ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মৌলভীবাজারে চোখের আলোয় ক্যাম্প

মৌলভীবাজারে চোখের আলোয় ক্যাম্প

মৌলভীবাজারে অনুষ্ঠিত চক্ষুশিবিরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছানি অপারেশনের জন্য বাছাই করা হয় ৫৬ রোগী

নুরুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ | ২২:৩৬

কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে এক সময় বসতভিটাসহ সর্বস্ব হারিয়েছিলেন মৌলভীবাজারের হামরকোনা ও দাউদপুর গ্রামের মানুষ। কালের বিবর্তনে চর ভরাটের ফলে বসতভিটায় ফিরে পেয়েছেন এ এলাকার অভাবপীড়িত মানুষ। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের দুঃখ ঘুচে যায়নি। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই জল-কাদাকে সঙ্গী করে তাদের বসবাস করতে হয়। অভাবের সঙ্গে নিত্যদিন যুদ্ধ করা এ দুই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বরাবর পিছিয়ে রয়েছেন।
এমন অবহেলিত ও বঞ্চিত জনপদের মানুষদের খুঁজে বের করেছে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও সমকাল সুহৃদ সমাবেশ। সংগঠন দুটির যৌথ উদ্যোগে হামরকোনা জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ৩১ মার্চ আয়োজিত হয় 'চোখের আলোয়' বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ক্যাম্প। ঝাপসা আলোয় দীপশিখা ছড়িয়ে দিতে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত হয় মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের চৌকস চিকিৎসক দল। মৌলভীবাজারের সুহৃদরা দিন-রাত কাজ করে এ উদ্যোগকে সফলতা দেন।

সকাল থেকে প্রকৃতির বৈরিতার কবলে পড়ে মেঘে ঢাকা আকাশ ছিল। ক্ষণে ক্ষণে ঝরছিল বৃষ্টি। গ্রামীণ জনপদের সদর উপজেলার অবহেলিত প্রান্তিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত হামরকোনা তথা আশপাশ গ্রামের মানুষের প্রয়োজন চোখের চিকিৎসা আটকাতে পারেনি বৃষ্টি বাদল। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে চোখের চিকিৎসা নিতে নারী-পুরুষ, শিশু রোগীর ঢল নামে। বেলা ১১টা বাজতে না বাজতে মাদ্রাসা রোগীর ভিড়ে স্বেচ্ছাসেবক ও চিকিৎসকের হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু সুহৃদরা নামের তালিকা প্রস্তুত ও টোকেন দিতে ব্যর্থ হননি। অন্যদিকে চিকিৎসকরা সকাল ১০টা থেকে লাগাতার আসা রোগীদের চোখ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপত্র, ওষুধ ও চশমা দেন। অন্যদিকে যেসব রোগীর ছানি অপারেশন প্রয়োজন তাদের ভর্তি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। তাদের মধ্য থেকে ছানি অপারেশনের জন্য ৫৬ জন রোগীকে বাছাই করা হয়। তাদের প্রয়োজন ছানি অপারেশন। সেদিন প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া পর তাদের ২ এপ্রিল শনিবার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করার কথা জানানো হয়। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে চোখের আলো ফিরে পাবার আশা দেন চিকিৎসকরা। নির্ধারিত দিনে প্রত্যেক রোগীকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। সেখানে তাদের পর্যবেক্ষণে রেখে পর্যায়ক্রমে ছানি অপারেশন করা হয়।

এর আগে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন মাধ্যমে সুহৃদরা চিকিৎসাসেবা প্রদানের তারিখ ও সময় প্রচার করেন। সে অনুযায়ী দিনভর সেবাপ্রত্যাশীরা নির্ধারিত স্থানে আসেন। সুহৃদরা তাদের স্বাগত জানান এবং তারা যেন সুশৃঙ্খলভাবে চিকিৎসা নিতে পারেন সে ব্যবস্থা করেন। চোখের চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের মধ্যে চিকিৎসাপত্র ছাড়াও ৪৮৭ জন রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ ও চশমা দেওয়া হয়। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
কুলাউড়ার লুয়াউনি-হলিছড়া থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মিনিয়া ভর বলেন, 'রাইত হইলে চউকে দেখি না। দিনের বেলা অনবরত চউক দিয়া অঝরে পানি পড়ে। অল্প হাজিরিতে চা বাগানে কাজ করে পেটের ভাত জোগাড়ে হিমশিম খাই। নুন আনতে যারা পান্থা ফুরায় অভাবের তাদের চোখের ব্যারাম সারাতে টাকা খরচ করে ডাক্তার দেখাইবার সুযোগ কই। বিনা খরচে ডাক্তারি করানি যাইব হুইন্না ৫০ কিলোমিটার দূরে বহুত কষ্টে চউক দেখাইতে আইছি। ডাক্তারে দেইখা কইছইন অপারেশন লাগব। তারা ছানি অপারেশন করাইয়া দিবা। ভগবানে দিলে অপারেশনের পর চউকে আগের মতো দেখতাম পারমো। দুনিয়াত এই রকম ভালা মানুষ আছইন দেইখ্যা আমরার মতো গরিব মানুষ চউক কানা হইয়া সমাজের অভিশাপ হরাম না। '

এর আগে সমকাল পত্রিকার মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি ও সুহৃদ উপদেষ্টা নুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিনামূল্যে চক্ষুশিবিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইকরা বাংলা টিভির প্রযোজক আহমাদ সেলিম, স্থানীয় খলিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সহসভাপতি অলিউর রহমান, সংস্কৃতি চর্চার মানুষ সুরুক আলম, স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি মকবুল মিয়া।

রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তাহসিন মাহিলা হক, ওপিডি সুপারভাইজার আব্দুল মান্নান। সহযোগিতা করেন জনসংযোগ কর্মকর্তা দেওয়ান রুহুল আমিন চৌধুরী, রুহিত আহমেদ, মিল্টন বড়ূয়া, শুকুর আহমেদ ও রঞ্জিত ফারুক। সুহৃদ সমাবেশ মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি সেলিম আহমদ, সহসভাপতি ইয়াসীন সেলিম, যাদব সূত্রধর, সাধারণ সম্পাদক উপানন্দ বর্মণ, সদস্য আব্দুস সামাদ আজাদ, সীমা বেগম, হাবিবুর রহমান, শাফিকুর রহমান, আফির আলী, আবু তাহের, জুয়েল আহমদ, জুবায়ের আলম, মুজিবুর রহমান, আবু সাঈদ, রিমন আহমদ, শিপন আহমদ ফায়াদ, দেবাশিস চৌধুরী, আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের প্রবীর কর্মকার, রূপন দাশ, জসীম আহমদ প্রমুখ চক্ষুশিবির সাফল্যমণ্ডিত করতে সহযোগিতা করেন।

আরও পড়ুন

×