ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

ভিকারুননিসার পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে কী হচ্ছে

ভিকারুননিসার পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে কী হচ্ছে

::ফাইল ছবি

সাব্বির নেওয়াজ

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ | ১৫:০১ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ | ১৫:৩২

রাজধানীর খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডি) নির্বাচন নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে বেইলি রোড পাড়া। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। চলছে ছাত্রীদের বাড়িতে বাড়িতে গণসংযোগ। উড়ছে টাকা। চলছে ব্যক্তিগতভাবে অথবা গোষ্ঠীভিত্তিক যোগাযোগ। প্রতিষ্ঠানটির চারটি শাখার প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবকরাও এ নির্বাচন ঘিরে নড়েচড়ে বসেছেন। প্রার্থীরা নানাভাবে অভিভাবকদের সমর্থন ও সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী শুক্রবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

তবে নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করে পক্ষে নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিভাবকদের একাংশ অভিযোগ তুলেছেন। নির্বাচনে সহস্রাধিক দ্বৈত ভোটার রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকার কারণে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কর্তৃপক্ষও ভোটার তালিকা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভোটার তালিকা সংশোধন করা যায় না বলেও অভিভাবকদের আরেক পক্ষ মত দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, আগে ভোটার তালিকা করে পরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হয়। তফসিল ঘোষণার পরে ভোটার তালিকায় হাত দেওয়ার অধিকার কর্তৃপক্ষের নেই। ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকার কারণে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে ঢাকার একটি আদালতে মামলা করেছেন এক অভিভাবক। এছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া আগের গভর্নিং বডির কয়েক সদস্যের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় তারাও ক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। এসব মামলার কারণে আগামী শুক্রবার নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকার  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফারজানা জামান এ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার। গত ১ থেকে ৩ অক্টোবর নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। ৬ অক্টোবর ছিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিন। বাছাইকালে আগের কমিটির সব সদস্যের মনোনয়ন বাতিল করে দেওয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।

ভিকারুননিসার সাবেক সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, এটি দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে অভিভাবকদের সবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তারপরও সাবেক সদস্য হওয়ায় বর্তমান প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা বেআইনি এবং সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তিনি আরও বলেন, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। মনোনয়ন বাতিল করা যৌক্তিক নয়। বাতিলের সুনির্দিষ্ট কারণ প্রকাশ করার আহ্বান জানান তিনি।

নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফৌজিয়া সমকালকে বলেন, গভর্নিং বডির নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তাদের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া। সেটি তারা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কে কী অভিযোগ করল, সেটি নির্বাচন কমিশনের দেখার বিষয়, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নয়।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, শুক্রবার ভিকারুননিসার বেইলি রোড, আজিমপুর, বসুন্ধরা ও ধানমন্ডি শাখায় একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সংরক্ষিত নারী আসনসহ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায় থেকে অভিভাবক প্রতিনিধি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে প্রাথমিক শাখায় ৬, মাধ্যমিক শাখা ৯, কলেজ শাখায় ৮, সংরক্ষিত নারী অভিভাবক পদে ১, কলেজ শাখার শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে ১, স্কুল শাখার শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে ৪ এবং সংরক্ষিত নারী শিক্ষিকা হিসেবে একজন প্রার্থী হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের মার্চে এ প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির নির্বাচন হয়।

ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা :খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটার তালিকা প্রস্তুতে নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের নিয়ম রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি প্রবিধানমালা-২০০৯-এর প্রবিধি ১২ অনুযায়ী, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশের বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। প্রবিধি অনুযায়ী, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ ও শ্রেণিকক্ষে পাঠ করার পর তিন দিনের সময় দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হয়। এই প্রবিধানমালার প্রবিধি ১০ ধারা মতে, স্কুলে কোনো অভিভাবকের একাধিক সন্তান অধ্যয়নরত থাকলেও কেবল এক সন্তানের বিপরীতে ভোটার হওয়া যাবে। কিন্তু ভিকারুননিসায় এ বছর বিপত্তিটি এখানেই ঘটেছে। এক হাজারের অধিক ভোটার আছেন, একাধিক সন্তান অধ্যয়নের সুযোগে যারা ২ কিংবা ৩ বার ভোটার হয়েছেন। এতে নির্বাচনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের একজন অভিভাবক এ ঘটনায় সংক্ষুব্ধ হয়ে নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ১৭ অক্টোবর ঢাকার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছেন। আদালত শুনানি শেষে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন সংশ্নিষ্টদের প্রতি।

ভিকারুননেসার সূত্রগুলো জানায়, আদালত থেকে নোটিশ পাওয়ার পর তড়িঘড়ি করে অধ্যক্ষ ভোটার তালিকা সংশোধন করতে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী সমকালকে বলেন, কিছু বিশেষ প্রার্থীকে নির্বাচনে বিজয়ী করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এমনটা করছে। কেননা তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ভোটার তালিকা সংশোধন সম্পূর্ণ বেআইনি। একাধিক প্রার্থী এবং অভিভাবক এ নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ। তাদের বক্তব্য, ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা দিয়ে গভর্নিং বডির নির্বাচন করা হলে তারা আন্দোলনে নামবেন।

দ্বৈত ভোটার তালিকা নিয়ে অধ্যক্ষ ফৌজিয়া সমকালকে বলেন, এটা নিয়েই একটু ঝামেলায় আছি। আমার যোগদানের আগেই এই ভোটার তালিকা করা হয়েছিল। অনেকে ভোটার তালিকায় দুইবার রয়ে গেছেন। রোববার (আজ) মামলার তারিখ আছে। আমরা আদালতে জবাব দিয়েছি। আদালত যা বলবেন, সেভাবেই সব কিছু হবে।

এ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফারজানা জামান গতকাল শনিবার সমকালকে বলেন, দ্বৈত ভোটার হওয়ার বিষয়টি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়েছি। তিনি একটি কমিটি গঠন করে এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। এখনও এক সপ্তাহ সময় হাতে রয়েছে। নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি আগের কমিটির সাতজনের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন। তারা সাতজন উচ্চ আদালতে পৃথক দুটি রিট করেছিলেন। আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এর বাইরে অন্য কোনো মামলার কথা তার জানা নেই। নির্বাচন না হওয়ার কোনো আশঙ্কা তিনি দেখছেন না।

আরও পড়ুন

×