ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ফুটবল নেশন গড়ার লক্ষ্যে

ফুটবল নেশন গড়ার লক্ষ্যে

মাহফুজা আক্তার কিরণ

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২২ | ২৩:০৩

আজ আমরা যে নারী ফুটবল দেখতে পাচ্ছি, সেটার শুরু ২০১২ সালে। শুরুটা খুব সহজ ছিল না। আমরা অনেক সমস্যায় পড়েছি, আজ সানজিদা, কৃষ্ণাদের দেখতে পাচ্ছেন, তারাও ২০১২ সাল থেকেই যাত্রা শুরু করেছে। এরপর বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এগুলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু পরিকল্পনা করলেই তো হলো না। তা বাস্তবায়নে তো অনেক টাকা দরকার। তখন কোনো স্পন্সর ছিল না। কিন্তু শুরু করলাম। এভাবে প্রায় চার বছর আমি এবং প্রেসিডেন্ট সালাউদ্দিন ব্যক্তিগতভাবে ক্যাম্প চালিয়ে গেছি। যেখানে মেয়েদের খেতে লাগত ৩০-৩৫ হাজার টাকা। তারপর তাদের স্পোর্টস, মেডিকেল পরিচর্যা, তারা যে বাফুফে থেকে স্টেডিয়ামে যাবে সে বাস ভাড়া। আবার প্রত্যেক মেয়েকে কিন্তু আমরা পড়াশোনা করাচ্ছি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, ভালো ফুটবলার হতে হলে তার পড়াশোনা থাকতে হবে। একজন ফুটবলারকে ১ সেকেন্ডের মধ্যে মাঠে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাদের আইকিউ শার্প করতে হবে, সেসব ভেবে ওদের জন্য প্রাইভেট টিউটরের ব্যবস্থা করলাম। চার-পাঁচজন টিউটর এসে ওদের পড়াশোনা করাত। এখনও আছে। ওরা এসএসসি, এইচএসসি পাস করেছে এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) অ্যাফিলিয়েশন আছে। যে কারণে ওরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতেও পড়ছে।

এ পথচলা সহজ ছিল না। তিন-চার বছর একেবারে ব্যক্তিগতভাবে খরচ বহন করতে হয়, তা ছিল খুবই কষ্টকর। তারপরও করেছি। কারণ ফুটবলকে ভালোবাসি। ফুটবলের প্রতি ডেডিকেশন ছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা সেটার ফল পেয়েছি। চার বছর পর আমরা ঢাকা ব্যাংককে পাশে পাই, একটু স্বস্তি মেলে।

ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আমাদের যা যা করণীয় আমরা সবই করে যাচ্ছি। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো যদি এগিয়ে আসে, তা হলেই পেশাদার লিগ করা সম্ভব। এ মুহূর্তে বসুন্ধরা গ্রুপ ছাড়া আর কোনো ক্লাব নেই। যদিও এ বছর অনেক ক্লাব এন্ট্রি করেছিল, সেখান থেকে আমরা ১২টি ক্লাবকে এন্ট্রি করতে পেরেছি। এখানে অনেক ভালো ক্লাব এসেছে, যারা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল, যাদের লক্ষ্য আছে ফুটবল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার। ভবিষ্যতে পেশাদার লিগ করার জন্য আমরা আরও ভালো ব্যবস্থা করব। গত তিন বছর ধরে আমরা নারীদের লিগ করে যাচ্ছি; কিন্তু সেটি পেশাদার লিগ নয়। উইমেনস লিগ। পেশাদার লিগের জন্য প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রশিক্ষণে প্রযুক্তির ব্যবহার আমরা একেবারে করছি না যে তা নয়। তবে খুব বড় পরিসরে এখনও পারছি না। রিমার্কেবল কিছু নয়। আমাদের দেশকে ফুটবল নেশন হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সরকারের শতভাগ সমর্থন দরকার। কারণ ফুটবলে বড় কিছু করতে হলে অনেক ব্যয় করতে হবে। এটা ফুটবল ফেডারেশনের একার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বর্তমানে ফেডারেশন যে কাজটি করছে, সেটা শুধু স্পন্সর দিয়ে। আমাদের তো বড় মাপের স্পন্সরও নেই। আমরা আগামীতে যাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব, সেই জাপান, কোরিয়া, চীনের ফুটবলের জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট থাকে। সেখানে আমাদের ১০ কোটি টাকারও বাজেট নেই। তা হলে কী করে সম্ভব! ফুটবল নেশন হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বড় মাপের সরকারি বাজেট থাকতে হবে। সেই সঙ্গে অনেক বেশি একাডেমি থাকতে হবে। কোচ থাকতে হবে। তবেই আমরা ফুটবল নেশন হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।

লেখক : বাফুফে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান

আরও পড়ুন

×