ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে ফিকি

বাজেট বিনিয়োগবান্ধব নয়

বাজেট বিনিয়োগবান্ধব নয়

বুধবার ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়ােজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা-ফটাে রিলিজ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫ | ০১:৪৩

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ থাকলেও তা সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব নয় বলে মনে করছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। সংগঠনটির মতে, বাজেটে নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা ও কিছু সাংঘর্ষিক পদক্ষেপের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে।

বুধবার রাজধানীর গুলশানে এফআইসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এমডি জাভেদ আখতার। এ সময় সংগঠনের সাবেক সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় ও রূপালী হক চৌধুরী এবং কর বিশেষজ্ঞ স্নেহাশীষ বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বলেন, সরকার চাচ্ছে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসুক। অথচ অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তানের মতো দেশের চেয়েও এখানে বিদেশি বিনিয়োগ কম। কারণ নীতি সংকট ও ধারাবাহিকতার অভাব।

সংগঠনের নেতারা বলেন, বাজেটে কিছু খাতে কর ছাড় দেওয়া হলেও কিছু খাতে নতুন কর আরোপ বা বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে ইতিবাচক উদ্যোগগুলোর সুফল বিঘ্নিত হচ্ছে। জাভেদ আখতার বলেন, সরকার যখন বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চায়, তখন এমন নীতি-অসামঞ্জস্য উল্টো বিদেশিদের নিরুৎসাহিত করবে।

তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে করা হলেও এতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অনুপস্থিত। ফলে বিনিয়োগে গতি আসবে না, কর্মসংস্থানও বাড়বে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও যথাযথ পদক্ষেপ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ফিকি বলছে, সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পরিচালন ব্যয়ের ৯৫ শতাংশের সমান, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জাভেদ আখতার বলেন, টার্নওভার ট্যাক্স ১ শতাংশে উন্নীত করায় আইন না মানা ব্যবসাগুলো বিক্রি গোপন করে কর ফাঁকি দেবে। এতে করের ভার বাড়বে সেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর, যারা সৎভাবে কর দেয়।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের এমডি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ঘোষিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের বাস্তব আয় থেকে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। অথচ করের আওতা না বাড়িয়ে বারবার একই করদাতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাঁর মতে, কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে হবে এবং নতুন করদাতাদের করজালে আনার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

বার্জার পেইন্টসের এমডি রূপালী হক চৌধুরী বলেন, কিছু খাতে হঠাৎ কর বাড়িয়ে শিল্প খাতকে অপ্রস্তুত করে দেওয়া হচ্ছে। যার প্রভাব উৎপাদন ব্যয় এবং ভোক্তা পর্যায়ের মূল্যে পড়বে। তিনি বলেন, শিশুখাদ্যে শুল্ক বাড়ানো, কোমল পানীয় খাতে কর বৃদ্ধি এসব সিদ্ধান্ত ভোক্তা ও রাজস্ব উভয় দিক থেকেই ক্ষতিকর। কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, কাস্টমসের পূর্ণ অটোমেশন এবং করজাল সম্প্রসারণের আহ্বান জানান তিনি।

রূপালী হক চৌধুরী বলেন, সরকার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করতে চাইলে করছাড় প্রণোদনা স্পষ্ট ও নিশ্চিত করতে হবে। আইপিও অনুমোদনের সময় কমাতে ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। কর সুবিধা পাবে বলে গ্রামীণফোন তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সে সুবিধা পায়নি– এমন অভিযোগ তুলে নীতির ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতার দাবি জানান তিনি। বলেন, উৎসাহমূলক যথেষ্ট প্রণোদনা পেলে কেনো বিদেশি কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসবে না। 

কর বিশেষজ্ঞ স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, যদি আইনে আইপিওর পরিবর্তে ‘পাবলিক অফার’ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করা হতো তাহলে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও ১০ শতাংশ শেয়ার না ছাড়া কোম্পানিগুলো করছাড় পেতে আরও শেয়ার ছাড়ত ।

তিনি বলেন, বাজেট শুধু সংখ্যার বিষয় নয়, এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ‘সিগন্যাল’। সরকারের উচিত বাজেটের মাধ্যমে যেন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হওয়ার বার্তা না যায়, সে বিষয়ে সচেতন থাকা। তিনি আরও বলেন, বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৬ শতাংশ বড়, কিন্তু প্রকৃত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৩৮ শতাংশ বেশি। এ লক্ষ্য কতটা বাস্তবসম্মত এবং তা অর্জনে কাদের ওপর চাপ পড়বে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করছাড় তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি বলে সমালোচনা করে বলেন, এতে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়া ও স্বচ্ছতা বাড়াতে সরকারের উদ্যোগই ব্যাহত হবে।

আরও পড়ুন

×