রহস্যমানবীর গল্প
-samakal-62f4703380ff1.jpg)
নাজিফা তুষি, ছবি ::জয়িতা আফরিন
এমদাদুল হক মিলটন
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২২ | ২১:০০
সৌন্দর্য আর পরিশ্রম- এ দুই অনুষঙ্গ এক সুতোয় গাঁথা হলে কী হয়, সেটা ২০১৪ সালে দেখেছেন সবাই। ওই বছর হাজার হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে হয়ে যান লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ। আট বছরের ক্যারিয়ারে কাজল কালো চোখের এই সুন্দরী এখন প্রশংসার হাওয়ায় ভাসছেন। বলছি, মডেল ও অভিনেত্রী নাজিফা তুষির কথা। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া 'আইসক্রিম' সিনেমার পর 'স্কুটি', 'নেটওয়ার্কের বাইরে', 'দ্য ডার্ক সাইড অব ঢাকা', 'সিন্ডিকেট'-এর মতো কাজ দিয়ে দর্শকমন জয় করা তুষি আবারও আলোচনায় এলেন 'হাওয়া' সিনেমা দিয়ে। চরিত্রের মধ্য দিয়ে কীভাবে নিজেকে ভাঙতে হয়, রূপান্তর করতে হয় অন্য মানুষে, তা ভালো করেই জানেন তিনি। যেজন্য সিরিজ সাফল্য যেন তাঁর হাতের মুঠোয় বন্দি। যেখানে তাঁর সমসাময়িকরা মুঠো মুঠো কাজ করে ক্লান্ত, সেখানে তুষি সবার চেয়ে আলাদা।
তুষি বলেন, 'দর্শকের ভালোবাসা আমাকে ভালো কাজের দায়বদ্ধতা তৈরি করেছে। শুধু পর্দায় মুখ দেখিয়ে লাভ নেই। ক্যারিয়ারে কতটি সিনেমা করেছি, তা আমার কাছে মুখ্য নয়। কয়টি ভালো কাজ করেছি তাই মূল বিষয়। দর্শক মনে রাখবে এমন কোনো কাজ কি হয়েছে? কী পেলাম আমি? স্মৃতির বারান্দায় হেঁটে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই ভালো কাজের চ্যালেঞ্জ নিই।' এ কথা যে মিথ্যে নয়, 'হাওয়া' সিনেমায় তাঁর অভিনীত গুলতি চরিত্রের উপস্থিতি এর বড় প্রমাণ। 'হাওয়া' সিনেমায় তাঁকে দেখা গেছে এক বেদেনির চরিত্রে। কেমন ছিল সেই কাজের অভিজ্ঞতা? 'গুলতি' রহস্যময় চরিত্র। শুটিংয়ের ছয় মাস আগে থেকেই ওই চরিত্রের জীবনযাপন শুরু করতে হয়েছে। 'গুলতি'র জীবনে ঢোকার জন্য তুষির জীবন থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেছি। চরিত্র হয়ে ওঠার জন্য বেদেপল্লিতে যেতে হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে মিশেছি, শুটিংয়ে এক মাস মোবাইল ফোন ব্যবহার করিনি। কয়েক মাস ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। ইউনিটের সবার সহযোগিতা পেয়েছি বলেই হয়তো ঠিকঠাক মতো রহস্যময়ীর চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি।' বলছিলেন তুষি। গত ২৯ আগস্ট মুক্তি পাওয়া 'হাওয়া'র দর্শক সাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দর্শক সিনেমাটি পছন্দ করেছেন। যেজন্য সিনেমার প্রতি ক্রমেই তাঁদের আগ্রহ বাড়ছে। প্রেক্ষাগৃহগুলো হাউসফুল যাচ্ছে। অনেকেই টিকিট পাচ্ছেন না। আমি নিজেই টিকিট পাইনি বলে হলের সিঁড়িতে বসে সিনেমা দেখেছি। মানুষের এত ভালোবাসা, সবার এত আগ্রহ- আমি এ রকম দেখিনি আগে। আসলেই আমাদের এই সিনেমা দর্শকই প্রমোট করেছেন। সিনেমা মুক্তির আগে 'সাদা সাদা কালা কালা' গানটি ছিল দর্শকের মুখে মুখে। দর্শকের চাওয়া ছিল, 'হাওয়া' ছবিটি গানের চেয়ে আরও ভালো হবে। তাঁদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। 'হাওয়া' আমার প্রথম কাজ। যে কাজটির মাধ্যমে আমি নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণের সুযোগ পেয়েছি। আমার ছোট ক্যারিয়ার। কাজ করেছি মাত্র চার বছর। তবে এই সময়টাকে আমি উপভোগ করছি।'
'হাওয়া' সিনেমার প্রচারণায় প্রতিদিনই তুষিকে যেতে হচ্ছে ঢাকা ও এর বাইরে কোনো না কোনো সিনেমা হলে। সিনেমাটি যখন প্রশংসা পাচ্ছে, তখনই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সমালোচনা মুখে পড়েছেন তিনি। জানা যায়, রাজধানীর শ্যামলী সিনেমা হলে যাওয়ামাত্রই সংবাদকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন সাক্ষাৎকারের জন্য। হলের একপাশে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন তিনি। এ সময় তুষি সেখানে থাকা 'হাওয়া'র পোস্টারের পাশে 'দিন :দ্য ডে' এবং 'পরাণ'-এর পোস্টার দেখে সেগুলো সরাতে বলেন হল কর্তৃপক্ষকে। ব্যস, এতেই ঘটে বিপত্তি। তুষির বলা ওই কথার ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে। বিতর্ক নিয়ে তুষির দাবি, যেহেতু আমি 'হাওয়া'র নায়িকা। তাই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় মনে হলো, অন্য দুটি সিনেমার পোস্টার একটু সরিয়ে রাখলে ভালো হবে। বলার পর হল কর্তৃপক্ষই সেগুলো সরায়। পরে তাঁরা পোস্টার দুটি জায়গামতো রেখে দেন। পোস্টার দুটি সরাতে বলার পেছনে আমার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। পুরো ভিডিও না ছেড়ে কারা যেন শুধু পোস্টার সরাতে বলার অংশটুকু কেটে ভাইরাল করে দিয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণেদিতভাবে তাঁরা এটি করেছে।' 'হাওয়া'য় সুঅভিনয় দিয়ে দর্শককে হাওয়ায় ভাসিয়েছেন। সামনে কি তেমন কোনো কাজ নিয়ে সিনেমা পর্দায় হাজির হবেন তুষি? দেখুন, 'একজন শিল্পীকে ভালো কাজের ক্ষুধা সব সময় তাড়িয়ে বেড়ায়। এমন কাজ চাচ্ছি, যা আগে করিনি। যদিও সেটা সহজেই পাওয়া যায় না। দেখা যাক সেরকম কিছু ভাগ্যে আছে কিনা। আগামীতে কী কাজ করছি এটি আগেভাগে বলে দেওয়ার পক্ষপাতি আমি নই। আমি স্বপ্নবিলাসী মানুষ। যেজন্য ভালো কাজের স্বপ্ন দেখি, অপেক্ষা করি। স্বপ্নই আমাকে ভালো কাজের অনুপ্রেরণা জোগায়।
বোনের অভিনয়ের ক্লাস তুষিকে ফেলে দেয় অভিনয়ের নেশায়। এরপর থেকেই যেন অভিনয়ের প্রেমে পড়ে যান তিনি- রঙিন দুনিয়ার প্রতি তুষির প্রেম এভাবেই হয়েছিল। অভিনয়ের নেশা থেকেই তুষির স্বপ্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করা। যেজন্য ক্যারিয়ার শুরু থেকে ছোট পর্দায় অভিনয় করেননি তুষি। ওটিটির কাজ আর সিনেমাতেই তাঁর পূর্ণ মনোযোগ। যে চরিত্রেই তিনি কাজ করেন না কেন, সেই চরিত্রের পুরো স্বাদটা নিতে চান এই অভিনেত্রী। দেশের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি হলিউড-বলিউডের সিনেমায়ও অভিনয়েরও ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। লক্ষ্য যখন চলচ্চিত্র অভিনয়, তখন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও অভিনয়ে ইচ্ছা থাকা স্বাভাবিক। তবে তাঁর একটাই কথা, চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই যেন তাঁকে মানুষ চেনেন।