ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সড়ক দুর্ঘটনারোধে ১১১ সুপারিশ বাস্তবায়ন ২-১ বছরে সম্ভব নয়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সড়ক দুর্ঘটনারোধে ১১১ সুপারিশ বাস্তবায়ন ২-১ বছরে সম্ভব নয়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিসচার সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২১ | ১০:৪০ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২১ | ১০:৪১

সড়ক দুর্ঘটনারোধে গঠিত টাস্কফোর্সের ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়ন দুই-এক বছরের মধ্যে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। সড়কে দুর্ঘটনা রোধে ১১১ সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাওয়া টাস্কফোর্সের প্রধান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবির সঙ্গে সরকারও একমত। সরকারও সেভাবে কাজ করছে। একজন মানুষেরও সড়কে মৃত্যু হোক- তাই কেউ চায় না। তিনি বলেন, এ ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। দুই এক বছরে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম অডিটরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। 

চালক কতক্ষণ গাড়ি চালাবে খেয়াল রাখতে হবে

বিশ্রাম না নিয়ে একটানা গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অনেক সময় দেখা যায় একজন চালক সারা রাত গাড়ি চালানোর পর আবার তাকে সকালে গাড়ি চালনোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। এটা যাতে না হয় তা দেখতে হবে। প্রয়োজনে চালককেও এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।  একজন চালক কতক্ষণ গাড়ি চালাবে তা খেয়াল রাখতে হবে। 

চালকদের জন্য বিশ্রামাগার হচ্ছে 

মহাসড়কে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মহাসড়কে বাস বে, ট্রাক বে নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু জায়গায় এটা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর যাতে চালকরা সেখানে বিশ্রাম নিতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে অনেক জায়গায় বাস বে, ট্রাক বে জমির অভাবে করা যাচ্ছে না। তবে সড়কে চালকদের বিশ্রাম দরকার।

রাজধানীকে স্মার্ট সিটিতে রুপান্তরের পরিকল্পনা

রাজধানীকে স্মার্ট সিটিতে রুপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরকে স্মার্ট সিটি করার পরিকল্পা সরকারের রয়েছে। এতে পুরো শহর ক্যামেরার আওতায় চলে আসবে। তবে এটা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটা সময় ঢাকা-আরিচা সড়ক মরণফাঁদ ছিল। সেখানে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটত। ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সেই সড়ক মেরামত করেছে। দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গাগুলো চিহিৃত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বর্তমানে ওই সড়কে দুর্ঘটনা অনেক কমে গেছে। দেশের এ রকম অনেক জায়গায় সড়ক সংস্কারের মাধ্যমে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা হয়েছে। 

তিনি বলেন, অনেক কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। বিদেশে ২০ শতাংশ সড়ক থাকে। আমাদের সেই সুযোগ নেই। আমাদের দেশে ৮ শতাংশ সড়ক ছিল সরকার সেটাকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশের মতো করেছে। এছাড়া মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ নানা প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ডেভেলপ কান্ট্রিতে উন্নীত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সরকার। 

আইন ভঙ্গকারী জাতিতে পরিণত হয়েছি

মন্ত্রী বলেন, জার্মানিতে ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার বেগে অনেক সড়কে গাড়ি চলে। কিন্তু আমাদের মতো জনবহুল দেশে তা সম্ভব নয়। সড়কে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার জন্য চালক শ্রমিক যাত্রী ও পথচারীর আইন ভঙ্গের প্রবণতাকে দায়ী করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমরা তো আইন ভঙ্গকারী জাতিতে পরিণত হয়েছি। হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধ হয়েছিল। মালিকরা আবার তা লাগাচ্ছে। আইন ভঙ্গ করে মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছি। এভাবে প্রতিনিয়ত আইন ভাঙছি।’

হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের বিষয়টি দেখবো

ঢাকা শহরে হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সেই সময় হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল। তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। সব ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অনেক গাড়ি থেকে হাইড্রোলিক হর্ন খুলে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার চলছে। হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের বিষয়টি দেখবো। এছাড়া সড়কে দুর্ঘটনা আরও কমিয়ে আনতে হবে।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর হাত থেকে সেলাই মেশিন গ্রহণ করেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল নজরুল ইসলাম, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ম হামিদ, বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিসচার মহাসচিব সৈয়দ এহসানুল হক কামাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নিসচার যুগ্ম মহাসচিব সাদেক হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন। 


আরও পড়ুন

×