ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

সা ক্ষা ৎ কা র

মাত্র ৫ দিনে দাবি পরিশোধ করছি

মাত্র ৫ দিনে দাবি পরিশোধ করছি

শেখ রকিবুল করিম, সিইও (চলতি দায়িত্ব), গার্ডিয়ান লাইফ

--

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ | ০২:১০

সমকাল : দেশে অনেক বীমা কোম্পানি আছে। এ অবস্থায় গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স বীমা খাতে নতুন কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশের কারণ জানতে চাই।
শেখ রকিবুল করিম :এ প্রশ্ন অনেকের। কেউ কেউ ভাবেন, বাংলাদেশ একটা ছোট্ট দেশ। দেশের তুলনায় বীমা কোম্পানি অনেক বেশি। এ কথা সর্বাংশে ঠিক নয়। কারণ আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ ছোট হলেও জনসংখ্যার দিক বিবেচনায় অন্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক বড় দেশ। ফলে যে কোনো বিবেচনায় বাংলাদেশ বড় বাজার। আবার এখানকার মানুষের আয় এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। ঠিক এমন একটি বাজারই বীমা খাতের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত। বাস্তবতা হচ্ছে, বীমা শিল্পে মানুষের অংশগ্রহণ খুবই কম, মাত্র ২ শতাংশ। অনেক বীমা কোম্পানি থাকার পরও বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে এখনও বীমার আওতায় আনা যায়নি। এর কারণ প্রথমত অসচেতনতা, যা কমাতে এখন সরকার এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করছে। প্রতি বছর ১ মার্চ বীমা দিবস হিসেবে পালন করছে।

সমকাল :শুধু অসচেতনতাই কী মানুষের বীমার প্রতি অনাগ্রহ?
শেখ রকিবুল করিম :এটা প্রধান একটা কারণ। তবে একমাত্র কারণ নয়। কিছু কোম্পানির বীমা সেবা প্রদানে পেশাদার আচরণ করছেন না বলে অনেকের অভিযোগ। বিশেষত বীমার প্রিমিয়াম দিয়েও সময়মতো বীমা দাবি পাওয়া নিয়ে গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন- এটি সাধারণ অভিযোগ। এর সত্যতা কিছুটা হয়তো আছে, যা অস্বীকার করার উপায় নেই।

সমকাল : পুরোনো কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে আপনারা কীভাবে এগোচ্ছেন?
শেখ রকিবুল করিম :গার্ডিয়ান লাইফের ব্যবসার মূলমন্ত্র হলো- গ্রাহক সেবা। স্বল্প খরচে সবার জন্য সাধ্যের মধ্যে বীমা সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এ কোম্পানির প্রধান লক্ষ্য। এ কারণে প্রতিষ্ঠার আট বছরেই গার্ডিয়ান লাইফ এ খাতের প্রথম ১০ কোম্পানির একটিতে পরিণত হয়েছে। বীমা দাবির আবেদন পাওয়ার মাত্র পাঁচ দিনেই গার্ডিয়ান লাইফ তা পরিশোধ করছে। গত বছর করোনাভাইরাস মহামারিতে তিন দিনের মধ্যে বীমা দাবি পরিশোধ করেছি। এটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ছিল। কিন্তু এটা আমরা নিশ্চিত করেছি এবং ভবিষ্যতেও করব। গত বছর গার্ডিয়ান লাইফের প্রিমিয়াম আয় ছিল ৩৪৭ কোটি টাকা, সেখানে ২৫০ কোটি টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করেছে।

সমকাল : সবার জন্য সাধ্যের মধ্যে বীমা সেবা নিশ্চিত কীভাবে করছেন?
শেখ রকিবুল করিম : আমাদের বেশিরভাগ মানুষের আয়-উপার্জন কম। যতটুকু আয় করেন, তা প্রাত্যহিক জীবন-নির্বাহ করতে খরচ হয়। ফলে এসব মানুষ বীমা করা বাড়তি খরচ বলে মনে করেন। এ অবস্থায় গার্ডিয়ান লাইফ স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এমন কিছু বীমা পণ্য এনেছে, যার মাধ্যমে খুবই কম খরচে বীমা সুবিধা নিতে পারেন। যেমন- দরিদ্র মানুষ নানা প্রয়োজনে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে থাকেন। এদের কেউ ঋণ পরিশোধের আগেই মৃত্যুবরণ করলে তার দরিদ্র পরিবার সংকটে পড়ে। তাদের ঋণের কিস্তির সঙ্গে প্রতি হাজারে মাত্র তিন টাকায় একটি বীমা পণ্য চালু করেছি, ফলে ওই গ্রাহক মারা গেলেও ঋণ পরিশোধ করতে হবে না। উল্টো কিছু টাকা পাবেন। এভাবে এক কোটির বেশি মানুষকে বীমার আওতায় এনেছি। আবার স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বীমা পলিসি আনতে যাচ্ছি। যেখানে শিক্ষার্থী স্কুলের টিউশন ফির সঙ্গে অতিরিক্ত পাঁচ বা ১০ টাকা প্রিমিয়াম দেবে। এ পলিসির সময়কালে তার অভিভাবক মারা গেলে বা কর্মক্ষমতা হারালে তার শিক্ষার ব্যয় বহন করবে গার্ডিয়ান লাইফ। এভাবে প্রান্তিক মানুষের জন্য বীমা পলিসি আনার চেষ্টা চলছে। গার্মেন্ট বা চামড়া শিল্পসহ এমন সব শিল্পের শ্রমিকের জন্য বিশেষ বীমা পলিসির চিন্তা আছে। তবে প্রচলিত বীমা পলিসিও করছি।

সমকাল :খুবই কম প্রিমিয়ামে বড় বীমা সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ টেকসই হচ্ছে?
শেখ রকিবুল করিম :এখন পর্যন্ত খুবই ভালোভাবে পারছি। সমস্যা হলে শুরুতেই হতো। ব্যবসার বয়স যত বাড়ছে, ততই এ ঝুঁকি কমছে। কারণ সেবা দিয়ে বীমাগ্রহীতাদের আস্থা অর্জন করছি। অন্য দিকে লাইফ ফান্ডের টাকা ভালো মাধ্যমে বিনিয়োগ করছি। গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান উদ্যোক্তা হলো- এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক, অন্যতম শিল্পগ্রুপ স্কয়ার এবং এপেক্স। এসব প্রতিষ্ঠান শুধু ব্যবসা নয়, মানুষের সেবায় এবং জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। গার্ডিয়ান লাইফ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যও একই- প্রথমে মানবসেবা, পরে ব্যবসা। এটি যেহেতু একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সেহেতু ব্যবসার লক্ষ্য তো থাকবেই। কিন্তু সততার সঙ্গে, গ্রাহকদের পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মানসম্পন্ন সেবা প্রদান করেও যে বীমার ব্যবসা করা যায়, সেই ধারা প্রতিষ্ঠাই গার্ডিয়ান লাইফের উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুন

×