জাবিতে চারুকলা ভবনের নির্মাণকাজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছেন জাবি শিক্ষার্থীরা। কোলাজ: সমকাল
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১১:৫৯ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১২:১৭
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বন্ধ হওয়া চারুকলা বিভাগের ভবন নির্মাণকাজ শুরু করা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বন্ধ থাকা নির্মাণকাজ শুরুর দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
অন্যদিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ নিয়ে সেখানে পাল্টা অবস্থান নেয় অন্যান্য বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল চারুকলা বিভাগের ভবন নির্মাণকাজ শুরুর দাবি জানিয়ে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় তারা নতুন প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা দেন। এতে কয়েকজন শিক্ষকসহ কর্মকর্তারা ভেতরে আটকে পড়েন। রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সেখানে যান।
এরপর গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিভিন্ন বিভাগের একদল শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হন। এ সময় তারা চারুকলার শিক্ষার্থীদের পেছনে অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, মাস্টারপ্ল্যান না করে চারুকলার ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে না। ভারতের অর্থায়নে ভবন নির্মাণ হবে না।
আগামী ২৮ নভেম্বর উপাচার্য এ বিষয়ে চারুকলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। পরে রাত সোয়া ১১টার দিকে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা নিজেদের হলে ফিরে যান। এর কিছুক্ষণ পর চারুকলা ভবন নির্মাণের বিরোধিতা করে সেখানে মিছিল নিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের হলের পাশে চারুকলার ভবন নির্মাণ না করতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অর্থায়নে ৯৬ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে চারুকলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যে স্থানটিতে ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেটি অতিথি পাখির অভয়াশ্রম খ্যাত জলাশয়ের পাশে হওয়ায় ওই সময় একদল শিক্ষার্থী এতে বাধা দেন। তাদের বাধা উপেক্ষা করে সেখানে অন্তত ১৫০টি গাছ কেটে নির্মাণকাজের শুরু করা হয়। এরপর সরকার পতনের পর একদল শিক্ষার্থী ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন একদল শিক্ষার্থী। তারা ভবনটির নির্মাণ স্থগিতের দাবি জানান। পরে ৩ নভেম্বর এক প্রশাসনিক সভায় সেখানে সাময়িকভাবে ভবন নির্মাণকাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চারুকলা বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাঈদ হোসেন বলেন, দুপুর থেকে আমাদের ভবন নির্মাণকাজ শুরুর জন্য আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলেছে। হঠাৎ রাতে (গতকাল) একদল শিক্ষার্থী পেছনে অবস্থান নিয়ে আমাদের টার্গেট করে উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়েছেন। আমাদের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও অসম্মানজনক স্লোগান দেওয়া হয়েছে।
ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়াউদ্দিন আয়ান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি নষ্ট করে ভবন নির্মাণ করা যাবে না। মাস্টারপ্ল্যান করে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে। একইসঙ্গে ভারতের টাকায় কোনো ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।