শ্রদ্ধা নিবেদনে বাধা, পিটুনি মোবাইল তল্লাশি
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন অবরুদ্ধ
কাদের সিদ্দিকীর গাড়ি ভাঙচুর

১৫ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে সেখানে অনেকে বাধা ও মারধরের শিকার হন সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪ | ০১:০৩
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তে সদ্য বাতিল হওয়া জাতীয় শোক দিবস ঘিরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন ছিল কার্যত অবরুদ্ধ। সেখানে আগে থেকে জড়ো হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা অনেকের বিতণ্ডা ও মারামারি হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। অন্তত ১৬ জনকে পুলিশে দেওয়া হয়। অবশ্য পরে তারা ছাড়া পেয়েছেন। সাংবাদিকদের অভিযোগ, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় তাদের বাধা ছাড়াও দুর্ব্যবহার করা হয়।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু ভবনে শ্রদ্ধা নিবেদনে এসে বাধার মুখে পড়েন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী। এ সময় তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। তবে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাতেই প্রশাসন ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের দু’পাশের প্রবেশপথে ব্যারিকেড দেয়। পুলিশ-বিজিবি ছাড়াও মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনীর সদস্য। এর মধ্যেই গতকাল ভোর থেকে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের সব সড়ক ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। তাদের হাতে থাকা লাঠিতে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি বাঁশ ও পাইপ দেখা যায়। তাদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন যানবাহন ও হেঁটে যাতায়াতকারীদের পরিচয় জানতে চান। পরিচয়পত্র ও মোবাইল ঘেঁটে দেখা হয়। বাস থেকে কেউ ভিডিও অথবা ছবি তুলতে গেলে হেনস্তা করা হয়। অবশ্য ৩২ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখে একজন হ্যান্ডমাইকে বলতে থাকেন, ‘দুষ্কৃতকারী কাউকে দেখলে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।
তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিন।’
পূর্ব ঘোষণা দিলেও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কিংবা পদধারী কোনো নেতাকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দেখা যায়নি। সকাল ৭টার দিকে এক নারীসহ চার সংস্কৃতিকর্মী শ্রদ্ধা জানাতে গেলে তাদের নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের সামনে বেঁধে রাখা হয়। কমপক্ষে পাঁচজনকে কলেজের ভেতরে আটকে রাখা হয়। মারধরের শিকার হন অন্তত ১২ জন। সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়া একজনকে মারধরের পর সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কসংলগ্ন ট্রাফিক মোড়ে ভাঙচুর হওয়া একটি গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা যায়। দিনভর অন্তত ১৬ জনকে আটকে রাখা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে করে নিয়ে যান সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। ধানমন্ডি থানা পুলিশ তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
ছবি তোলার সময় দুর্ব্যবহারের শিকার হন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ লিখেছেন, ‘অতীতের মতো ছবি তুলতে বাধা দেওয়ার আগেই সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকতা নিষিদ্ধ করুন।’
কাদের সিদ্দিকীর গাড়ি ভাঙচুর
সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গেলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর গাড়ি ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, সেখানে অনেক উত্তেজিত লোকজন দেখলাম, ছাত্রদের দেখলাম। আমাকে বলেছে, আপনি চলে যান, আমি চলে এসেছি। আমার গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা কিন্তু সুন্দর আচরণ করেছে।
তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রধানতম ভুল ১৬ বছর রাষ্ট্র চালালেও বঙ্গবন্ধুকে দেশের বানাতে পারেননি। শুধু আওয়ামী লীগের বানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কোনো দল, মত, গোষ্ঠী, ব্যক্তি বা পরিবারের হতে পারেন না। দ্রুত পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গঠিত কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান।
বনানীতে শ্রদ্ধা নিবেদন
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাধা পেলেও আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বনানী কবরস্থানে যান। সকাল ৮টার পর থেকে জনশূন্য বনানী কবরস্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মী ধাপে ধাপে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
টুঙ্গিপাড়ায় জনতার স্রোত
গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া প্রতিনিধি জানান, জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় জনতার স্রোত নেমেছিল। সকালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার নেতারা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাব উদ্দিন আজমের নেতৃত্বে জেলা নেতারা শ্রদ্ধা জানান। গোপালগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী বাগেরহাট, নড়াইল ও পিরোজপুর জেলা এবং বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং হাজারো মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবির পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদ জানান তারা।
অন্যান্য সংগঠনের আয়োজন
বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীতে বাংলাদেশ জাসদ দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেছে। পরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মুশতাক হোসেন প্রমুখ।
বিকেলে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী রাজধানীর তোপখানা রোডের সংগঠন কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু স্মরণে আলোচনা সভা করে। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন হাবিবুল আলম, শিবানী ভট্টাচার্য, প্রবীর সরদার প্রমুখ।
- বিষয় :
- ১৫ আগস্ট