ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বইয়ের মানুষ

বইয়ের মানুষ

স্যালুনে এসে মানুষ এখন মোয়াজ্জেমের দেওয়া বই পড়ে...

ফারহান হাসনাত

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ | ২৩:২৯

সপ্তাহের সাত দিনই বই হাতে শহরে ঘুরতে দেখা যায় মোয়াজ্জেম হোসেনকে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার বই বিলি করেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেছেন দুটি লাইব্রেরি ও একটি জাদুঘর। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার খৈনকুট গ্রামের মোয়াজ্জেমের মামা আব্দুল গফুর ছিলেন বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। তার উৎসাহেই বই পড়া শুরু মোয়াজ্জেমের। ড. লুৎফর রহমান ও ডেল কার্নেগির লেখা পড়ে জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায় তার।

এরপর ১৯৯০ সাল থেকে বই সংগ্রহ করতে থাকেন। নরসিংদী স্টেশন লাইব্রেরি ঘুরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, ডেল কার্নেগির বই কেনেন। গ্রামের পরিচিতদের কাছ থেকে বই এনে পড়ার টেবিলে সাজিয়ে রাখতেন। বন্ধুদের পড়তে দিতেন। পাঠচক্র করতেন। ২০০০ সালে নরসিংদী শহরে এসে থিথু হন মোয়াজ্জেম। একটি রুম ভাড়া করে ছাত্র-ছাত্রী পড়াতেন। রুমের এক কোণে পুরোনো একটি শেলফে নিজের বইগুলো সাজিয়ে রেখে দেন। ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে নামও কুড়ান। ভৈরব, কিশোরগঞ্জ থেকে ছাত্ররা সাইকেল চালিয়ে পড়তে আসত তার কাছে। যারা আগে চলে আসত, তারা শেলফে রাখা বই পড়ত। ছাত্রদের আগ্রহ দেখে নতুন বই কিনতে শুরু করেন মোয়াজ্জেম। ভাবলেন, লাইব্রেরি গড়বেন। এক পর্যায়ে বাড়ির দোতলায় লাইব্রেরি গড়ে তুললেন। নাম দিলেন, নরসিংদী পাবলিক লাইব্রেরি। তার লাইব্রেরিতে বর্তমানে আছে প্রায় ছয় হাজার বই।

সবার জন্য উন্মুক্ত এই লাইব্রেরি শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিনই খোলা থাকে। বাসায় বই নিতে চাইলে নাম এন্ট্রি করে বই নেওয়া যায়। শুধু নরসিংদী শহরে নয়, খৈনকুট গ্রামে বাবার নামে 'শিক্ষানুরাগী সামসুদ্দিন পাবলিক লাইব্রেরি' গড়ে তুলেছেন মোয়াজ্জেম। সেখানে আড়াই হাজার বই আছে। সেই লাইব্রেরিও শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ছয় দিনই খোলা থাকে। ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার বই বিনা মূল্যে বিতরণ করেছেন মোয়াজ্জেম। অবসরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই দিয়ে আসেন তিনি। যান বিভিন্ন কলেজে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বই দেন। শুক্রবার ছোটেন গ্রামে। ব্যাগে থাকে বই। বিলিয়ে বেড়ান গ্রামের মানুষের মধ্যে। স্থানীয়দের কাছে বইমানুষ নামেই পরিচিত মোয়াজ্জেম।

২০২০ সালে স্থানীয় ব্রাহ্মণদী মোড়ের ফেমাস জেন্টস পার্লারে চুল ছাঁটাতে গিয়ে ৩০ মিনিট বসে থাকলেন মোয়াজ্জেম। তার মতো আরও অনেককেই বসে থাকতে দেখে মোয়াজ্জেম স্যালুনের মালিক কমলের সঙ্গে আলাপ করে সেখানে কয়েকটি বই দিলেন। ফেমাস জেন্টস পার্লারের মালিক কমল দাস বলেন, 'কাস্টমার এসে আগে বসে থেকে বিরক্ত হতো। এখন সবাই বই পড়ে। তা ছাড়া বইয়ের কারণে আমার কাস্টমারও বেড়ে গেছে।' ব্রাহ্মণদীর আরও পাঁচটি স্যালুনে বই দিয়েছেন মোয়াজ্জেম। বই দিয়েছেন ফার্মেসি ও দুটি ডেন্টাল ক্লিনিকে। গড়ে তুলেছেন 'বই পড়া আন্দোলন বাংলাদেশ'। সদস্যরা মানুষকে বইয়ের কথা বলেন। মোয়াজ্জেম বললেন, 'বই ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করি। মানুষ তো কত কিছুর জন্যই আন্দোলন করে, আমি না হয় বই নিয়েই পড়ে থাকলাম।' 

আরও পড়ুন

×