লুট হওয়া অর্থনীতিকে টেনে তুলতে বেগ পেতে হচ্ছে

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫ | ০০:৫৬
অর্থ সংকটসহ নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মাঝে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশ চালাতে হচ্ছে। লুট হওয়া অর্থনীতিকে টেনে তুলতে বেগ পেতে হচ্ছে। এর মধ্যে স্বল্প সময়ের দায়িত্বে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য অনুসরণীয় কিছু নমুনা রেখে যাচ্ছে সরকার।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাজেট বিতর্ক: প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অন্তর্বর্তী কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
ফাওজুল কবির খান বলেন, সংকটময় পরিস্থিতিতে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যেই বাজেট ঘোষণা করতে হয়েছে। বহু বছর ধরে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট হয়েছে। দুর্নীতি, অপচয় ও অদক্ষতা এখানে মূল সমস্যা। এখন প্রয়োজন সামগ্রিক সংস্কার, তা না হলে প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি বড় প্রতিবন্ধকতা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাই একমত কিন্তু কেউ তা বন্ধ করতে চায় না।
তিনি জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর জ্বালানি খাতে ৩ বিলিয়নের বেশি ডলার বকেয়া নামিয়ে আনা হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়নে। সময়মতো পরিশোধ করায় এলএনজির দামও কমেছে। আগে প্রতি ইউনিট ১৬ থেকে ১৭ ডলার ছিল। এখন তা ১২ ডলারে এসেছে।
উপদেষ্টা বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নেওয়া হয় ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। অথচ বেসরকারি কেন্দ্র থেকে ১৩ টাকার বেশি দরে কেনা হচ্ছে। আগের সরকার প্রতি দুই মাসে একবার দাম সমন্বয়ের নীতি নিলেও অন্তর্বর্তী সরকার গত ১০ মাসে একবারও দাম বাড়ায়নি।
উপদেষ্টা বলেন, বাসা ও কারখানার ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে; যা বাস্তবায়ন করা গেলে গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমবে। গ্যাস আমদানিতে সরকার বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে। ৬৫ টাকা দরে গ্যাস কিনে শিল্পে ৩০ টাকায়, বিদ্যুতে ১২ টাকা এবং সারে ১৬ টাকায় সরবরাহ করছে। ভর্তুকি কমাতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো গেলে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। আর জাতীয় গ্রিডেও উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ যোগ করা যাবে।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, আপাতদৃষ্টিতে অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট গতানুগতিক মনে হলেও এটি দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। বিএনপি নেতা ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, আমলা ও ব্যবসায়ী শ্রেণি মিলেই রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করেছে। প্রকৃত উদ্যোক্তাদের সুযোগ কমে গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার সংস্কারের কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, বিনিয়োগের জন্য উদ্ভাবনের সংযোগ ঘটাতে হবে বাজেটে। আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া রাজস্ব বৃদ্ধি দুর্নীতি ও অদক্ষতা বজায় রাখার মাধ্যম হয়ে উঠবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অতনু রব্বানী প্রশ্ন রাখেন, সরকারি সেবা নিতে যদি ঘুষ দিতে হয়, তাহলে জনগণ কর দিতে আগ্রহী হবে কেন?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান বাজেটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, সরকারি তথ্যের স্বচ্ছতা ও নাগরিক নিরাপত্তার অভাব এ প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, করনীতি হতে হবে বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক ন্যায্যতার সহায়ক।
বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. জুলফিকার আলী জানান, শিক্ষা খাতে বাজেটের অগ্রাধিকার কমছে। শিক্ষার মানও আশঙ্কাজনক। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়তেও পারছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সায়মা হক বিদিশা বলেন, ১৬ থেকে ২৯ বছর বয়সী ৪৩ শতাংশ তরুণ এখন কর্মে বা পড়াশোনায় নেই, যা ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
- বিষয় :
- অর্থনীতি