্ণাঙ্গ কপিতে স্বাক্ষর করেন দুই বিচারপতি। এরপর গতকাল বুধবার ৯৮ পৃষ্ঠার পুর্ণাঙ্গ এ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।   
আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, গ্যাটকো কাজ বেআইনীভাবে পাইয়ে দিতে খালেদা জিয়ার কাছে সুপারিশ করেছিলেন তার ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।  
২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চারদলীয় জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়।


মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে (গ্লোবাল অ্যাগ্রোট্টেড প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড) ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছে। মামলার ২৪ আসামির মধ্যে অন্যতম আসামি সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আ¦ন্ধুল মান্নান ভুইয়া, আরাফাত রহমান কোকোসহ ছয়জন ইতিমধ্যে মারা গেছেন।  
গত ১৪ বছরে মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয়নি। বিভিন্ন সময়ে আসামিরা এ মামলাটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্ট আবেদন করেন। ২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদা জিয়া ও সাবেক ছয় মন্ত্রীসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়। এর আগে-পরে চার্জশিটভুক্ত আসামি খালেদা জিয়াসহ আসামিদের কয়েকজন ওই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। সর্বশেষ দুই আসামী গ্যাটকোর পরিচালক সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৮ সালে জারি করা রুল খারিজ করে দেন।  


রায়ের পর্যবেক্ষনে বলা হয়েছে, অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আর এতে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিলেন তার ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো। আদালত তার পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, এ মামলা খালেদা জিয়াসহ বাকিদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। গ্যাটকোকে কাজ পাইয়ে দিতে কোকোর কাছে তদবির করে সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন। পাশাপাশি রায়ের কপি পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতকে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।


এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান সমকালকে বলেন, দুই আসামির কোয়াশমেন্ট পিটিশনের রুল খারিজ করে দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, কীভাবে কোকো তার মাকে (খালেদা জিয়া) ম্যানেজ করে কাজ পাইয়ে দিয়েছিল। সেখানে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটা রায়ে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি বলেন, বিচারিক আদালতে এ মামলাটি চার্জ গঠনের ওপর শুনানির জন্য রয়েছে। করোনার কারণে এখন আদালতের কার্যত্রক্রম বল্পব্দ আছে। স্বাভাবিকভাবে আদালতের কার্যত্রক্রম শুরু হলে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে তারা যথাসময়ে নিষ্পত্তি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।


এ মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন সমকালকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কোনো অপরাধ করেননি। মন্ত্রীসভার নীতিগত সিদ্ধান্তের পরে রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শুধু অনুমোদন করে থাকেন। তিন বছর পর রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করায় হতাশা প্রকাশ করে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, এ মামলার ন্যায় বিচার নিয়ে তারা শংকিত।

আরও পড়ুন

×