ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

পথ চলুন স্বাধীনতা আর দায়িত্ববোধ নিয়ে

পথ চলুন স্বাধীনতা আর দায়িত্ববোধ নিয়ে

জিম মরিসন

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০

জিম মরিসন। আমেরিকান রকস্টার ও কবি। 'দ্য ডোরস' ব্যান্ডের ভোকাল। রক মিউজিকের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাববিস্তারী এই কিংবদন্তির বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেন জসিম উদ্দিন আকাশ

বয়স যখন একেবারেই কম, মানে বাচ্চা, তখন একবার পিয়ানো বাজাতে শুরু করেছিলাম। মাত্র মাসখানেক বাজিয়েছি। এই ধরুন, থার্ড গ্রেড বুক পর্যন্ত। কিন্তু রেওয়াজ করার মতো মনমানসিকতা ছিল না বলে ছেড়ে দিয়েছি। যখন ফিফথ কি সিক্সথ গ্রেডে পড়ি, 'দ্য পনি এক্সপ্রেস' নামে একটা কবিতা লিখতে শুরু করি। লেখালেখির শুরু সম্পর্কে আমার এটুকুই মনে পড়ে। এটি ছিল এক ধরনের শোকগাথা। লেখাটা যদিও কোনোদিনই শেষ করতে পারিনি! লেখালেখি করার ইচ্ছাটা বরাবরই প্রবল ছিল মনে; কিন্তু হাতে কাগজ-কলম নেওয়ার পরই মনে হলো- কিছুই যেন নিয়ন্ত্রণে নেই আমার। লেখা যেন নিজেই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মতো আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে। তবে এ রকমটা সারাজীবন হয়নি। ফলে অল্প কয়েকটা কবিতা আমি লিখে শেষ করতে পেরেছিলাম।

অন্যের লেখা পড়ে প্রভাবিত হয়ে

হাইস্কুল ও কলেজে পড়ার সময় বেশ কয়েকটা নোটবুক ছিল আমার। তারপর সব ছুড়ে ফেলে দিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিলাম। সিদ্ধান্তটা সম্ভবত ভালোই ছিল আমার জন্য। আমার ধারণা, সেই হারিয়ে ফেলা দুই-তিনটি নোটবুকের মধ্যে বলার মতো ভালো লেখা একটাও ছিল না। বরং মনে হয়েছিল, সম্মোহনগ্রস্ত কিংবা নেশায় বুঁদ হয়ে যাওয়া মানুষের মতো রাতের পর রাত জেগে অহেতুকই লিখে গেছি কী সব! ফলে সেই লেখাগুলো যদি ফেলে না দিতাম, তাহলে হয়তো মৌলিক কোনো লেখা লিখতে পারা কোনোদিনই সম্ভব হতো না আমার পক্ষে। কেননা, সেগুলো মূলত ছিল অন্যের লেখা পড়ে প্রভাবিত হয়ে সৃষ্ট; ঠিক যেন কোনো বইয়ের উদ্ৃব্দতির মতো। ফেলে না দিলে কোনোদিনই সেগুলো থেকে মুক্তি পেতাম বলে মনে হয় না আমার।

সাত-পাঁচ না ভেবেই গানে

পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সৈকতে এলোমেলো ঘুরছিলাম আমি। এর আগে টানা পনেরোটা বছর স্কুল-কলেজে যেতে হয়েছে আমাকে। অথচ, এখন থেকে আর করার মতো কোনো কাজ নেই। সেদিনই প্রথমবারের মতো মনে হলো, বাহ, আমি তো মুক্ত! চমৎকার উষ্ণ এক গ্রীষ্ফ্মের দিন ছিল সেটি। সাত-পাঁচ না ভেবেই গান শুনতে শুরু করে দিলাম। যে গানগুলো সেদিন লিখেছিলাম, সেই নোটবুকটি সম্ভবত এখনও রয়ে গেছে আমার কাছে। এক ধরনের কিংবদন্তিতুল্য কনসার্ট সেদিন শুনতে পেয়েছিলাম আমি। সেটিকেই নিজের মতো লিপিবদ্ধ করে রাখার প্রয়াস ছিল সে আমার। সৈকতে সেদিন যা শুনেছি, তার এক ধরনের পুনঃসৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম। এভাবেই গানের জগতে ঢুকে পড়া।

কনসার্ট মানেই একসঙ্গে অনেক মানুষ

লোকজনকে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে চাই না আমি। তাই কনসার্টে সবসময়ই চেষ্টা করি দর্শকদের তাদের আসন থেকে দাঁড় করিয়ে দিতে আর তাদের এমন এক অনুভূতি দিতে, যেন ভাবতে পারে, যেখানে যেতে চায়, সেখানে পৌঁছানোর মতো তারা স্বাধীন। মনে পড়ে, এ পর্যন্ত আমাদের 'দ্য ডোরস' ব্যান্ডের করা সেরা মিউজিক্যাল ট্রিপগুলো হয়েছে ক্লাবে, কোনো কনসার্টে নয়। কনসার্ট বিশাল ব্যাপার; কিন্তু সেখানে বিপুল দর্শকের সামনে গান দিয়ে আসলে ক্লাবের তুলনায় তেমন প্রভাব ছড়ানো সম্ভব নয়। ক্লাবের পরিবেশ এর চেয়ে একেবারেই আলাদা। এখানকার দর্শকরা আপনার ঘাম দেখতে পাবে; আপনিও দেখতে পাবেন তাদের সবাইকে। কনসার্টে অসংখ্য মানুষকে একসঙ্গে সামনে পাবেন; কিন্তু তাতে আপনি আসলে করছেনটা কী- সেটির তেমন প্রভাব পড়বে না। অথচ ক্লাবে আপনার পক্ষে মিউজিক দিয়ে সবাইকে সম্মোহন করে ফেলা সম্ভব।

উপভোগ করুন কাজ

নিজের কাজটা খুবই উপভোগ করি আমি। দর্শকদের সামনে দাঁড়িয়ে মিউজিক করার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। রিহার্সালে হয়তো আপনি ইমপ্রোভাইজ করতে পারবেন; কিন্তু সেটি এক ধরনের মৃত পরিবেশ! দর্শক নেই, তাই তাদের ফিডব্যাকও নেই; কোনো টেনশনও নেই। অথচ, ক্লাবে দর্শকের সংখ্যা অল্প থাকায়, আপনার পক্ষে ইচ্ছামতো যে কোনো কিছু করা সম্ভব। যেহেতু মানুষ দেখছে- তাই শেষ পর্যন্ত নিজেকে একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত করে ফেলা যাবে না; ফলে এ ধরনের পারফরম্যান্সের মধ্যে চমৎকার এক টেনশন কাজ করে। একইসঙ্গে স্বাধীনতা আর দায়িত্ববোধের একটা দ্বৈরথ চলতে থাকে।

আমার ধারণা, চেতনে-অবচেতনে সবসময়ই কোনো না কোনো মিউজিক আমার কানে বেজেই চলে। সেই সুরগুলো ধরতে চাওয়ার এক অবদমিত আকাঙ্ক্ষা আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন

×