আদর্শকে বইমেলায় স্টল না দেওয়ায় ৩৮ নাগরিকের উদ্বেগ

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ | ১২:৪১ | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ | ১২:৪১
দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা 'আদর্শ'কে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩- এ স্টল বরাদ্দ না দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ৩৮ নাগরিক।
উল্লেখ্য, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ বৃহস্পতিবার আদর্শ প্রকাশনার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকাশক মাহাবুব রাহমান ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-তে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আসন্ন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশনাটির স্টল বরাদ্দ স্থগিত করে রাখা হয়েছে। মাহাবুব রাহমান মনে করছেন, ভিন্নমত প্রকাশে বাধা দিতেই এই হীন চেষ্টা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আদর্শ থেকে ইতোমধ্যে ছয় শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনশ'র অধিক লেখক। আদর্শ প্রকাশিত বইসমূহের মধ্য থেকে তিনটি বইয়ের বিরুদ্ধে 'ভিন্নমতের' অভিযোগ এনে আদর্শকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আসন্ন বইমেলায় অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেই ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে দেশের ৩৮ নাগরিকের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের মূলনীতি ছিল- মানবিক মর্যাদা, আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা রাষ্ট্র দেবে। সেক্ষেত্রে একজন লেখকের বইয়ে তার মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাও রক্ষিত হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু গভীর উদ্বেগের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি যে, আদর্শ প্রকাশনাকে তিনটি বইয়ের কথা উল্লেখ করে বইমেলায় অংশগ্রহণের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা হরণের পাশাপাশি আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি। কোনো রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে আদর্শ প্রকাশনাকে বইমেলায় অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। বাংলা একাডেমিকে বলা হয় 'বাঙালির মেধা ও মননের প্রতীক'। সেই বাংলা একাডেমি কেন নিজেদের দলীয়করণের সুযোগ দেবে?"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'এটা শুধু নিন্দনীয় নয়, একই সঙ্গে লেখকের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। এখানে দেখা যাচ্ছে কণ্ঠরোধ করতে বাংলা একাডেমিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি বইমেলাকে কেন্দ্র করে সারা বছরের প্রস্তুতি, আর্থিক বিনিয়োগসহ প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট আরও অনেকের কর্মসংস্থানেও বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।'
বিবৃতিদাতারা দ্রুত আদর্শকে বইমেলায় প্রাপ্য অনুযায়ী স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি বইমেলাকে কেন্দ্র করে লেখক, প্রকাশকের স্বাধীনতা যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে তা নিশ্চিতের জোর দাবি জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন:
১। লেখক ও রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর
২। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
৩। অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক
৪। কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার
৫। অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী
৬। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
৭। নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবির
৮। নারীনেত্রী ফরিদা আকতার
৯। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল
১০। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাঈদ ফেরদৌস
১১। লেখক ও সংগঠক মুনির হাসান
১২। সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা
১৩। প্রকাশক মাহরুখ মহিউদ্দীন
১৪। লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্নেষক ড. মারুফ মল্লিক
১৫। ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া
১৬। অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান
১৭। লেখক ও প্রকৌশলী চমক হাসান
১৮। লেখক ও অধ্যাপক রাগিব হাসান
১৯। কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ
২০। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি
২১। রিভারাইন পিপল এর মহাসচিব শেখ রোকন
২২। প্রকাশক দীপঙ্কর দাশ
২৩। লেখক ও সংগঠক ফিরোজ আহমেদ
২৪। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান মামুন
২৫। শিক্ষক খোরশেদ আলম
২৬। লেখক রাখাল রাহা
২৭। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আজম
২৮। প্রকাশক মেসবাহউদ্দিন
২৯। লেখক ও রাজনীতিবিদ ড. জাহেদ উর রহমান
৩০। সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র
৩১। কথাসাহিত্যিক বাকি বিল্লাহ
৩২। লেখক ও প্রকাশক নাজিম উদ্দিন
৩৩। সাংবাদিক তন্ময় ইমরান
৩৪। সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ
৩৫। নির্মাতা তাসমিয়া আফরিন মৌ
৩৬। লেখক ও গবেষক জাকারিয়া পলাশ
৩৭। নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন
৩৮। গবেষক সাইমুম পারভেজ