বাজেটে কাঠামোগত সংস্কার চায় সংগঠন ‘সেতু’

ডিআরইউর সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এনজিও সংগঠন সেতু। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৫ | ১৬:৩৬ | আপডেট: ০৩ মে ২০২৫ | ১৯:১০
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পর্যলোচনা সাপেক্ষে প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ রাখাসহ বাজেট বাস্তবায়ন এবং পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতকরণে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন আবশ্যক বলে মনে করেন বক্তারা। তারা বলেন, আসন্ন ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
আজ শনিবার দুপুরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) সেতু’র আয়োজনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আসন্ন ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে ‘বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে চাই বাজেটের কাঠামোগত সংস্কার’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সেতুর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল কাদেরের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, এসএ টিভির বিজনেস এডিটর এস এ বাবলু। সভায় ধারণাপত্র পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপনা করেন সেতু’র সমন্বয়কারী সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় তৃণমূল পর্যায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বাজেট অধিবেশনের কমপক্ষে ২ মাস আগে নাগরিক সমাজ ও গণমানুষের মতামতের জন্য বাজেট উম্মুক্ত রাখার পরামর্শ দেন। সম্পূর্রক বাজেট উপস্থাপনের সময় সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা। দরিদ্রবান্ধব বাজেট প্রণয়নে পরোক্ষ কর কমিয়ে আনার প্রতি জোর দেন। কর আহরণে প্রত্যক্ষ করের আওতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। এনবিআরের সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জোর তাগিদ দেন।
সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট কেন্দ্রীভূত এবং আমলাতান্ত্রিক। স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৪ বছরে মূল বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০১৪ গুণ এবং উন্নয়ন বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫২৯ গুণ। সেই বিবেচনায় বাজেটের আকার, উন্নয়ন পরিসীমা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সময়ের আবর্তে বাজেট প্রক্রিয়া কিংবা বাজেটচক্রে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, থেকে গেছে জনগণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাজেট জনগণের জন্য প্রণীত হলেও বাজেট প্রক্রিয়ার জনগণের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে কখনো কখনো কৌশলগত পরিবর্তন হয়েছে সত্য, তবে কাঠামোগত ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার পরিলক্ষিত হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের বাজেটের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বাজেট ঘাটতি। বরাবরের ন্যায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতির ক্রমবর্ধমান ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মোট বাজেটের পরিমাণ ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩২ দশমিক ১ শতাংশ এবং জিডিপি’র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ফলে সরকারকে ঘাটতি বাজেটের অর্থ যোগানের জন্য পরোক্ষকর বৃদ্ধির পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভর করতে হয়। এ কারণে ধারাবহিকভাবে সরকারকে ঋণ পরিশোধে বাড়তি নজর দিতে হয়। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অত্যবশ্যকীয় সেবাখাতসহ অতিপ্রয়োজনীয় খাত থাকছে উপেক্ষিত, বাধাগ্রস্থ হচ্ছে উন্নয়ন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- স্মরণীর নির্বাহী পরিচালক মঞ্জু রাণী প্রামাণিক, বাঁচতে শিখ নারীর ফিরোজা বেগম, বাংলাদেশ কৃষক আন্দোলনের বদরুল আলম ও জায়েদ ইকবালসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা।