নিজের পায়েই হাঁটুন অর্জনের পথে

শাহনেওয়াজ টিটু
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ | ২৩:১৬
ব্রায়ান লারা। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে অপরাজিত ৪০০ রান ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অপরাজিত ৫০১ রানের বিরল রেকর্ডধারী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সাবেক ক্রিকেটার। সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ক্রিকেটারের জীবনভিত্তিক সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন শাহনেওয়াজ টিটু
তখন পতনের কাল!
যখন খেলা শুরু করি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের তখন পতনের কাল। তবে আমার বিশ্বাস ছিল, যদি নিজের খেলাটা ঠিকঠাক খেলতে পারি, তাহলে আমাদের পতাকা আবারও পতপত করে উড়বে। ফলে নিজের ১৭ বছরের ক্যারিয়ারের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি টেস্ট ম্যাচ, প্রতিটি এক দিনের ম্যাচ, বিশ্বকাপের প্রতিটি খেলা আমি উপভোগ করে গেছি। একমাত্র বেদনার জায়গাটি হলো, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে কোনো বিশ্বকাপ জিততে না পারা।
ভুল আমিও করেছি; হারিয়েছি খেই
বিশ্বরেকর্ড নিয়ে আমার মাথাব্যথা আগেও ছিল না, এখনও নেই। ক্যারিয়ারের কোনো বিশেষ মুহূর্তকে এভাবে বেছে বেছে আলাদা করার কোনো মানে আছে বলেও মনে করি না আমি। দেখুন, গলফার টাইগার উডসের দিকে যদি তাকান, জানবেন, পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করার আগে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন তিনি। এমনকি রেখেছিলেন মনোবিদও। যদিও বিষয়টি ভালোই লেগেছে, তবে আমার ক্ষেত্রে এমনটা কখনও হয়নি। খেলতে খেলতে ভয়ংকর কিছু ভুল করে বসেছি আমি; হারিয়ে ফেলেছি খেই কখনও। আবার সেই ভুল থেকে, নিজের মতো শিক্ষা নিয়েই এগিয়েছি পথ। এ ক্ষেত্রে আমি নিজেই ছিলাম নিজের মনোবিশেষজ্ঞ।
বেঁচে থাকার মতো জীবন
বেঁচে থাকার মতো একটা জীবন আমি পেয়েছি- এতেই খুশি। আমি মনে করি, একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ কিংবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তার নিজের পরিবার। এই মানুষদের ওপরই আপনি ভরসা করতে পারবেন, বিশেষ করে সেই দিনগুলোতে, যখন আপনার সামনে ঘোর অমানিশা। নিজের চারপাশে এমন অগুনতি শান্ত মানুষ পেয়েছি বলে আমি সৌভাগ্যবান। জানেন হয়তো, সাত ভাই ও চার বোনের বড় সংসারে আমি দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম। ভাইবোন আর বাবা-মার সঙ্গে শৈশব থেকেই সম্পর্কটা বেশ মধুর আমার। যদিও মাঝেমধ্যে মনে হয়, তাদের প্রশ্রয়ে নিজেকে কখনও কখনও একটু বেশি মাত্রায়ই বিশৃঙ্খল করে রেখেছিলাম!
মায়ের দুশ্চিন্তা
আমি কেমন খেলছি- এ ব্যাপারে মায়ের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। তিনি শুধু এই দুশ্চিন্তায়ই ভুগতেন- খেলতে গিয়ে তার 'পুঁচকে' ছেলেটা কোনো ব্যথা পেল কিনা! তার মৃত্যুতে তাই ভেঙে পড়েছিলাম আমি। তবু, হয়তো বাধ্য হয়েই মেনে নিয়েছি। আর নিজেকে সান্ত্বনা দিই এই ভেবে- যেখানে আছেন; নিশ্চয় ভালো আছেন তিনি। আর কোনো-না-কোনোভাবে, একদিন নিশ্চয়ই আবারও মুখোমুখি হবো তার।
নিজের পায়ে ভর দিয়েই অর্জন
ক্যারিয়ারে বহুবারই শচিন টেন্ডুলকারের সঙ্গে তুলনার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। আমি বলি, আমি আর টেন্ডুলকার- দু'জন আলাদা মানুষ, দু'জন আলাদা ক্রিকেটার। ফলে এই তুলনা স্রেফ অবান্তর। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ধারাবাহিকতার যে উজ্জ্বল উদাহরণ ক্যারিয়ারজুড়ে টেন্ডুলকার সৃষ্টি করে গেছেন, তা অতুলনীয়। তার যা অর্জন, তা তিনি নিজের পায়ে ভর দিয়েই করে গেছেন। একজন বন্ধু হিসেবে তাকে নিয়ে ভীষণ গর্বিত আমি। অন্যদিকে, আমার যত অর্জন, তাও নিজের পায়ে ভর দিয়েই আমি করেছি। ফলে, মিল বলতে এই একটা জায়গায় তুলনা হতে পারে আমাদের।
হিতে বিপরীত...
একবার ভারতের বিপক্ষে এক সিরিজে পরপর ম্যাচে একবার স্লিপে আরেকবার উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে গিয়েছিলাম। ইনজুরির কারণে আমার কব্জিতে জোর কমে গিয়েছে বলেই ইন-ফ্রন্ট খেলার বদলে, বলের গতি ব্যবহার করে উইকেটের পেছনে খেলতে চাওয়ার কারণেই এমনটা ঘটেছে; বুঝতে পারলাম। তাই পরের ম্যাচেই ইনজুরির ব্যথাকে পাত্তা না দিয়ে ঠিক করলাম, নিজের সর্বশক্তি জড়ো করে, ব্যাটের ফুল-ফেসে খেলতে থাকব। আমি মনে করি, যে কোনো অবস্থায় একজন ব্যাটারের তার স্বাভাবিক খেলাটাই খেলা ভালো। অন্যদিকে, টেস্ট ক্রিকেটে কেউ যদি ৪০-৫০ মিনিট মাঠে কাটিয়ে ৫-১০ রান করে; সেটিই ভালো। কেননা, এতে একটি বড় ইনিংস খেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়। নিজেকে ইনিংসের সঙ্গে মানিয়ে না নিয়ে, শুরুতেই হাত চালিয়ে খেললে এ ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
ক্যারিয়ারের শেষ বেলায়, যখন নিজের চেয়ে অনেক কম বয়সীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলতে নামতাম, সব সময় মাথায় রেখেছি- যেন ওরা আমার কাছ থেকে কোনোভাবেই পথভ্রষ্ট হওয়ার কোনো প্রেরণা না পায়।
- বিষয় :
- ব্রায়ান লারা
- টেস্ট ক্রিকেট
- ওয়েস্ট ইন্ডিজ