রাজনৈতিকভাবেই পাহাড়ের সংকট সমাধান করতে হবে: মেনন

ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৬:৩৩ | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৬:৩৩
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়নসহ পাহাড়ের সব ধরনের সমস্যা সমাধান করতে হবে রাজনৈতিকভাবে। এই ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতা, শৈথিল্য সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে। পাহাড়ের আদিবাসীদের জাতিগত স্বীকৃতি, চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, বিদ্বেষ, সন্ত্রাস, সংঘর্ষ দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পাহাড়ি-বাঙ্গালীর সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তোলার সময় এসেছে।’
ঢাকার বাংলামোটরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হোন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সভায় রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, গবেষকসহ অন্যান্য পেশাজীবী প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘পাহাড়ের অবহেলিত জুম্ম জনগণের স্বার্থে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নসহ আদিবাসীদের সব ধরনের সমাধান করতে হবে রাজনৈতিকভাবে। এর জন্য পাহাড়ি-বাঙালির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জরুরি হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিকভাবে পাহাড়ের সংকট সমাধানের লক্ষেই জেএসএসের সৃষ্টি হয়েছিল। সামরিকীকরণ করে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর নাকের ডগায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিনের (কেএনএফ) আবির্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জঙ্গিরা, বিপথগামী তরুণরা সেখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এই কুকি-চিন কাদের সৃষ্টি, কী তাদের প্রয়োজন- যারা পাহাড়ে নতুন করে অশান্তি সৃস্টি করছে।’
দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক ও লেখক আবু সাঈদ খান সভায় বলেন, “জেএসএসের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত এম এন লারমা বহুকাল আগে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘আমি বাঙালি নই, চাকমা ও নাগরিকত্বে বাংলাদেশি।’ তাঁর ওই বক্তব্য আজও বাস্তবায়ন হয়নি। পাহাড়ি আদিবাসীদের ওপর বাঙালি জাতিসত্তা চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। বাঙালিরা মনে করে তারা শাসকের জাত আর পাহাড়ের জনগণ শাসিত- এই ধারণা থেকে বের হতে হবে। আদিবাসীদের জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠায় দেশের শাসক গোষ্ঠীর উদাসীনতা সংকটকে প্রশমিত করবে না বরং বাড়াবে। এক সময় এটি সামগ্রিক আন্দোলনে রূপ নেবে। এ লক্ষ্যে জেএসএসকে দেশের মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে সর্ম্পৃক্ত হতে হবে।”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘জেএসএস আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখবে। এই জেএসএসই পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রকে একটি চুক্তি করতে বাধ্য করেছিল। সেই চুক্তি গত ২৫ বছরেও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি। ওই চুক্তি বাস্তবায়নে পাহাড়ি-বাঙালির সম্মিলিত আন্দোলন জোরদার করার সময় এসেছে। যথাযথভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন করা না হলে আগামী দিনে পাহাড়ে নতুন সংকট সৃষ্টি হবে।’
অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, ‘জেএসএস একটি বৈধ রাজনৈতিক দল। এই দলটিকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আদিবাসীরা তাদের জাতিগত সত্তা, কৃষ্টি নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। তাদের দাবি, তাদের অধিকার মেনে নিতে হবে।’ পাহাড়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘জনসংহতি সমিতি কখনোই বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়নি।’
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান আর দেরি না করে সরকারকে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা বলেন। ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন করা না হলে পাহাড়ের যে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা করতে পারেন।’
সভার সভাপতি সাধুরাম ত্রিপুরা সভায় উপস্থিত সবাইকে জেএসএসের সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা জানান। তিনি পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় আরও বক্তব্য দেন জেএসএসের প্রচার বিভাগের সদস্য দীপায়ন খীসা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা প্রমুখ।