ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

‘অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বেঁচে থাকবেন কর্মের মাঝে’

‘অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বেঁচে থাকবেন কর্মের মাঝে’

অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন, ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২১ | ০৮:০৯ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২১ | ০৮:১৫

‘জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম কর্মের মাধ্যমে নিজেকে পরিণত করেছিলেন দেশের বাতিঘরে। বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশ ও প্রসারে কাজ করে গেছেন সারাজীবন। দৈহিক মৃত্যু হলেও এ দেশের মানুষদের মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টিকর্মে।’

বুধবার রফিকুল ইসলামের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এমন মন্তব্য করেন। বাংলা একাডেমি ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

মঙ্গলবার ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ভাষা সংগ্রামে অংশ নেওয়া রফিকুল ইসলাম। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয় তার মরদেহ। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় এখানে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সচিব আবুল মনসুর, মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমি, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় (আসানসোল, ভারত), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব।

রফিকুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন।

বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বেলা দুইটার দিকে রফিকুল ইসলামের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। সেখানে রফিকুল ইসলামের মরদেহে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, অসাম্প্র্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। জাতির যেকোনো সংকটে তিনি সম্মুখসারিতে নেতৃত্ব দিতেন, আমাদের পথ দেখাতেন।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদ ও অন্যরা, ছবি: সমকাল

আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্র্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আনিস স্যার চলে গেলেন, রফিক স্যার চলে গেলেন। আমরা সত্যিই অভিবাবক শূন্য হয়ে পড়লাম। বাঙালির ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে, প্রতিটি সংগ্রামে, সংকটে, স্বাধীকার, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র- প্রতিটি সংগ্রামে তিনি ছিলেন এমন এক বাতিঘর, যিনি জাতিকে পথ দেখিয়েছেন।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে দেশ একজন মহান শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীকে হারালো। তিনি ভাষা সংগ্রামী ছিলেন, তার হাত ধরেই নজরুল ইনস্টিটিউট গঠিত হয়েছিল এবং তিনি জাতিকে সবসময় পথ দেখিয়েছেন।

রফিকুল ইসলাম সারাজীবন নজরুল চর্চাকে নিজের জীবনের ব্রত করেছিলেন বলে মন্তব্য করে কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, নজরুল চর্চায় তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। নজরুল জীবনী তিনি লিখে গেছেন, এটা তার সবচেয়ে বড় কাজ।

শহীদ মিনারে রফিকুল ইসলামের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, তথ্য সচিব মো. মকবুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি বাংলা বিভাগ, বাংলাদেশ ওয়ার্কর্স পার্টি, উদীচী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রফিকুল ইসলামের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর বাদ আসর আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

আরও পড়ুন

×