ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

দ্রুত ড্যাপ সংশোধন চান ব্যবসায়ীরা

দ্রুত ড্যাপ সংশোধন চান ব্যবসায়ীরা

কোলাজ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৪ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৮

নিজের একটা ফ্ল্যাট থাকবে– এমন প্রত্যাশা অনেকের। সবার প্রত্যাশা পূরণ না হলেও খোঁজখবর নিতে তো বাধা নেই। এমন চিন্তা-চেতনা থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থী ভিড় জমিয়েছেন আবাসন খাতের বার্ষিক আয়োজন রিহ্যাব মেলায়। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল পাঁচ দিনব্যাপী মেলার চতুর্থ দিন।

এবারের মেলায় বেশ সাড়া মিলেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রির পরিসংখ্যান জানা না গেলেও মেলায় অংশ নেওয়া কয়েক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন ছাড় ও অফার দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। ফলে রেডি ফ্ল্যাট কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি বুকিংও দিচ্ছেন ক্রেতারা। কেউ কেউ নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে দিচ্ছেন। আবার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকল্প কোথায় কোথায় চলমান, সেই খোঁজখবরও নিচ্ছেন।

মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গত বছর জাতীয় নির্বাচনের কারণে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই এক বছর বাদ দিয়ে এবার মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর মধ্যে বেশ আগ্রহ রয়েছে। তাতে মেলার মাধ্যমে আবাসন খাতের অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন তারা।  

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মেট্রোরেল থাকায় উত্তরার দিকে ফ্ল্যাটের চাহিদা এবার বেশি। আবার দামের কারণে মিরপুরের দিকেও ফ্ল্যাট খুঁজছেন কেউ কেউ। তবে ড্যাপ সংশোধন হলে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াবে। আজ শেষ এবং ছুটির দিনে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করেন তারা। 
রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান সমকালকে বলেন, নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) কারণে মূল ঢাকায় ভবনের উচ্চতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ভবনের উচ্চতা বা ফ্ল্যাটের সংখ্যা কমে যাবে। এ কারণে আবাসন প্রকল্প অনুমোদন নিচ্ছে না অনেকেই। এ জন্য অ্যাপার্টমেন্টের সরবরাহে বেশ সমস্যা হচ্ছে। 

দ্রুত ড্যাপ সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জমির মালিক ও আবাসন ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, প্রস্তাবিত ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধিত হয়ে আসবে। রাজউক চেয়ারম্যান গত ২৩ ডিসেম্বর রিহ্যাব ফেয়ারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে ড্যাপ সংশোধন করা হবে। সবাই সেদিকে তাকিয়ে আছে। তবে স্বার্থান্বেষী একটি মহল চায় না ড্যাপে সংশোধনী আসুক। সে জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা-তদবির করছেন। রিহ্যাব সভাপতি বলেন, নতুন বিতর্কিত ড্যাপের কারণে ঢাকার জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হুমকির মুখে আবাসন ব্যবসাও। আবাসন খাত ভবিষ্যতে ব্যবসা করে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে কিনা, সেটি ড্যাপ সংশোধনের ওপর নির্ভর করছে। উচ্চমূল্যের কারণে মধ্যবিত্তের জন্য ঢাকায় অ্যাপার্টমেন্ট কেনা আসলেই কঠিন বলে মনে করেন ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই ২৫-৩০ বছরের জন্য গৃহঋণ দেওয়ার জন্য মর্টগেজ করপোরেশন রয়েছে। ৩০ শতাংশ অর্থ দিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট কিনে মর্টগেজ করপোরেশনে আবেদন করে। তারপর গ্রাহকরা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পায়। এ ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ, বাংলাদেশেও এমন ব্যবস্থায় যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, অ্যাপার্টমেন্টে ঋণ দেওয়া সব সময় ঝুঁকিমুক্ত। 

রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশে আবাসন খাত বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি। এ খাত ঠিকমতো না চললে ২২০টি সংযোগ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ইট, বালু, রড, সিমেন্ট, টাইলস, তার, লিফট ও ফিটিংস উল্লেখযোগ্য। ভবন নির্মাণ না হলে এরা ব্যবসা করবে কোথায়? আবাসন খাতের অবস্থা খারাপ হলে এসব প্রতিষ্ঠানেরও অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এ ছাড়া ড্যাপের ফ্লোর এরিয়া রেশিওর কারণে আবাসন খাত ব্যাপক সংকটে পড়েছে। এটার যৌক্তিক সমাধান দরকার।

এ ছাড়া নিবন্ধন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে আবাসন খাতে ক্রেতারা নিবন্ধন করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে মনে করেন লিয়াকত আলী ভূঁইয়া। তাঁর মতে, বর্তমানে গৃহঋণও অপ্রতুল। শুধু বেতনের অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব নয়। এ জন্য অবশ্যই গৃহঋণ দরকার। গৃহঋণ সহজ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। রিহ্যাব থেকে অনেক দিন ধরে ১০ হাজার বা ২০ হাজার কোটি টাকার একটা প্যাকেজ ঋণের কথা বলা হচ্ছে। ২০০৯ সালে সরকার একবার শুরু করলেও সেটা পরে বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় অনেক স্বল্প ও মধ্যবিত্ত নাগরিক ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন এই ঋণের মাধ্যমে। আবার এ ঋণ চালু করলে আবাসন খাতের পরিস্থিতির উন্নতি হবে। পাশাপাশি পূরণ হবে অনেকের স্থায়ী আবাসনের স্বপ্ন। 
এদিকে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব ফেয়ারের পর্দা নামছে আজ রাত ৯টায়। গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিআইসিসিতে শুরু হয়েছে এ মেলা। 

আরও পড়ুন

×