ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

অন্যদৃষ্টি

ভর্তুকি প্রত্যাহারে সমাধান নেই

ভর্তুকি প্রত্যাহারে সমাধান নেই

আতাতুর্ক কামাল পাশা

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ | ২১:৪৫

লাফিয়ে লাফিয়ে বিদ্যুৎ আর গ্যাসের দাম বাড়িয়েই চলছে সরকার। মনে করা হচ্ছে, ভর্তুকির পরিমাণ কমানোর জন্য দাম বাড়ানো হলে ঘাটতি কমে আসবে। এটি সত্য, কোনো সরকার ভর্তুকি দিয়ে কোনো পণ্য দীর্ঘদিন দেশের মানুষের হাতে তুলে দিতে পারে না। অর্থনীতির ভাষা এবং বাস্তবতাও তাই বলে। একইভাবে কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাময়িক সংকট কাটানো যেতে পারে কিন্তু কোনোদিন স্থায়ী সমাধান আসে না। দেশের জিডিপি এবং অন্যান্য অনুষঙ্গ না বাড়ালে সংকট সংকটের স্থানেই থেকে যায়।

আমাদের দেশে বছরজুড়ে বিদ্যুৎ আর গ্যাসে সরকার লোকসান দিয়েই চলছে, বারবার এ কথা বলছে সরকার। তাই বিশ্বব্যাংক এবং আরও কিছু মানুষের পরামর্শে কখনও বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, কখনও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব পণ্যের দাম বাড়ায় সরকার। কিন্তু কতদিন এ দাম বাড়বে? ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দাম বাড়িয়ে দিলেই কি লোকসান মেটানো যাবে? বা, কোনো কোনো সময় অন্য খাত থেকে ধার করে এনে এখানে ভর্তুকি দিলেই কি স্থায়ী কোনো সমাধান আসবে?

কয়েকদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানেই বিদ্যুতের বিল বকেয়া পড়ে আছে ৩৮৩৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকারের অনেক আবাসন, ন্যাম ভবন, আরও কিছু দপ্তরে মাসের বিল মাসেই দেওয়া হচ্ছে না। এই যে বিশাল বড় বোঝা, তা হ্রাস করার জন্য কি বিদ্যুৎ বা গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে? কখনও তা হবে না, বরং ঋণের বোঝা বা পাওনা আরও বেড়ে যাবে।

যে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রশাসকরা তাদের নিজের ব্যবহৃত দ্রব্যের দাম পরিশোধ করে না, সে দেশ কীভাবে চলবে? এ কারণে, সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, দেশের প্রতিটি সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তর বা সরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসের বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের বিল ঠিকমতো এবং নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে। এ মাসের একটি তথ্যে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কাছে পাওনা ৩৮৩৭ কোটি টাকা। বিষয়টি কিন্তু আদৌ অবহেলার নয়। এত বিশাল পরিমাণে অনাদায়ী বিল পড়ে থাকলে রাষ্ট্রীয় খাতগুলো মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।

সরকারের ক্রমাগত বিদ্যুৎ আর গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ এসে যায়। ছোটবেলায় আমরা পাটিগণিতে একটি অঙ্ক করেছিলাম, একটি চৌবাচ্চায় একটি পাইপ দিয়ে পানি আসে আর দুটি পাইপ দিয়ে পানি চলে যায়। চৌবাচ্চাটি পূর্ণ হয়, কিন্তু বেশ দেরিতে। সবচেয়ে যুৎসই হয়, পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞানের একটি প্রশ্নে। প্রশ্নটি ছিল, একটি জাহাজ গ্রীষ্মকালে পানি কম থাকলে, পানির গভীরতা ১০ ফুট থাকলে সেটি পানির নিচে থাকে চার ফুট। বর্ষাকালে পানি বেড়ে যখন পানির গভীরতা ২০ ফুট হবে, তখন জাহাজটির কতটুকু অংশ পানির নিচে থাকবে? উত্তরটি চিন্তা করতে আমাদের মাথার ঘাম ছুটে যেত। কিন্তু উত্তরটি খুবই সোজা, পানি যতই বাড়বে, সমউচ্চশীলতার কারণে জাহাজটিও পানির ততই ওপরে ভেসে উঠবে।

এভাবে হিসাব করলেও বলা যায়, বিদ্যুৎ বা গ্যাসের বিল যতই বাড়ানো হোক, বড় বড় সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানায় ব্যবহার করা জ্বালানির বিল নিয়মিত পরিশোধ করা না হলে সারা বছরই বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসান দিতে থাকবে, সাধারণ মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে বিল পরিশোধ করলেও একটি বড় অংশ অপরিশোধিত থাকবে এবং তাতে রাষ্ট্রের দুর্ভোগ বেড়ে যাবে।

আমরা চাই, সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর চিন্তা পরিহার করে বরং সব ভোক্তার কাছ থেকে এগুলো ব্যবহারের অর্থ নিয়মিত প্রতি মাসে আদায় করার কাজে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।

আতাতুর্ক কামাল পাশা : সাংবাদিক

আরও পড়ুন

×