ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

হাওয়াই জাহাজে প্রথম

হাওয়াই জাহাজে প্রথম

ফাইল ছবি

জুয়েল আইচ

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ | ০০:৩৮

আকাশে উড়ে হাওয়ায় ভেসে মেঘের রাজ্য পেরিয়ে এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে চলে যাওয়ার বাহনটি সত্যিই এক অনন্য আবিস্কার। বিমান কিংবা হাওয়াই জাহাজ, যে নামেই ডাকি না কেন, এতে চড়ার প্রথম অভিজ্ঞতা সত্যিই উত্তেজনার। একই সঙ্গে আনন্দেরও ...

ছোটবেলায় আকাশে উড়োজাহাজ দেখলেই বিস্ময় আর মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম। এই পেলেন আইছে, পেলেন ... বলেই পিছু পিছু ছুটতে শুরু করতাম। ঘরের চালে উঠেও বহুবার চেষ্টা করেছি প্লেন ধরার। প্লেনে ওঠার সৌভাগ্য প্রথম হয় সত্তর দশকের শেষ প্রান্তে। সেটা ছিল ১৯৭৮ সাল। ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা থেকে যশোর গিয়েছিলাম। আকাশপথ পাড়ি দেওয়ার পুরো সময়টাই আমার কাছে ছিল রোমাঞ্চকর। জানালার পাশে সিট পেয়েছিলাম, তাই ভ্রমণের পুরো পথ জানালা থেকে চোখ সরাইনি সেদিন। প্লেনের দরজা বন্ধ হওয়া, রানওয়ে ছুঁয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া, এরপর গতি বাড়তে বাড়তে রানওয়ে ফেলে আকাশপানে ওঠা- সবকিছুই মনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছিল। এ ছিল আমার কাছে আকাশে ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার মতোই আনন্দের।

এরপর আকাশপথে দেশের নানা প্রান্তে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়েছে। দেখেছি, অনেকের মধ্যে উচ্চতা ভীতি কাজ করে। কিন্তু আমার কেন জানি কোনো কালেই সেই ভয় ছিল না। এমনকি চীন সফরে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়া প্লেনের ভেতরে থেকেও এতটুকু ভয় পাইনি। ঝড়ের ঝাপটায় প্লেন যেভাবে দুলছিল, ঝাঁকুনিতে যাত্রীদের যখন আসন থেকে এদিক-ওদিক ছিটকে পড়ার দশা- তখন যে কারও ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আমি চুপচাপ বসে থেকেছি নিজেকে এই প্রশ্ন করে, মৃত্যু যদি দুয়ারে এসেই থাকে, তাহলে ভয় পেয়ে লাভ কী?

মৃত্যু সামনে রেখেও ভয় না পাওয়ার এই দৃঢ় মানসিকতা তৈরি হয়েছে মূলত একাত্তরে। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার প্রথমদিকে প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে ভয়কে সঙ্গী করে। প্রথম দুটি অপারেশনে ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু দুটি অপারেশনের পরই আমার মৃত্যুভয় কোথায় যে উবে গিয়েছিল, বুঝতেই পারিনি। তাই চীন সফরে যাওয়ার পথে ঝড়ের কবলে পড়া প্লেনের ভেতর নির্ভয়ে প্রহর গুনতে পেরেছি।

জার্মানি সফরের একটা ঘটনা দিয়ে শেষ করি। এটা নব্বই দশকের ঘটনা। বড়সড় একটা দল নিয়ে আমরা জার্মানি রওনা হয়েছিলাম। ট্রানজিট লন্ডনে। যথাসময়ে বিমানে চড়ে বসলাম। কিন্তু সেই বিমান ছাড়ল ছয় ঘণ্টা দেরিতে। লন্ডন নেমে দেখি, কানেকটিং ফ্লাইট ছয় ঘণ্টা আগেই বার্লিনের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছে। পরদিন সকাল ছাড়া জার্মানি যাওয়ার কোনো ফ্লাইটও নেই। এদিকে, আমাদের কারও কাছে নেই ইংল্যান্ডের ভিসা। বিমানবন্দর ছেড়ে বাইরেও যাওয়ার উপায় নেই। এমন অবস্থায় সময় কাটানো অসহনীয়। ওদিকে দলের সবাই অধৈর্য হয়ে পড়েছে। বারবার আমাকে অনুরোধ করছে কোনো উপায় বের করার জন্য।

বিপাকে পড়া দলের নেতার যে অবস্থা হয়, আমার সেই অবস্থা। হাল না ছেড়ে নানা জায়গায় যোগাযোগ করে বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে হোটেলের দিকে পা বাড়াতেই তুমুল বৃষ্টি। রীতিমতো বরফ [তুষার নয়] পড়তে শুরু করেছে। ঠিক বর্ষার মতোই ধারালো সেই বৃষ্টি। তারপরও বৃষ্টি শরীরে গেঁথে নিয়েই পৌঁছে যাই হোটেলে। কোনোরকম রাত পার করেই ছুটে যাই বিমানবন্দরে। উঠে পড়ি প্লেনে। ঠিক সময়ই সেই প্লেন আমাদের নিয়ে উড়াল দেয় বার্লিনের উদ্দেশে।

আরও পড়ুন

×