ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

ভবনে জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার করতে হবে: জ্বালানি উপদেষ্টা

ভবনে জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার করতে হবে: জ্বালানি উপদেষ্টা

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ০৮:৩১ | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ০৮:৩১

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেছেন, ভবনে জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য পাইলটিং করার বিষয়টি খুব জরুরি। পাবলিক ভবনে এটা কিভাবে সাফল্য আনতে পারে তা যাচাই করার জন্য স্রেডাকে একটি প্রকল্প গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

রোববার এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার আয়োজিত 'এনার্জি এফিসিয়েন্সি ইন পাবলিক বিল্ডিংস' শীর্ষক ভার্চুয়াল ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্রেডা ও জিআইজেড এর সহায়তায় 'ইপি টকস' মোল্লাহ আমজাদ হোসেন সঞ্চালনা করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব এবং সাসটেনেবল অ্যান্ড রিনিয়েবল এনার্জি ডেভলপমেন্ট অথরিটির (স্রেডা) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল্লাহিল আজম। আলোচ্য বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্রেডার সদস্য (এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন) ফারজানা মমতাজ। প্যানেলিস্ট হিসাবে কথা বলেন, বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. জহরুল হক এবং গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল হক।

ড. তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী বলেন, এনার্জি এফিশিয়েন্সি নিয়ে কারিগরি বিষয়ে সমাধান ধাপে ধাপে করতে হবে। যেমন ২০১০ সালে আমাদের উদ্যোগে সারাদেশে প্রায় দেড় কোটি সিএফএল বাল্ব বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছিল। আসলে সচেতনতা তৈরি করতেই এমন উদ্যোগ। যদিও বাল্বের মান নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছিল। তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর উদাহরণ অনুসরণ করে ঘর থেকে বের হওয়ার আগে নিজ হাতে এসি লাইটের সুইচ বন্ধ করি।

তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত আছে এসির তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি রাখার। এক্ষেত্রে আমরা মোটেই সচেতন না। অনেক সময় আমরা ঘরে কেউ না থাকলেও এসি, লাইট জ্বালিয়ে রাখি। সরকারি ভবনেই এমনটা বেশি দেখা যায়। আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। এসির ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত মানলে আর বের হওয়ার সময় সুইচ বন্ধ করলে এমনিতেই বিদ্যুৎ খরচ কমে যাবে। ব্যক্তিগত অভ্যাস দিয়ে ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, ভবনকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করতে হয়তো ২০-২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হতে পারে। কোনো ক্ষেত্রে এটা ১০০ বা ২০০ কোটি টাকা হতে পারে। তবে এ পরিমাণ টাকা আসলে কিছু না। সরকার এক্ষেত্রে পুরো দায়িত্ব নেবে। গণপূর্তকে এর দায়িত্ব নিতে হবে না। অন্য কোনো খাত থেকে এ ব্যয় নির্বাহ করা হবে। একটা পাইলট প্রজেক্ট করা যেতে পারে। সরকার এর ব্যয় পুরোটা বহন করবে। এ ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সুইচ বন্ধ হয়ে যায় এমন প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে। এসির তাপমাত্রা যেন ২৮ ডিগ্রির কম না করা যায় এমন স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

ড. তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী জানান, সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ভবন তৈরিতে পূর্ণ সহায়তা করবে। টাকা তেমন কোনো সমস্যা হবে না। সেইসঙ্গে বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। তারাও যেন এমন ভবন তৈরিতে এগিয়ে আসে। সেখানেও সরকারি সবরকমের সহযোগিতা থাকবে।

মূল প্রবন্ধে ফারজানা মমতাজ বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ভবন নিয়ে স্রেডা একটা নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করেছে। সরকার ২০২১ সালে ১৫% আর ২০৩০ সালের মধ্যে ২০% বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করেছে। শুধুমাত্র আবাসিক খাত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করা গেলে প্রায় ২৯% জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব।

তিনি বলেন, আমরা যদি সিএফএল বাল্ক্ব বদলে এলইডি ব্যবহার করি, সনাতন পদ্ধতির এসির বদলে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি ব্যবহার করি আর বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান ব্যবহার করতে পারি তাহলে ৫০% বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।

প্রবন্ধে বলা হয়, গণপূর্ত, শিক্ষা বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগ মিলিয়ে দেশে প্রায় ৮৫ হাজার সরকারি ভবন আছে। এসব ভবনে বিদ্যুতের সাশ্রয় ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কার্বন দূষণ।

সুপারিশগুলো হলো: ১. কম্পিউটার ব্যবহারে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মোড ব্যবহার করতে হবে। ২. ফ্লুরোসেন্ট টিউব লাইটের বদলে এলইডি বাল্ক্ব। ৩. সনাতন পদ্ধতির সিলিং ফ্যান ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. পুরানো এসির বদলে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি ব্যবহার। ৫. ভবনগুলোতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কাচ ব্যবহার। ৬. বিদ্যুৎ ব্যবহারে গতানুগতিক অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া একটা সমন্বিত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী গাইড লাইন তৈরি করা।

আরও পড়ুন

×