লকডাউনে বাড়ছে চলাচল, রাজধানীতে গ্রেপ্তার আরও ১৫২

সর্বাত্মক লকডাউনে রাজধানীর মিরপুর-১৩ নং সেকশনে বেড়েছে মানুষের চলাচল। ছবি : সাহাদাত হোসেন পরশ
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২১ | ০১:৫৭ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২১ | ০৫:২২
সর্বাত্মক লকডাউনের তৃতীয় দিনে রাজধানীজুড়ে মানুষের চলাচল বেড়েছে। এদিন রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে ১৫২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
নানা প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন, তারাও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে বাজার ও দোকানপাটে ভিড় করছেন। মাস্ক পড়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানতে নারাজ তারা।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মো আব্দুল আহাদ সমকালকে জানান, মতিঝিল বিভাগে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৭ ঘন্টায় ১৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তাদের কেউ বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছিল, কারও মুখে মাস্ক ছিল না। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দোকান খুলেছিল অনেকে। যারা বের হয়েছে, তারা নানা অজুহাত দিচ্ছে। নাইটিঙ্গেল মোড়ে একজন পুলিশকে জানায় সে ব্যাংকে চাকরি করে। ব্যাংকে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। আজ ব্যাংক বন্ধের বিষয়টি জানালে সে স্যরি বলে।’
তিনি জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে রাজধানীজুড়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

সরেজমিনে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, কাকরাইল, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, তেজগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত দুদিনের তুলনায় সড়কে যান চলাচল বেড়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় কর্মীরা অফিস পরিবহন, রিকশা বা পায়ে হেঁটে গন্তব্যে গিয়েছেন।
এই এলাকাগুলোর অলিগলিতে দোকানপাট গত দুদিনের তুলনায় বেশিই খুলেছে।সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খোলা ছিল রেস্তোরাঁও। টেকওয়ে সার্ভিসে রেস্তোরাঁ চালু থাকার কথা থাকলেও গলির ভেতরে সে নির্দেশনা মানা হয়নি।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডার একটি রেস্তোরাঁর কর্মী সাকিব সমকালকে বলেন, ‘আমরা রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখতে চাইলেও কাস্টমারগো চাপে খুইল্যা দিতে হইসে। অফিসে যাওয়ার তারা নাস্তা কইরা যায়। প্যাকেটে কইরা খাবার নিয়া তারা খাইবে কোথায়?’

রাজধানীর হাতিরঝিলের রামপুরা পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছিলেন পুলিশ সদস্যরা। তার কিছুটা দূরে মহানগর আবাসিক এলাকার তিন নম্বর গেইটের পাশে বেশকজন যুবককে মাস্ক ছাড়াই ঘুরতে দেখা গেছে।
হাতিরঝিল পয়েন্টে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সার্জেন্ট বলেন, ‘আমরা তো জনগণকে কতভাবে বুঝাচ্ছি, কিন্তু তারা কোনো কথা শুনবে না।মাস্ক থাকলেও হাতে নিয়ে ঘুরবে। এরা মৃত্যুকেও ভয় পায় না।’
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যা ব, আনসার এবং সেনা সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ প্রাইভেটকার থামিয়ে পরিচয়পত্র যাচাই করছিলেন তারা। সত্যতা যাচাই না হলেই গুণতে হচ্ছে জরিমানা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ও কাঁচাবাজারগুলোতে শনিবার মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। পল্টন, মালিবাগ, আজিমপুর, মিরপুর, ধানমণ্ডিসহ রাজধানীর সব প্রধান সড়কে যানবাহনের চাপও বেড়েছে।
নিউ মার্কেট থানার এসআই মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কেউ আইন না মানলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
লকডাউনে রাজধানীতে রিকশা ভাড়াও বেড়ে গেছে বলেও জানালেন কয়েকজন। মগবাজারের বাসিন্দা ইয়াসিন আহমেদ জানান, তেজগাঁওয়ের বউবাজার এলাকা থেকে তেজগাঁও রেলস্টেশন অবধি আসতে তাকে ১২০ টাকা গুণতে হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা গুণতে হয়।
লকডাউনে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন থেমে নেই।
মেরুল বাড্ডার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একজন মোটরসাইকেল চালক সমকালকে বলেন, ‘বাধানিষেধ আছে সেইটা আমিও জানি।কিন্তু পেটে তো ভাত নাই। তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই দূরদূরান্তে যাবেন। সবখানে তো আর রিকশা যাবে না। চেকপোস্টে পুলিশ ম্যানেজ করতে হয় আর কি!’
- বিষয় :
- সর্বাত্মক লকডাউন
- মতিঝিল
- ডিএমপি
- গ্রেপ্তার