স্মৃতির খাতায়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখা হয়েছিল বিভিন্ন আয়োজনে
মো. মিরাজ উদ্দিন
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | ২১:৫৪
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কবিতার কথা মনে আছে?
‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে
আমার না-থাকা জুড়ে।’
কবিতার এই অংশটুকু হৃদয়ের গভীর স্থানে সূক্ষ্ম দাগ কেটে যাওয়ার মতোই। ঠিক একইভাবে থেকে যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের মনে কোনো না কোনো না থাকা জুড়ে। তবে প্রতিটি চলে যাওয়াই কষ্টের। কিছু কিছু চলে যাওয়া এবং কিছু কিছু ফেলে চলে আসা মেনে নেওয়া অসম্ভব কঠিন হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের সঙ্গে সাড়ে পাঁচ বছর একসঙ্গে ক্লাস, প্র্যাকটিকাল, আড্ডা, ঘোরাঘুরি আর জীবনের সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি সেই পশুপালন অনুষদের চক্রবৃত্ত পঞ্চান্ন ব্যাচের আজ ইতি। আর হবে না একসঙ্গে ক্লাস কিংবা ঘোরাঘুরি, সবাই যেন হারিয়ে যাবে নিজ নিজ গন্তব্যে। এই সে দিনই কেবল ভর্তি হতে বের হয়ে পড়েছিলাম বাসা ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে। আজ প্রায় সাড়ে ৫ বছর পর স্নাতক জীবন শেষ হওয়ার পথে। ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়েছে সেই পুরোনো নোট-বইখাতা, হলের সেই রুম। হঠাৎ আর মোবাইল ফোনের মেমোরিতে থাকা প্রথম সেমিস্টারের ক্লাসের স্মৃতি। সেই দিনগুলোর কথাগুলো দেখলে মনে পরে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকের ক্লাসগুলোর প্রতি এত বেশি আবেগ আর উচ্ছলতা ছিল যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। করোনা মহামারি কারণে অনেকটা সময় পিছিয়ে পড়েছিলাম আমরা। প্রায় দেড় বছর অনলাইনে ক্লাস করেছি কিন্তু পরীক্ষাগুলো বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর হয়েছে। সব কিছু স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে ঠিকই তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষ হওয়ার সময় শুরু হয়ে গিয়েছিল। সব কিছু এত দ্রুত শেষ হয়ে গেল যেন পলক খুলতেই আমি আর চক্রবৃত্তে নেই। তবে প্রায়ই মনে পড়ে সেই ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুদের দুষ্টুমি-খুনসুটিগুলো, আন্দোলন-শোডাউনগুলোতে একসঙ্গে কাটানো সময় আর গানের আসর কিংবা চায়ের আড্ডা। আমি প্রথম বর্ষে যখনই সুযোগ পেতাম তখনই বন্ধু বান্ধবের ক্যান্ডিট ছবি তুলতাম। কেও জিজ্ঞাসা করলে বলতাম, ‘থাকবে একসময় স্মৃতি হয়ে!’
বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক টি জায়গা যেখানে প্রায় সব রকমেরই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে সেই সময় কাটানোর মুহূর্ত বা আকাঙ্ক্ষা ইচ্ছাগুলো রয়ে যাবে স্মৃতির পাতায়। আজ থেকে ঠিক ছয় মাস পর কোনো ঝামেলা থাকবে না, সকালে ঘুম থেকে ওঠার যন্ত্রণা থাকবে না, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস, ল্যাবের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা, দেরিতে ব্যবহারিক খাতা-অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ায় শিক্ষকদের ধমক খাওয়া। এসব কিছুই একসময় শুধুই স্মৃতি হয়ে যাবে। ফ্যাকাল্টির ডিপার্টমেন্টগুলো থেকে বনভোজনের উদ্দেশ্যে বাসে চড়ে চিৎকার করতে করতে যাওয়া, কখনও দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়া আর কোনো দিন হবে না। জীবন কারও জন্য থেমে থাকে না, সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে এক সময় পৌঁছায়। চার-পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব টিকে থাকুক আজীবন। কর্মজীবন এবং পারিবারিক ব্যস্ততার মাঝেও যেন বন্ধুত্বের বন্ধন ছিন্ন না হয়, এমনটিই প্রত্যাশা। সবার জন্য শুভকামনা রইল।
- বিষয় :
- স্মৃতি