মহাত্মা গান্ধী উন্নয়নের মাপকাঠি জিডিপির মধ্যে দেখেননি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২২ | ০৫:০০ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২২ | ০৫:০০
মহাত্মা গান্ধী মনে করতেন দারিদ্রকে উপলব্ধি করতে হলে সেই জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে দুর্বল সবচেয়ে দুস্থ যে, তার জায়গা থেকে তা করতে হবে। এ যুগের উন্নয়নের যে ধারণা তার সঙ্গে এই কথার সাদৃশ্য আছে। উন্নয়নের মাপকাঠি তিনি জিডিপির মধ্যে দেখেননি। গান্ধীজী তার জীবনাচরণের মধ্যে তার আদর্শকে লালন করেছেন এবং একজন অনুকরণযোগ্য প্রেরণার উৎসে পরিণত হয়েছেন। তিনি জীবনবোধের সঙ্গে জীবনাচরণের দ্বন্দ্বকে নিরসন করার একজন প্রতিভূ।
শনিবার মহাত্মা গান্ধীর ৭৪-তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে ‘মহাত্মা গান্ধী স্মারক সদন’ আয়োজনে ‘মহাত্মা গান্ধীর দৃষ্টিতে উন্নয়ন ও পরিবেশ’ শীর্ষক একটি অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডি’র সন্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আলোচনায় আরও অংশ নেন কলকাতার গান্ধী সংগ্রহালয়ের পরিচালক ড. প্রতীক ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গ্রিন ভয়েস-এর প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির।
মূল বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ‘মহাত্মা গান্ধী স্মারক সদন’কে ধন্যবাদ জানিয়ে স্মরন করেন এই সদনের প্রতিষ্ঠাতা সদ্য প্রয়াত লেখক চিন্তাবিদ সৈয়দ আবুল মকসুদকে। ড. দেবপ্রিয় বলেন, গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের অনুরণন আমরা পেয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনে। তারপরেও বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে আত্মপীড়নের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার যে প্রক্রিয়া তা অনুসৃত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গান্ধী মনে করতেন দারিদ্রকে উপলব্ধি করতে হলে সেই জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে দুর্বল সবচেয়ে দুস্থ যে তার জায়গা থেকে তা করতে হবে। এ যুগের উন্নয়নের যে ধারণা তার সঙ্গে এই কথার সাদৃশ্য আছে। উন্নয়নের মাপকাঠি তিনি জিডিপির মধ্যে দেখেননি।
ড. ভট্টাচার্য আরও বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের বিষয়ে যত্নবান হতে তিনি সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন। গান্ধী যখন শিল্পোন্নয়নের, নগরায়নের বিরোধিতা করেছিলেন তা ছিল গঠনমূলক ইতিবাচক সমালোচনা যা প্রকৃত পক্ষে এসবের সীমাবদ্ধতাকে তুলে আনে। গান্ধী ব্যক্তিগত দায়িত্বশীলতাকে খুব গুরুত্ব দিতেন। ঝুঁকি নিয়ে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. আতিউর রহমান বলেন, গান্ধী ছিলেন একজন বহুমাত্রিক মানুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন বৈষম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত কোনো সমাজ শেষ পর্যন্ত টেকসই হতে পারে না। মানুষের প্রতি বঞ্চনা মুক্ত একটি সমাজ তিনি চেয়েছেন তার গ্রামভিত্তিক সমাজে। তার উন্নয়ন ছিল একটি সামগ্রিক উন্নয়ন। শুধু মানুষের আর্থিক উন্নয়ন নয়, ইকোলজিক্যাল ভারসাম্য রক্ষা করে, প্রাকৃতিক সম্পদের সংযমের সঙ্গে ব্যবহার এসবই তিনি চিন্তা করেছেন প্রায় একশ’ বছর আগে।
তিনি বলেন, গান্ধীজী প্রকৃতিকে দেখতেন একটি জীবন্ত সত্তা হিসেবে। আজকের পরিবেশবাদীরা গান্ধীর চিন্তা থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকে। শুধু তাই নয় আজকে টেকসই উন্নয়নের যে ধারণা তা গান্ধীর চিন্তা থেকে অনেকটাই উৎসারিত।
কলকাতার গান্ধী সংগ্রহালায়ের পরিচালক ড. প্রতীক ঘোষ বলেন, গান্ধী চিন্তা করেছেন স্বাবলম্বী বিকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠী যেখানে মানুষ প্রকৃতিকে ধ্বংস না করে প্রকৃতি থেকে সমৃদ্ধ হবে আবার প্রকৃতিকে রক্ষা করবে। যেখানে সমাজের সবাই জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাবে না সেই সমাজ তার কাছে অসত্য, অনৈতিক সমাজ। গান্ধীজী উঁচুমানের জীবন ধারণের বিরোধী ছিলেন তা বললে ভুল হবে। তিনি মনে করতেন উঁচুমানের জীবন সকলের জন্য নিশ্চিত করতে হবে এটাই ছিলো তার প্রত্যাশা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মহাত্মা গান্ধী স্মারক সদনের পক্ষে স্বাগত বক্তব্যে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ বলেন, গান্ধী শুধু একটি জাতি বা একটি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের কথা চিন্তা করেননি, তিনি চিন্তা করেছেন সকলের উন্নয়নের কথা। যে উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় সকলে সম্পৃক্ত হবে, সেখানে পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হবে না। গান্ধী ছিলেন পথিকৃৎ পরিবেশবাদী যিনি উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের প্রশ্নটিকে গুরুত্ব দিয়েছেন।