ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

মিজানের পর গ্রেফতার কাউন্সিলর রাজীব

মিজানের পর গ্রেফতার কাউন্সিলর রাজীব

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়-সংগৃহীত ছবি

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ | ১১:৩৫ | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ | ১০:৪১

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে এবার গ্রেফতার হলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব। শনিবার রাত ১১টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৮ নম্বর সড়কের ৪০৪ নম্বর বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ নিয়ে চলমান অভিযানে দু'জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর গ্রেফতার হলেন।

এর আগে গত ১১ অক্টোবর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে গ্রেফতার করা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানকে। এছাড়া আরও কয়েকজন কাউন্সিলর রয়েছেন গ্রেফতার আতঙ্কে। 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, রাজীব বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় অবস্থান করছেন- এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাসা ঘেরাও করা হয়। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বাসায় তল্লাশি চালানো হয়। 

শনিবার রাতে বসুন্ধরা  আবাসিক এলাকার এই বাড়িটি ঘিরে অভিযান চালায় র‌্যাব-সমকাল

গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গডফাদারসহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা জি কে শামীম রয়েছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে আত্মগোপনে ছিলেন কাউন্সিলর রাজীব। র‌্যাবের একটি দল তাকে নজরদারিতে রাখছিল। 

জানা গেছে, অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন রাজীব। মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ, চন্দ্রিমা হাউজিং, সাতমসজিদ হাউজিং, ঢাকা উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকায় দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মোহাম্মদপুর এলাকায় তার একাধিক বাড়ি, জমি আছে ও একাধিক বিলাসী গাড়ির মালিক তিনি। ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলর পদে জয়লাভ করেন। এক দশক আগে মোহাম্মদীয়া হাউজিংয়ে ছোট্ট বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন তারেকুজ্জামান রাজীব। কাউন্সিলর হওয়ার পর চলতেন দামি গাড়িতে। তৈরি করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। তার রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী।

সব সময় চলাফেরা করতেন গাড়ির বহর নিয়ে। কাউন্সিলর হওয়ার পর দ্রুত ভাগ্য বদলে যেতে থাকে তার। রাজীবের লোকজন এক মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর করেন। ওই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে রহস্যজনক কারণে তার ওই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারও করা হয়েছিল। এরপর তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। 

অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ, বছিলা এলাকার পরিবহনে চাঁদাবাজি রাজীবের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরিবহন খাত থেকেও মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন তিনি। এলাকার পশুর হাটে একক নিয়ন্ত্রণ ছিল তার। প্লট ও জমি দখল করে দেওয়ার বিনিময়ে লাখ লাখ টাকা কামান তিনি। মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর সড়কের ৩৩ নম্বর প্লটে তিনি প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি করেন। এলাকায় অনেকে বলছেন ৫ কাঠা জমির ওপর ওই বাড়ি তৈরি করতে ৫ কোটি টাকার ওপর খরচ করেন তিনি। 

এলাকাবাসী জানান, কাউন্সিলর রাজীবের বাবার নাম তোতা মিয়া। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রী। এক সময় রাজীব মোহাম্মদপুর এলাকায় টং দোকানি ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, রাজীবের প্রভাব দেখিয়ে তার স্বজনরা অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা কামিয়েছেন। তার চাচা ইয়াসিন হাওলাদার মোহাম্মদপুর এলাকায় একাধিক প্লট দখল করেছেন।

আরও পড়ুন

×