ঢাকায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা
সিটি করপোরেশনের নিদ্রা ভাঙিবে?

প্রতীকী ছবি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫ | ০০:৪১
রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সম্পর্কে মঙ্গলবার সমকালের প্রতিবেদনে যেই আশঙ্কা প্রকাশ হইয়াছে, তাহা সরকারের নীতিনির্ধারকদিগের জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনায় লওয়া উচিত বলিয়া আমরা মনে করি। প্রতিবেদনমতে, যেইখানে আবহাওয়া অফিস বলিয়াছে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীসহ সমগ্র দেশে ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রহিয়াছে, এক দিনে এমনকি শতাধিক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হইতে পারে; সেইখানে বর্ষা মৌসুম সম্মুখে রাখিয়া অতীতে রাজধানীতে যেই সকল সংস্কার কাজ হইত, এইবার তাহার কিছুই হয় নাই। বিশেষত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এইবার খাল, বক্স কালভার্ট ও উন্মুক্ত ড্রেনের আবর্জনা পরিষ্কারের ন্যায় রুটিন কাজগুলিও করে নাই। দুই মাস ধরিয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উন্নয়নমূলক সকল কার্যক্রম বন্ধ। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) চলিতেছে লেজেগোবরে অবস্থা। উভয় সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় তাগিদ দিবারও কেহ নাই।
আমরা জানি, রাজধানীতে ড্রেন রহিয়াছে দুই সহস্রাধিক কিলোমিটার। উন্মুক্ত ড্রেনগুলি দিয়া পানি প্রথমে বক্স কালভার্টে প্রবেশ করে, পরে খাল বা নদীতে চলিয়া যায়। খাল, উন্মুক্ত ড্রেন, পাইপ ড্রেন ও বক্স কালভার্টের অধিকাংশ এখনও আবর্জনায় পূর্ণ। ফলে যেই নগরীতে সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা, সেইখানে ভরা বর্ষায় ভারী বৃষ্টি হইলে অবস্থা আরও সঙ্গিন হইতে পারে। নগরবাসীর জন্য ইহা নিঃসন্দেহে বড় দুঃসংবাদ। জলাবদ্ধতা রাজধানীবাসীর নিকট অতি পুরাতন সমস্যা। অতএব, ইহার দুর্ভোগ সম্পর্কে নূতন করিয়া কিছু বলিবার নাই। স্বল্প সময়ের বৃষ্টিতেও এখানকার বহু সড়ক পানির নিচে চলিয়া যায়। তখন সড়কে চলাচল এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা লইয়া আসে। খানাখন্দে পড়িয়া আহত হইবার, নিদেনপক্ষে পরিহিত বস্ত্র নোংরা-ময়লা হইবার পাশাপাশি যানজট তীব্রতর রূপ পরিগ্রহ করে। বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সহিত বাড়িঘরেও পানি ঢুকিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও পরিবারের সমূহ ক্ষতির কারণ হইয়া দাঁড়ায়।
মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বাধাহীন দখল-দূষণ এবং বিজ্ঞানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতিতে দুর্বল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণেই চার শতাধিক বৎসরের এই ঢাকা শহর অদ্যকার দুরবস্থায় পতিত, আমরা জানি। আবার ইহাও জানি, পরিকল্পনাবিদগণ মনে করেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নিদেনপক্ষে খাল, নর্দমার বৃহৎ উন্নয়ন আবশ্যক। অনেকেরই স্মরণে থাকিবার কথা, এই উদ্দেশ্য সাধনেই ২০০০ সালে প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বলিয়া পরিচিত রাজধানীর খালসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার পরিবর্তে দুই সিটি করপোরেশনের উপর ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে উন্নতি যে আশাব্যঞ্জক ঘটে নাই– তাহা প্রতিবেদনেই সুস্পষ্ট।
বিস্ময়কর হইল, ঢাকা ওয়াসার খাল ও ড্রেনেজ সার্কেলে প্রায় তিনশত জনবল নিযুক্ত থাকিলেও দুই সিটি করপোরেশনে বিশেষত খালগুলি রক্ষণাবেক্ষণে কোনো জনবল অদ্যাবধি নিয়োগ করা হয় নাই। এমনকি সিটি করপোরেশনে জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাও নাই। অন্যদিকে বর্তমান সরকার রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কালুনগর, হাজারীবাগ, শ্যামপুর ও জিরানি খালের যে আধুনিকায়নের উদ্যোগ লইয়াছিল, তাহাও ভ্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনার (ডিপিপি) কারণে বন্ধ। তদুপরি ধোলাইখাল, মানিকনগর, হাতিরঝিল, কল্যাণপুর ও মিরপুর চটবাড়ি পাম্প স্টেশনের পানি নিষ্কাশনের অর্ধেক পাম্পই বিকল।
প্রতিবেদনে দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ হইতে উক্ত বিষয়ে যেই বক্তব্য প্রদান করা হইয়াছে, উহাতে আশ্বস্ত হইবার উপাদান নাই। ডিএসসিসির জলাবদ্ধতা নিরসন কার্য সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সমস্যাটির জন্য জনবল সংকটকে দায়ী করিয়া নিজেকে পরিত্রাণের পন্থা খুঁজিয়াছেন। ডিএনসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলিয়াছেন, যেই সকল স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হইতে পারে, সেইগুলি চিহ্নিত করিয়া ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলমান। আমরা মনে করি, স্থানীয় সরকার বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ ব্যতীত এই অচলাবস্থা নিরসনের কোনো সম্ভাবনা নাই। জনস্বার্থে তাহারা বিষয়টি বিবেচনা করিবেন, এই আমাদের প্রত্যাশা।
- বিষয় :
- সম্পাদকীয়