রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে পারে আইএমএফ

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ | ১০:৪৮
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশকে অন্তত ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখতে হবে। কিন্তু বর্তমানে তা ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা কমানোর অনুরোধ করে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণ পদ্ধতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বাড়তি তিন মাস সময় চাওয়া হয়। ঢাকা সফররত আইএমএফ মিশন সরকারের এ দুটি অনুরোধ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত বাস্তবায়ন ও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত ৪ অক্টোবর সংস্থাটির এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি স্টাফ মিশন ঢাকায় আসে। মিশনটি গত সোমবার পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে। গতকাল মঙ্গলবার স্টাফ মিশন অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আবারও বৈঠক করে।
সূত্র জানায়, সফররত মিশনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ডিসেম্বর নাগাদ রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ২০ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনার অনুরোধ করেছে। প্রতিনিধি দল প্রাথমিকভাবে এ শর্তে ছাড় দেওয়ার সম্মতি দিয়েছে। তবে নতুন লক্ষ্যমাত্রা কত হবে, সে সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে। গতকাল মিশনটি তাদের খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে জানা গেছে।গতকালের বৈঠকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণ পদ্ধতি প্রয়োগের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সার্বিকভাবে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে চায় সরকার। এ জন্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সামনে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় দর নির্ধারণ পদ্ধতির প্রয়োগ পেছাতে চায় সরকার। আগামী মার্চ থেকে চালু করার বিষয়ে নতুন করে আইএমএফকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আইএমএফ মিশন এ প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে সম্মত।
আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ২০২৬ সালের ডিসেম্বর নাগাদ রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র তিন সময়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি নতুন করে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে, যা উদ্বেগজনক মনে করছে মিশন। বিশেষ করে সরকারি ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ২৫ শতাংশের বেশি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রতিনিধি দল। খেলাপি ঋণ দ্রুত কমিয়ে আনতে সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন তারা। এদিকে বর্তমানে ডলারের বিনিময় হার কিছুটা বাজারভিত্তিক করা হলেও তা পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিনিধি দল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক ঋণে সুদহার বাড়ানোর সুপারিশও তারা করেছে।
দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় নিয়ে যা বলল মিশন
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আগামীতে শর্তে কিছুটা ছাড় দিতে সম্মতি দিলেও দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করবে পরিচালনা পর্ষদ বলে জানিয়েছে মিশন। তারা জানান, গত জুন পর্যন্ত শর্ত বাস্তবায়নের ভিত্তিতে দ্বিতীয় কিস্তির প্রায় ৬৬ কোটি ডলার ছাড় হবে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে নভেম্বর নাগাদ পরিচালনা পর্ষদের সম্মতিতে কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু দুটি বড় শর্ত পূরণ করতে না পারায় দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে পরিচালনা পর্ষদের সভায় তা উপস্থাপন করতে হবে। বোর্ড সভার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করবে কিস্তি ছাড়।
আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী গত জুন শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা ছিল। ওই সময়ে নিট রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। আবার ওই সময়ে রাজস্ব আহরণে এনিবআর পিছিয়ে ছিল প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। তবে ইতোমধ্যেই বেশকিছু সংস্কারমূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার আশা করছে কিছুটা দেরি হলেও দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে।