আজও ভুলিনি বন্ধু

আইয়ুব বাচ্চু [জন্ম :১৬ আগস্ট ১৯৬২-মৃত্যু :১৮ অক্টোবর ২০১৮]
কুমার বিশ্বজিৎ
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০
মায়ের কাছে আমি আর বাচ্চু [আইয়ুব বাচ্চু] ছিলাম দুই ছেলে। তাই বন্ধু থেকে একে অপরের ভাই হয়ে উঠতেও সময় লাগেনি। চট্টগ্রামের জুবিলি রোডের পাশাপাশি দুটি বাসায় থাকতাম আমি আর বাচ্চু। এ-বাড়ি ও-বাড়ি যাওয়া-আসা লেগেই থাকত। দু'জনই ছিলাম গানপাগল। সারাদিনের ভাবনাজুড়ে থাকত গান আর গান। গানের টানে আমরা চট্টগ্রামের প্রায় সব জায়গা চষে বেড়িয়েছি। ছোট-বড় যেমনই গানের আয়োজন হোক, সেখানে আমাদের যাওয়া চাই-ই চাই। সে নেশা থেকেই ১৯৭৭ সাল থেকে একসঙ্গে ব্যান্ড গড়েছিলাম। চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা ফিলিংস ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আমি। এই ব্যান্ডের নামও আমার দেওয়া। সোলসে যোগ দেওয়ার আগে বাচ্চুও ফিলিংসে গিটারিস্ট হিসেবে কাজ করেছে। সে অধ্যায়টা বড় হয়নি ঢাকায় চলে আসার কারণে। আশির দশকের মাঝামাঝি আমি যখন ঢাকায় চলে আসি, তখনও বাচ্চুর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। তারপরও জানতে পারিনি বাচ্চু নিজেও ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই হঠাৎ ঢাকায় এসে বাচ্চু আমাকে দারুণভাবে চমকে দিয়েছিল। এরপর ঢাকা শহরে থেকেই শুরু হয়েছিল সংগীত নিয়ে স্বপ্নবুনন। তখনও বাচ্চু সময় পেলেই আমাদের বাসায় চলে আসত। মায়ের হাতের রান্না ছিল তার প্রিয়। আজ মা নেই, চলে গেছে বন্ধু ও ভাই আইয়ুব বাচ্চু। এ এক গহিন শূন্যতা- যা কখনও পূরণ হবে না। এখন তাই স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকা।
আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে বলার মতো কত কথা যে জমে আছে, কত স্মৃতি যে হৃদয় আন্দোলিত করে- তার হিসাব দেওয়া কঠিন। ঢাকায় এসে প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। হাল ছাড়িনি, কারণ দু'জনেরই ব্রত- যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনার। স্বপ্ন ছিল পৃথিবীজুড়ে বাংলা গান ছড়িয়ে দেওয়ার। সে লক্ষ্যেই একসঙ্গে চার দশকের পথ পাড়ি দিয়েছি আমরা। এই পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাসও কম ঘটনাবহুল নয়। সেসব লিখতে গেলে তা মহাকাব্যের মতোই বিশাল হয়ে যাবে। এর পরও একটা ঘটনা বলি, যেটা ঘটেছিল আমার সংগীতজীবনের ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে। ওই অনুষ্ঠানের কথা শুনেই বাচ্চু একটা ইনস্ট্রুমেন্টাল তৈরি করেছিল। শুধু তাই নয়, অনুষ্ঠানেও গিটার বাজিয়েছিল বাচ্চু। সেদিনই পরিকল্পনা করেছিলাম, আলাদা একটি আয়োজন করব- যেখানে ও গিটার বাজাবে, আমি গাইব। কিন্তু আজ করব, কাল করব করতে করতে আর করাই হয়নি। এর মাঝে কেটে গেছে অনেকটা সময়। দু'জনেই যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। দেখাসাক্ষাৎ কমে গেছে। তাই অভিমান করেই একদিন ফোন করে ওকে বলেছিলাম- 'তুুই আমার বাসায় আসিস না কেন?' এ প্রশ্ন শুনে ও হেসে বলেছিল- 'আসব দোস্ত। না এসে কি পারি, আমরা তো আমরাই। আমরা একজন মরলে তো আরেকজন কাঁধে নেব।' ওর এই কথায় অভিমান চলে গিয়েছিল, কিন্তু এটা যে বাস্তব হবে- তা বিশ্বাস করিনি। নিয়তির খেয়ালে ওর কথাই শেষ পর্যন্ত বাস্তব হয়ে গেল। কাঁধে নিতে হলো বন্ধুর লাশ। এ যে কত কষ্টের, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এ শুধু অনুভবের।
ব্যক্তি আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে যেমন স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসা যাবে, তেমনি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে কথা ফুরোবার নয়। আইয়ুব বাচ্চু দেশসেরা গিটারশিল্পী- এটা নির্দি্বধায় স্বীকার করবেন সবাই। ও গিটার বাজাতে যেমন ভালোবাসত, তেমনি ছিল গিটার সংগ্রহের নেশা। অনেক গিটার ছিল ওর সংগ্রহে, সেগুলো হয়তো এখনও যত্নে রাখা আছে। কিন্তু প্রিয় গিটারের তারে আর স্পর্শ পড়বে না তার আঙুলের- এই সত্যিটাই মেনে নেওয়া কঠিন। অনেকের মতো আমিও মনে করি, আইয়ুব বাচ্চু শুধু দেশসেরা নয়, বিশ্বের নামি গিটারশিল্পীদের সঙ্গে তুলনীয়। এ ছাড়া কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক হিসেবেও সে যে কত বড় মাপের তা সংগীতপ্রেমী সবারই জানা। দেশের ব্যান্ড সংগীতের উত্থানে যাঁদের ভূমিকা রয়েছে, আইয়ুব বাচ্চু তাঁদের অন্যতম। ব্যান্ড সংগীতের অগ্রসৈনিক বলা হয় তাকে। এটাই তার সংগীত জীবনের বড় অর্জন। তার অনবদ্য সৃষ্টিই তাকে গানের ভুবনে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ। আমার ভালো লাগা এখানেই যে, সংগীতের কীর্তিমান মানুষটি ছিল আমার বন্ধু। তাই হৃদয়ে থেকে এখনও বলি- আজও ভুলিনি বন্ধু, যেখানেই থাকো, শান্তিতে থাকো চিরকাল।
আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে বলার মতো কত কথা যে জমে আছে, কত স্মৃতি যে হৃদয় আন্দোলিত করে- তার হিসাব দেওয়া কঠিন। ঢাকায় এসে প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। হাল ছাড়িনি, কারণ দু'জনেরই ব্রত- যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনার। স্বপ্ন ছিল পৃথিবীজুড়ে বাংলা গান ছড়িয়ে দেওয়ার। সে লক্ষ্যেই একসঙ্গে চার দশকের পথ পাড়ি দিয়েছি আমরা। এই পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাসও কম ঘটনাবহুল নয়। সেসব লিখতে গেলে তা মহাকাব্যের মতোই বিশাল হয়ে যাবে। এর পরও একটা ঘটনা বলি, যেটা ঘটেছিল আমার সংগীতজীবনের ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে। ওই অনুষ্ঠানের কথা শুনেই বাচ্চু একটা ইনস্ট্রুমেন্টাল তৈরি করেছিল। শুধু তাই নয়, অনুষ্ঠানেও গিটার বাজিয়েছিল বাচ্চু। সেদিনই পরিকল্পনা করেছিলাম, আলাদা একটি আয়োজন করব- যেখানে ও গিটার বাজাবে, আমি গাইব। কিন্তু আজ করব, কাল করব করতে করতে আর করাই হয়নি। এর মাঝে কেটে গেছে অনেকটা সময়। দু'জনেই যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। দেখাসাক্ষাৎ কমে গেছে। তাই অভিমান করেই একদিন ফোন করে ওকে বলেছিলাম- 'তুুই আমার বাসায় আসিস না কেন?' এ প্রশ্ন শুনে ও হেসে বলেছিল- 'আসব দোস্ত। না এসে কি পারি, আমরা তো আমরাই। আমরা একজন মরলে তো আরেকজন কাঁধে নেব।' ওর এই কথায় অভিমান চলে গিয়েছিল, কিন্তু এটা যে বাস্তব হবে- তা বিশ্বাস করিনি। নিয়তির খেয়ালে ওর কথাই শেষ পর্যন্ত বাস্তব হয়ে গেল। কাঁধে নিতে হলো বন্ধুর লাশ। এ যে কত কষ্টের, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এ শুধু অনুভবের।
ব্যক্তি আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে যেমন স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসা যাবে, তেমনি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে কথা ফুরোবার নয়। আইয়ুব বাচ্চু দেশসেরা গিটারশিল্পী- এটা নির্দি্বধায় স্বীকার করবেন সবাই। ও গিটার বাজাতে যেমন ভালোবাসত, তেমনি ছিল গিটার সংগ্রহের নেশা। অনেক গিটার ছিল ওর সংগ্রহে, সেগুলো হয়তো এখনও যত্নে রাখা আছে। কিন্তু প্রিয় গিটারের তারে আর স্পর্শ পড়বে না তার আঙুলের- এই সত্যিটাই মেনে নেওয়া কঠিন। অনেকের মতো আমিও মনে করি, আইয়ুব বাচ্চু শুধু দেশসেরা নয়, বিশ্বের নামি গিটারশিল্পীদের সঙ্গে তুলনীয়। এ ছাড়া কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক হিসেবেও সে যে কত বড় মাপের তা সংগীতপ্রেমী সবারই জানা। দেশের ব্যান্ড সংগীতের উত্থানে যাঁদের ভূমিকা রয়েছে, আইয়ুব বাচ্চু তাঁদের অন্যতম। ব্যান্ড সংগীতের অগ্রসৈনিক বলা হয় তাকে। এটাই তার সংগীত জীবনের বড় অর্জন। তার অনবদ্য সৃষ্টিই তাকে গানের ভুবনে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ। আমার ভালো লাগা এখানেই যে, সংগীতের কীর্তিমান মানুষটি ছিল আমার বন্ধু। তাই হৃদয়ে থেকে এখনও বলি- আজও ভুলিনি বন্ধু, যেখানেই থাকো, শান্তিতে থাকো চিরকাল।
- বিষয় :
- কুমার বিশ্বজিৎ
- আইয়ুব বাচ্চু