বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা
তিন ধারায় চার্জশিট হচ্ছে, আসামি ২৩

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ | ১৩:২৩
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার
ফাহাদ হত্যা মামলায় চার্জশিটে আসামি হচ্ছে ২৩ জন। এই হত্যার ঘটনায় দায়ের
করা মামলায় আসামির সংখ্যা ছিল ১৯ জন। পরবর্তী সময়ে তদন্তে আরও চারজনের
সম্পৃক্ততা পাওয়া যাওয়ায় তাদের চার্জশিটে আসামি করা হচ্ছে। দণ্ডবিধির ৩০২,
১০৯ ও ৩৪ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে। চলতি মাসের শেষের দিকে না
হলেও আগামী মাসের শুরুতে আবরার হত্যায় চার্জশিট আদালতে দাখিল করবে মামলার
তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র
থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ওই সূত্র জানায়, আবরার হত্যা মামলায় বুয়েটের চিকিৎসক, শেরেবাংলা হলের
প্রভোস্টসহ আরও অনেককে সাক্ষী করা হবে। এরই মধ্যে মামলায় জব্দ সব আলামত
ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
আবরার হত্যা মামলায় আসামিরা হলো- ১৩তম ব্যাচের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
বিভাগের ছাত্র ও বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল,
একই বিভাগের ১৪তম ব্যাচের ছাত্র ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম
ফুয়াদ, ১৫তম ব্যাচের ছাত্র এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, একই
ব্যাচের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান
রবিন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ও ১৬তম ব্যাচের ইফতি মোশাররফ সকাল, সাহিত্য
সম্পাদক ও একই ব্যাচের মনিরুজ্জামান মনির, ক্রীড়া সম্পাদক ও ১৫তম ব্যাচের
মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ১৭তম ব্যাচের মাজেদুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সদস্য ও ১৬তম
ব্যাচের মুজাহিদুর রহমান, একই ব্যাচের ছাত্র তানভীর আহম্মেদ, ১৭তম ব্যাচের
হোসেন মোহাম্মদ তোহা, ১৬তম ব্যাচের মো. জিসান, একই ব্যাচের মো. আকাশ, ১৭তম
ব্যাচের শামীম বিল্লাহ, মো. শাদাত, ছাত্রলীগ কর্মী এহতেশামুল রাব্বি
তানিম, ১৭তম ব্যাচের মো. মোর্শেদ, একই ব্যাচের মো. মোয়াজ এবং ছাত্রলীগ
কর্মী ও ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মুনতাসীর আল জেমি। তারা সবাই বুয়েটের শেরেবাংলা
হলের আবাসিক ছাত্র।
আসামিদের মধ্যে মাজেদুল, তানভীর, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, জিসান, আকাশ, শামীম,
শাদাত, মোর্শেদ ও মোয়াজ ছাত্রলীগের কোনো পদে রয়েছে কি-না, তা জানা যায়নি।
তবে শেরেবাংলা হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, সক্রিয় কর্মী হিসেবে তারা
নিয়মিত ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে যায় এবং সবাই সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান
রাসেলের কর্মী। তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় এজাহারে নাম নেই এমন চারজনকে
আসামি করা হচ্ছে। তারা হলো- ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর
রহমান মিজান ও শামসুল আরেফিন রাফাত।
আসামিদের মধ্যে মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, শামসুল
আরেফিন রাফাত, অমিত সাহা ও এএসএম নাজমুস সাদাত রিমান্ডে আছে। আবরারসহ তাকে
হত্যায় অভিযুক্তদের ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, সিসিটিভি ফুটেজ, ফেসবুকের
স্ট্ক্রিনশট পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক
ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
অমিত-তানভীর আবার রিমান্ডে :আবরার হত্যায় গ্রেফতার বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের
আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা ও খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীরকে আবারও
তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাদের
আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের আরও সাত
দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সাইদ তিন দিনের
রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই মামলায় গ্রেপ্তার বুয়েট শিক্ষার্থী হোসেন
মোহাম্মদ তোহাকেও গতকাল পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে
পাঠানো হয়েছে।
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয়
বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেয় বুয়েট শাখা
ছাত্রলীগের কয়েকজন। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ির করিডোর থেকে
তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে
তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে
হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে
গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম
জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, মনিরুজ্জামান মনির ও মেহেদী
হাসান রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
- বিষয় :
- বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা