পাঁচ ইসলামী ব্যাংক এক করতে সাড়ে তিন মাসের রোডম্যাপ

ছবি: ফাইল
ওবায়দুল্লাহ রনি
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫ | ০১:৪৬
বেসরকারি খাতের পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্যাংক করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী জুলাই থেকে শুরু করে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ করার একটি রোডম্যাপ ঠিক করা হয়েছে। এই সাড়ে তিন মাসে ব্যাংকগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে বিভিন্ন তথ্য যাচাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচটি টিম কাজ করবে। টিমে ব্যাংকগুলো থেকেও যোগ্য লোক দেওয়া হবে।
একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো– সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও এক্সিম। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকও একীভূতকরণের আলোচনায় ছিল। তবে ব্যাংকটিতে বিদেশি মালিকানা থাকায় এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গতকাল গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করে একীভূতকরণের সাড়ে তিন মাসের রোডম্যাপ ঠিক করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণের বিষয়টি জানানো হয়েছে। কীভাবে একীভূতকরণ করা হবে সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপ শেষে ব্যাংকগুলোকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই ব্যাংকগুলোর এমডিদের চুক্তি বাতিল হবে। আর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বাছাই করা সদস্যসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি পর্ষদ গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্বিক দিকনির্দেশনায় ব্যাংকগুলো পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত জানুয়ারিতে এসব ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের (একিউআর) জন্য দুটি আন্তর্জাতিক অডিটর নিয়োগ দেয়। সেই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য আমানতকারীর আস্থা পুনরুদ্ধার এবং আর্থিক খাতে জঞ্জাল দূর করার মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরানো। দুর্বল ব্যাংক নিষ্পত্তি করা হবে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুযায়ী। অবশ্য জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসের মধ্যে কোনো ব্যাংক যদি সরকার থেকে নেওয়া বিশেষ ধারের টাকা ফেরত দিয়ে নিজেরা চলতে পারে তখন ওই ব্যাংক চাইলে একীভূতকরণ থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে।
বৈঠকে উত্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, সমস্যাগ্রস্ত এই ৫টি ব্যাংকের মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। যেখানে ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। একিউআর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ খেলাপি। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
বৈঠকে বলা হয়, পাঁচটি ব্যাংক মিলে একটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক গঠন করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য। মালিক পক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চরম দুরবস্থায় পড়লেও এসব ব্যাংকের আশার দিক হিসেবে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সারাদেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। যে কারণে কোনো ব্যাংক থেকে কাউকে ছাঁটাইয়ের দরকার হবে না। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ পাওয়াদের নতুন করে যোগ্যতা যাচাই করা হবে। আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের জন্য ঋণ আদায় জোরদার এবং সরকার থেকে কয়েক ধাপে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া একই এলাকায় একাধিক শাখা থাকলে তা অন্য জায়গায় স্থানান্তর এবং কিছু শাখা বন্ধ করা হবে।
ইসলামিক ব্যাংকস কনসালটেটিভ ফোরাম এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান সমকালকে বলেন, পাঁচটি ব্যাংক একত্রিত করে শক্তিশালী একটি ইসলামী ব্যাংক করা হবে। আমানতকারীর সুরক্ষা দেওয়া এ উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য। ব্যাংক খাতের জন্য যা ইতিবাচক।
জানা গেছে, প্রত্যেক আমানতকারীর অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা দিলেও অধ্যাদেশের আলোকে আগামী ১৫ অক্টোবরের পর প্রথমে এসব ব্যাংকের শেয়ার শূন্য করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাংকগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে। এ সময়ে প্রতিটি ব্যাংকের খারাপ সম্পদ ও ভালো সম্পদ আলাদা করা হবে। ভালো সম্পদ এক ছাতার নিছে এনে ব্রিজ ব্যাংকের অধীনে দেওয়া হবে।
- বিষয় :
- বাংলাদেশ ব্যাংক