ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশকে পুঁজির কার্যকর ব্যবহার করতে হবে

বাংলাদেশকে পুঁজির কার্যকর ব্যবহার করতে হবে

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৭

মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশকে মানব পুঁজির কার্যকর ব্যবহার করতে হবে। মেধাকে কাজে রূপান্তর করতে হবে। অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সৃষ্টিশীলতা আনতে হবে। অর্থনীতিকে আরও উন্মুক্ত করতে হবে। শুধু মানব পুঁজি নয়, ভৌত পুঁজিরও কার্যকর ব্যবহার করতে হবে।  
গতকাল শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের (এবিসিডি) উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত এস গিল এসব কথা বলেন। তিনি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিল– ‘মধ্যম আয়ের ফাঁদ’। বিআইডিএসের এবারের সম্মেলনের মূল বিষয়– ‘সমতা, সুযোগ, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা’ তুলে ধরেন।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের ফ্ল্যাগশিপ প্রকাশনা ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট-২০২৪-এর এবারের বিষয় ‘মধ্যম আয়ের ফাঁদ’। এ রিপোর্টের অন্যতম প্রণেতা ইন্দরমিত গিল। গতকাল বিআইডিএসের অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে উপস্থাপনায় যুক্ত হন ওই রিপোর্টের পরিচালক সোমিক ভি. লাল। 
উপস্থাপনায় বলা হয়, বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে ৬০০ কোটি। বাহ্যিক পরিস্থিতি তাদের এক কঠিন সময়ের মধ্যে ফেলেছে। তারা সময়ের বিপরীতে লড়াই করছে। ছয় বিলিয়ন মানুষ সময়ের সঙ্গে লড়াই করছে। মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে মুক্তি পেতে দেশগুলোকে দুটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। 
ইন্দরমিত গিল বলেন, মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এখন মোটাদাগে তিন রকম পরিস্থিতি বিদ্যমান। তাদের প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে গেছে। তাদের সম্পদ কম এবং সম্পদের কার্যকর ব্যবহারও কম। বাংলাদেশে একজন শ্রমিকের গড় উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ৯ শতাংশ। পাকিস্তান ও ভারতে এ হার যথাক্রমে ১৩ ও ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশের ভৌত এবং মানব পুঁজির উৎপাদশীলতা যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮ শতাংশ। পাকিস্তানে এ হার ৩২ শতাংশ এবং ভারতে ৬১ শতাংশ। 

তিনি বলেন, মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে উৎপাদনশীল কারখানাগুলো অনেক ক্ষেত্রে সম্প্রসারণে যেতে পারছে না। আবার অদক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার থেকে বের হয়েও যায় না। এটি একটি কাঠামোগত সমস্যা। জ্বালানির ব্যবহারেও অদক্ষতা রয়েছে। তাদের কার্বন নির্গমনের হারও বেশি। তিনি বলেন, বিনিয়োগ, উৎপাদন এবং উদ্ভাবনের পরিবর্তন আনতে হবে। মধ্যম আয়ের স্তর দ্রুত অতিক্রম করতে হলে বিদ্যমান কাঠামোতে শৃঙ্খলা আনতে হবে। অর্থনীতি পরিশীলিত করতে হবে। 
এক প্রশ্নের উত্তরে ইন্দরমিত গিল বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করতে হবে, বিশেষ করে যখন বিনিয়োগ-নির্ভর পর্যায় থেকে উৎপাদননির্ভর পর্যায়ে স্থানান্তরিত হয়েছেন। বাংলাদেশকে আরও বেশি উন্মুক্ত হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মধ্যম আয়ের আরও অনেক দেশ রয়েছে। কিন্তু তারা তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের দিক থেকে আলাদা। আমরা দেখেছি বৈষম্য সামান্য বেড়েছে। তবে এটি খুব বেশি গুরুতর নয়, যদি আর্থসামাজিক গতিশীলতা বাড়তে থাকে। আবার যদি আর্থসামাজিক গতিশীলতা কমে যায়, তবে বৈষম্য বাড়ুক বা কমুক, তা কোনো গুরুত্ব বহন করে না।  
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ শুধু এটাই দেখছে, জ্বালানি কোথা থেকে আসছে– নবায়নযোগ্য খাত থেকে, নাকি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। এটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশ জ্বালানি থেকে উৎপাদন করতে কতটা দক্ষ। যদি দক্ষ না হয়, তাহলে এটি বোঝায়, মাথাপিছু উৎপাদনের তুলনায় কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অনেক বেশি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বৈষম্যের ওপর বিশেষ বক্তব্য দেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান পরের সেশনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের ওপর গণবক্তৃতা দেন। 
উদ্বোধনী বক্তব্যে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন সম্মেলনের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বৈষম্যের বিষয়টিকে জনমানুষের সামনে এনেছে। বাংলাদেশে বৈষম্য বাড়লেও তা কখনও নীতি চিন্তায় কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে গুরুত্ব পায়নি। 

আরও পড়ুন

×