ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

রংতুলিতে আঁকা এক সকাল

রংতুলিতে আঁকা এক সকাল

ভিন্ন এক মাত্রা এনেছে এই আয়োজন

 আরাফাত হোসাইন

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫ | ০০:২০

সবুজ সমারোহে সজ্জিত প্রকৃতিকন্যা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পরিবার থেকে দূরে থাকায় জীবনটা কখনও কখনও নিঃসঙ্গ আর নিরস মনে হতে শুরু করে। সপ্তাহজুড়ে সারাদিন ক্লাস প্র‍্যাক্টিক্যাল করে সবাই যেন ক্লান্ত! তবে এই বাকৃবিরই কিছু মনোমুগ্ধকর রীতিনীতি যেন সে জীবনে মায়াবী রং মিশিয়ে দিতে প্রস্তুত।   প্রতিটি ফ্যাকাল্টিতেই  ক্লাস করার সুবিধার্থে কয়েকটি প্র্যাকটিক্যাল গ্রুপে ভাগ করা হয়। তেমনি কৃষি অনুষদের সেকশন ‘সি’-তে রয়েছে ৩টি গ্রুপ- ৭, ৮ এবং ৯। প্রতিবছরই প্র্যাকটিক্যাল গ্রুপ ৭ থেকে নবাগত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় এক গ্রুপ মিটআপ। গত বছর ৬১ ব্যাচের পক্ষ থেকে এমনই এক উষ্ণ স্বাগতম পেয়েছিল বর্তমান ৬২ ব্যাচ, যার কথা ভুলবার নয়। তখন ৬১ ব্যাচের গ্রুপ রিপ্রেজেন্টেটিভ সৌরভ  ভাই বলেছিলেন,  ‘আমরা যেমন তোমাদের জন্য আয়োজন করেছি সামনের বছর তোমরাও করবে। আয়োজনে কোনো কমতি করবে না।’ সিনিয়রদের সঙ্গে করা সেই অঙ্গীকার আর নিজেদের ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ থেকে ৬২ ব্যাচ এই বছর ১৯ এপ্রিল আয়োজন করে ৬৩ ব্যাচের সঙ্গে গ্রুপ মিটআপ। এটি একটি একবেলার আয়োজন হলেও এর পেছনে অবদান ছিল অনেকের। একবেলার ওই আয়োজনই আল্পনা এঁকে রেখেছে সাদা পায়রার মতো শুভ্র স্মৃতির। 
মিটআপ শুরুর আগেই ৬২ ব্যাচের গ্রুপ ৭-এর রিপ্রেজেন্টেটিভ সবাইকে অবহিত করেন। এরপর আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন আবদুল্লাহ আল মুকিত। এবার শুরু হলো দায়িত্ব বণ্টনের পালা। মুকিত নিজে কাগজ এনে সবার কাছ থেকে জুনিয়রদের জন্য উপদেশ ও শুভেচ্ছাবার্তা লেখার ব্যবস্থা করে। সমন্বিত প্রচেষ্টায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। অবশেষে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন ১৯ এপ্রিল। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেই ৬২ ব্যাচের সবাই পৌঁছে যায় টিএসসি লেকভিউ ভেন্যুতে। শুরু হয় বেলুন ফোলানো, ফটোফ্রেম টানানো ও খেলাধুলার প্রস্তুতি। জুনিয়ররাও সকাল ১০টার কিছু আগেই পৌঁছায়। জুনিয়ররা সবাই অবাক কণ্ঠে বলে ওঠে, ‘আমাদের জন্য এতকিছু?’ গ্রুপ ৬২’র উষ্ণ অভ্যর্থনায় জড়তা কেটে সাবলীল হতে থাকে সিনিয়র-জুনিয়রের সম্পর্ক। এক এক করে সবাই বসে টিএসসির ছাতার নিচে। শুরু হয় পরিচিতি পর্ব। পরিচয় পর্বে বোঝা যায় পৃথিবী আসলেই অনেক ছোট। কাকতালীয়ভাবে একেকজনের এলাকা, কলেজ আরও কতভাবে যে মিল পাওয়া যায়! আর গড়ে উঠতে থাকে সিনিয়র-জুনিয়র বন্ধন।
পরিচিতি শেষে জুনিয়রদের গোলাপ, চকলেট এবং একটি উপদেশবাণী দিয়ে বরণ করে নেয় সিনিয়ররা। এরপর শুরু হয় ৬৩ ব্যাচদের নিয়ে খেলাধুলার আয়োজন।  
খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।  এরপর শুরু হয় আলোচনা ও আড্ডা। জুনিয়রদের একাডেমিক প্রশ্নের উত্তর দেয় সিনিয়ররা। ভাইভা সংক্রান্ত বিষয়, পড়াশোনার পদ্ধতি, হলে বা ক্যাম্পাসে সমস্যা হলে কী করতে হবে সব নিয়েই খোলামেলা কথা হয়।
৬২ ব্যাচের  মুকিত বলেন, অনেক কষ্ট করে আয়োজনটা করেছি, আলহামদুলিল্লাহ সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। ’৬৩ ব্যাচের তানভীর বলেন, ক্যাম্পাসে এসে সিনিয়ররা এত সুন্দর করে স্বাগত জানাবে, এটা ভাবতেও পারিনি। আমরা কৃতজ্ঞ আপনাদের প্রতি। তানভীরের এই কথায় যেন 
এক বছর আগের নিজেকেই দেখতে পায় ৬২ ব্যাচ। ঠিক যেভাবে ৬১ ব্যাচ এক বছর আগে বলেছিল, ঠিক সেভাবেই ৬২ ব্যাচের সিনিয়ররা বলে, ‘পরের বছর যখন তোমাদের জুনিয়র 
আসবে তোমরাও এভাবে একটা মিটআপ 
করবে, কেমন?’ v

আরও পড়ুন

×