রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে মানবপাচার করতেন তারা, অবশেষে ধরা

ছবি: সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪ | ২১:৩২ | আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ | ২১:৩২
বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করতে খুলে বসেন রিক্রুটিং এজেন্সি। এর আড়ালেই জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহীম মল্লিক নাহিদ জড়ান মানবপাচারে। ইতোমধ্যে গড়ে তুলেছেন একটি চক্র। তাদের গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে নাহিদসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) টিএইচবি ইউনিট। গ্রেপ্তাররা হলেন– জান্নাত ট্রেডের মালিক ইব্রাহীম মল্লিক নাহিদ। তার সহযোগী শারমিন হোসেন ওরফে লাবণী ও আরিফুর রহমান ওরফে সাদী। তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, ৭টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সিআইডির টিএইচবি ইউনিটের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার শাহজাহান হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ফেসবুকে ‘জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের’ চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয়ে কিরগিজস্তানে যেতে চক্রটির নয়াপল্টন অফিসে যোগাযোগ করেন রাজবাড়ীর রিকশাচালক মোহাম্মদ সোনা মিয়া। তিনি বাড়ির গরু–ছাগল, রিকশা ও জমি বিক্রি করে টাকা জমা দেন। তার মতো এমনভাবে ফরিদপুরের আকাশ শেখ ও আকতার সরদারও টাকা জমা দেন। সর্বশেষ তাদের কিরগিজস্থানের ভিসা ও বিমান টিকিট দেন চক্রটি। স্বপ্নের যাত্রায় বাঁধা পড়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবেশ করতেই। বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায় তাদের ভিসা ও টিকেট ভুয়া। এতে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়।
শাহজাহান হোসেন বলেন, এ ঘটনায় রিকশাচালক মোহাম্মদ সোনা মিয়া নলিয়া ঢাকার পল্টন মডেল থানায় মানবপাচার আইনে একটি মামলা করে। পরে তদন্তে নেমে জানা যায়, আসামীরা ইতঃপূর্বে যেসব অভিবাসী কর্মীকে কিরগিজস্তান পাঠিয়েছে তাদের অধিকাংশই সেখানে মানব পাচারের শিকার হয়েছে। তারা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদিকে তাদের কেউ পাচার করার উদ্দেশে বিমানবন্দর পাঠিয়েছেন।
মানবপাচার আইনে হওয়া মামলার তদন্ত চলছে। এ দিকে তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
কান্না জড়িত কণ্ঠে মোহাম্মদ সোনা মিয়া নলিয়া সমকালকে বলেন, ফেসবুকে তাদের বিজ্ঞাপন দেখে আরও ৮ মাস আগে যোগাযোগ করি। পরে তারা বলেন, তিন মাসের মধ্যে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু এতো দিন পর এসে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে পাচার করার চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, দুই সন্তান, স্ত্রীসহ বাবা–মা ও ছোট দুইকে নিয়ে দিন আনা দিন খাওয়া সংসার। রিকশা চালিয়ে কোনো রকমে পরিবার নিয়ে চলছিল। আজ এজেন্সির ফাঁদে পড়ে পথে বসে গেলাম। বাপের শেষ সহায়–সম্বল বিক্রি করে ৫ লাখ ১২ হাজার টাকা জমা দেয়। বিদেশ গেলে হয়ত পরিবারে জন্য আরও ভালো কিছু করতে পারবো এই আশায় স্বপ্নের পথে পা বাড়ানো।
- বিষয় :
- জনশক্তি রপ্তানি
- মানবপাচার