ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মাহবুবুল হক কখনো বিভ্রান্ত হননি: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

মাহবুবুল হক কখনো বিভ্রান্ত হননি: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২২ | ১১:১৬ | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ | ১১:৩৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, পাকিস্তানের জাতি সমস্যার সমাধান করে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের দিয়ে নিয়ে যেতে বামপন্থীরা যেভাবে অগ্রসর হতে পারতেন, সেভাবে যেতে পারেনি। পাকিস্তান রাষ্ট্র এমনিতেই ভাঙতো। ১৯৪৭ সালের পরে যে এই রাষ্ট্রও যে টিকবে না, এটা অবধারিত ছিল। কিন্তু এই ভাঙার নেতৃত্বে বামপন্থীরা থাকতে পারেনি। এই জাতি সমস্যার মিমাংসা দরকার ছিল শ্রেণি সমস্যার সমাধানের জন্য। মাহবুবুল হক এটি বুঝতে পেরেছিলেন। আগে জাসদ ছিল, পরে জাসদ ভেঙে বাসদ হয়েছিল। এসব কিছুর মধ্যেই একটার বিভ্রান্তি ছিল। এই বিভ্রান্তির মধ্যেও মাহবুবুল হক তার গন্তব্যকে পরিস্কারভাবে দেখতে পেরেছিলেন। বাম আন্দোলনের মধ্যে অনেক সময় বিভ্রান্তি আসে। কিন্তু তিনি কখনো বিভ্রান্ত হননি, আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তন বাসদ আহ্বায়ক কমরেড আ ফ ম মাহবুবুল হকের পঞ্চম মৃত্যুবাষিকীকে সামনে রেখে আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘আ ফ ম মাহবুবুল হক স্মৃতি সংসদ’ এর আয়োজন করে। 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যখন ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ হয়েছিল, তখন ১৭টা জাতি এখানে ছিল। দেশভাগের পর পাকিস্তান নামে যে অবৈজ্ঞানিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই রাষ্ট্রেও ছয়টি জাতি ছিল। এই জাতি সমস্যার সমাধান পাকিস্তান করতে পারেনি। সেজন্য একটা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এদেশে সৃষ্টি হয়েছিল। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে জাতি সমস্যা সমাধানের ব্যাপারটা ছিল। এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক উপাদানও ছিল। মাহবুবুল হক এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি বারবার নির্যাতনে শিকার হয়েছেন, আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু কখনো তিনি পরাজিত হননি। তিনি তার জায়গায় অটুট ছিলেন।

স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মো. শাহ আলম, বাংলাদেশের বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতিমণ্ডলির সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা বেলাল চৌধুরী, বাম ঐক্য ফ্রন্টের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানে মো. শাহ আলম বলেন, আ ফ ম মাহবুবুল হকের সম্পর্কে বলা গেলে অনেক কিছুই বলা যাবে। বলে শেষ করা যাবে না। তার একটা বিশেষ দিক হলো, তিনি কপট ছিলেন না। তিনি সুবিধাবাদী ছিলেন না। তিনি ছিলেন দ্রোহী। তার মধ্যে ‘পেটি-বুর্জোয়া হিপোক্রেসি’ বিরোধী ছিলেন।

সাইফুল হক বলেন, মাহবুবুল হক এদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রগামী সৈনিক ছিলেন। সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার সাহস এবং ঔদ্ধত্য তার মধ্যে ছিল। এটি আমি খুব কমই দেখেছি। আদর্শের উত্তরাধিকার হতে পারলে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তিনি ছাত্রনেতা থাকাকালীন ছাত্রদের সমস্ত আবেগ তাকে নিয়েই ছিল। তার মধ্যে অসাধারণ সম্মোহনী শক্তি ছিল। তিনি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন। বর্তমান সময়ে তিনি থাকলে দেশে চলমান ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতেন।

নাজমুল হক প্রধান স্মৃতিচারণ করে বলেন, মাহবুবুল হক সত্যিকার অর্থেই একজন বিপ্লবী ছিলেন। তিনি অমর হয়ে থাকবেন। 

ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, মাহবুবুল হক তার সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে এদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তার মতো অঙ্গিকারাবদ্ধ একজন রাজনীতিবিদের সমাজ বদলের চিন্তাটা কেমন ছিল-এটা নিয়ে কাজ করার জায়গা রয়েছে। 

আব্দুস সাত্তার বলেন, তিনি একজন সাহসী নেতা ছিলেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় তার স্পষ্টবাদী বক্তব্যের মধ্যে তার সাহস আমি প্রত্যক্ষ করেছি। 

জোনায়েদ সাকি বলেন, মাহবুবুল হকের প্রতি আমার বিশেষ অনুরাগ আছে। কেননা তিনি এদেশের সমস্ত লড়াই-সংগ্রামে অগ্রভাগে থাকতেন, পিছু হটতেন না। তিনি এখন বেঁচে থাকলে এদেশের বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। 

সভাপতির বক্তব্যে আবু সাঈদ খান বলেন, মাহবুবুল হক মেধাবী ও সাহসী ছিলেন। তিনি আমৃত্যু বিপ্লবী ছিলেন। তিনি কেবল একজন ব্যক্তিই নন, তিনি একটা ধারার প্রতিনিধি। তিনি রাজপথে থেকে, লড়াইয়ের মিছিলে থেকে তিনি একটা পথ খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। এখানেই তার কৃতিত্ব। এভাবে তিনি লড়াই করতে করতে জীবন দিয়ে গেছেন। 

আরও পড়ুন

×