কৃষি ও কৃষকের বন্ধু

শাইখ সিরাজ
রুমন রেজা
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:০০
কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। কৃষি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। জনবহুল এই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কৃষি। কৃষির সঙ্গে অনেক শিল্পের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও কৃষির ভূমিকা অগ্রগণ্য। কৃষি চেতনাকে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশে ছড়িয়ে দিয়ে কৃষির অফুরন্ত শক্তি, সম্ভাবনা ও সামর্থ্যকে জাগিয়ে তোলার এক অসাধারণ আয়োজনে নিজেকে নিবেদন করেছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। চার দশক ধরে টেলিভিশন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশজুড়ে তার অবিরাম ছুটে চলা। কৃষিকে গণমানুষের ভাবনায় যুক্ত করার ক্ষেত্রে তার নিরলস, সৃজনশীল ও বহুমাত্রিক কর্ম-প্রয়াস তাকে শুধু কৃষি সাংবাদিকতা নয়, বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে এক শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
শাইখ সিরাজের ভাবনাজুড়ে আছে কৃষি। কৃষিকে ঘিরে তার সমস্ত আয়োজন। তার সমস্ত কর্ম-আয়োজনে কৃষিকেন্দ্রিক সমৃদ্ধ, শানিত, পরিশীলিত চিন্তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সত্তর দশকের শুরুর দিকে যখন তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র তখন থেকেই কৃষিকে ঘিরে টেলিভিশনের সঙ্গে সংশ্নিষ্টতা তার। আশির দশকে বিটিভিতে কৃষিস্বাস্থ্যসহ উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ শুরু হলেও এই ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য আগ্রহী মানুষের খোঁজ পাওয়া ছিল কষ্টকর। শাইখ সিরাজ অনুষ্ঠানটির দায়িত্ব তুলে নেন নিজ হাতে। শুরুতে কাজের কথা, তারপর আমার দেশ এবং সর্বশেষ মাটি ও মানুষ নাম নেয় অনুষ্ঠানটি। প্রাধান্য পায় কৃষি। কৃষকদের কাছে তো বটেই, অন্য দর্শকদের কাছে এটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। মাটি ও মানুষের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী; বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণে এটি অনন্য ভূমিকা রেখেছে, আর কৃষি স্বীকৃতি পেয়েছে গণমাধ্যমের মূলধারার আধেয় হিসেবে।
আশির দশকের প্রথম দিক থেকেই আমরা লক্ষ্য করি, এ দেশের শিক্ষিত তরুণের জীবনের স্বপ্টম্ন হয়ে ওঠে দেশে-বিদেশে কোনোভাবে একটি চাকরি জোগাড় করে নাগরিক জীবনযাপন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের 'মাটি ও মানুষ' অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রবল কৃষি চেতনায় তাড়িত শাইখ সিরাজ নতুন এক আন্দোলনের সূচনা ঘটালেন। পুকুরে মাছ চাষ, গরু মোটাতাজাকরণ, ফুল চাষ, সবজি চাষ, হাঁস- মুরগির সমন্বিত খামারসহ বৈচিত্র্যময় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গ্রামীণ পরিবেশেই সুখী, সুন্দর জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করলেন শিক্ষিত তরুণদের। এতে বেকার তরুণ অনেকেই গড়ে তুললেন মাছ, হাঁস-মুরগির খামার। হাতে নিলেন গরু মোটাতাজাকরণ, ফুল চাষ, সবজি চাষের মতো নানা ছোট প্রকল্প। এভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন তারা। তাদের এই সাফল্যের গল্প প্রচার করলেন শাইখ সিরাজ টেলিভিশন মাধ্যমেই।
শাইখ সিরাজ ১৯৮২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমার দেশ এবং মাটি ও মানুষের ৫৮৮টি পর্ব নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সময়ে কৃষির নানা বিষয় নিয়ে আলোকপাত করতেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে, আর কৃষির কলাকৌশল নিয়ে লিখতেন দৈনিক জনকণ্ঠের চাষবাস পাতায়। ১৯৯৬ সালে যুক্ত হন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রতিষ্ঠার সঙ্গে। চ্যানেল আইয়ের একজন প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। দায়িত্ব পালন করছেন চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান হিসেবে। চ্যানেল আইয়ের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ, হৃদয়ে মাটি ও মানুষের ডাক, কৃষি দিবানিশি অনুষ্ঠানগুলোর পরিকল্পনাকারী ও উপস্থাপক তিনি।
মাটির কাছে গিয়ে কৃষকের নানা সমস্যা চিহ্নিতকরণ, কৃষকের ভেতরে থাকা উদ্ভাবনী শক্তি আবিস্কার, কৃষি সমস্যা, সম্ভাবনা, সামর্থ্য অনুসন্ধান, বাণিজ্যিক কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রচলিত বাজার ব্যবস্থার ত্রুটি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি সমবায়, ফসল বৈচিত্র্য, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকের দুর্দশা- কৃষিকেন্দ্রিক এরকম বহুমাত্রিক বিষয় নানাভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে শাইখ সিরাজের আয়োজনে। কৃষিকে গ্রামকেন্দ্রিক উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত করার অভিপ্রায়ে ছাদ কৃষিকে আন্দোলনে রূপান্তরিত করেছেন তিনি। তাই শুধু কৃষক নন, কৃষিকে ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, গৃহিণী, ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যে তার বিরামহীন তৎপরতা আমাদের বিস্মিত করে।
টেলিভিশন কিংবা মুদ্রণ মাধ্যমে শাইখ সিরাজ অকপট সত্য উচ্চারণ করেছেন। কৃষির সমস্যা-সংকট ফুটিয়ে তুলেছেন অবলীলায়। উন্মোচন করেছেন কৃষির সম্ভাবনা এবং সামর্থ্যের দিকটিও। কৃষি ও কৃষকের বন্ধু শাইখ সিরাজের জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানাই।
সাংবাদিক
শাইখ সিরাজের ভাবনাজুড়ে আছে কৃষি। কৃষিকে ঘিরে তার সমস্ত আয়োজন। তার সমস্ত কর্ম-আয়োজনে কৃষিকেন্দ্রিক সমৃদ্ধ, শানিত, পরিশীলিত চিন্তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সত্তর দশকের শুরুর দিকে যখন তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র তখন থেকেই কৃষিকে ঘিরে টেলিভিশনের সঙ্গে সংশ্নিষ্টতা তার। আশির দশকে বিটিভিতে কৃষিস্বাস্থ্যসহ উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ শুরু হলেও এই ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য আগ্রহী মানুষের খোঁজ পাওয়া ছিল কষ্টকর। শাইখ সিরাজ অনুষ্ঠানটির দায়িত্ব তুলে নেন নিজ হাতে। শুরুতে কাজের কথা, তারপর আমার দেশ এবং সর্বশেষ মাটি ও মানুষ নাম নেয় অনুষ্ঠানটি। প্রাধান্য পায় কৃষি। কৃষকদের কাছে তো বটেই, অন্য দর্শকদের কাছে এটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। মাটি ও মানুষের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী; বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণে এটি অনন্য ভূমিকা রেখেছে, আর কৃষি স্বীকৃতি পেয়েছে গণমাধ্যমের মূলধারার আধেয় হিসেবে।
আশির দশকের প্রথম দিক থেকেই আমরা লক্ষ্য করি, এ দেশের শিক্ষিত তরুণের জীবনের স্বপ্টম্ন হয়ে ওঠে দেশে-বিদেশে কোনোভাবে একটি চাকরি জোগাড় করে নাগরিক জীবনযাপন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের 'মাটি ও মানুষ' অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রবল কৃষি চেতনায় তাড়িত শাইখ সিরাজ নতুন এক আন্দোলনের সূচনা ঘটালেন। পুকুরে মাছ চাষ, গরু মোটাতাজাকরণ, ফুল চাষ, সবজি চাষ, হাঁস- মুরগির সমন্বিত খামারসহ বৈচিত্র্যময় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গ্রামীণ পরিবেশেই সুখী, সুন্দর জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করলেন শিক্ষিত তরুণদের। এতে বেকার তরুণ অনেকেই গড়ে তুললেন মাছ, হাঁস-মুরগির খামার। হাতে নিলেন গরু মোটাতাজাকরণ, ফুল চাষ, সবজি চাষের মতো নানা ছোট প্রকল্প। এভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন তারা। তাদের এই সাফল্যের গল্প প্রচার করলেন শাইখ সিরাজ টেলিভিশন মাধ্যমেই।
শাইখ সিরাজ ১৯৮২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমার দেশ এবং মাটি ও মানুষের ৫৮৮টি পর্ব নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সময়ে কৃষির নানা বিষয় নিয়ে আলোকপাত করতেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে, আর কৃষির কলাকৌশল নিয়ে লিখতেন দৈনিক জনকণ্ঠের চাষবাস পাতায়। ১৯৯৬ সালে যুক্ত হন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রতিষ্ঠার সঙ্গে। চ্যানেল আইয়ের একজন প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। দায়িত্ব পালন করছেন চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান হিসেবে। চ্যানেল আইয়ের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ, হৃদয়ে মাটি ও মানুষের ডাক, কৃষি দিবানিশি অনুষ্ঠানগুলোর পরিকল্পনাকারী ও উপস্থাপক তিনি।
মাটির কাছে গিয়ে কৃষকের নানা সমস্যা চিহ্নিতকরণ, কৃষকের ভেতরে থাকা উদ্ভাবনী শক্তি আবিস্কার, কৃষি সমস্যা, সম্ভাবনা, সামর্থ্য অনুসন্ধান, বাণিজ্যিক কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রচলিত বাজার ব্যবস্থার ত্রুটি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি সমবায়, ফসল বৈচিত্র্য, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকের দুর্দশা- কৃষিকেন্দ্রিক এরকম বহুমাত্রিক বিষয় নানাভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে শাইখ সিরাজের আয়োজনে। কৃষিকে গ্রামকেন্দ্রিক উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত করার অভিপ্রায়ে ছাদ কৃষিকে আন্দোলনে রূপান্তরিত করেছেন তিনি। তাই শুধু কৃষক নন, কৃষিকে ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, গৃহিণী, ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যে তার বিরামহীন তৎপরতা আমাদের বিস্মিত করে।
টেলিভিশন কিংবা মুদ্রণ মাধ্যমে শাইখ সিরাজ অকপট সত্য উচ্চারণ করেছেন। কৃষির সমস্যা-সংকট ফুটিয়ে তুলেছেন অবলীলায়। উন্মোচন করেছেন কৃষির সম্ভাবনা এবং সামর্থ্যের দিকটিও। কৃষি ও কৃষকের বন্ধু শাইখ সিরাজের জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানাই।
সাংবাদিক
- বিষয় :
- রুমন রেজা
- শাইখ সিরাজ