ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মানবিক বোধের গল্প

মানবিক বোধের গল্প

নন্দন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ | ০০:২৬

সাড়ে তিন বছর পর আবারও ওয়েব সিরিজ নিয়ে দর্শকের সামনে এলেন অমিতাভ রেজা। গত ৪ নভেম্বর হইচইয়ে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অরিজিনালস সিরিজ 'বোধ'। এতে আলমগীর হোসেন নামে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন। দীপ্তি রানী সাহা নামের এক শিক্ষিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন রুনা খান। মানবিক বোধের গল্প নিয়ে নির্মিত সিরিজটি এরই মধ্যে দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ সিরিজ নিয়ে কথা বলেছেন নির্মাতা ও প্রধান দুই অভিনয়শিল্পী

আফজাল হোসেন

১৯৭৫ সাল থেকে অভিনয় করছি। একটা সময় শুধু টেলিভিশনে কাজ করেছি। মাঝে অভিনয় থেকে কিছুটা দূরে ছিলাম। কারণ, দীর্ঘ সময় একটি কাজ করতে করতে এক ধরনের একঘেয়েমি চলে এসেছিল। খুব নতুন একটা কিছুও পাচ্ছিলাম না। এমনও হয়েছে- একসময় আমি একেবারেই অভিনয় করতাম না। হয়তো বছরে এক বা দু'বার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কাজগুলো হওয়ার পর একজন অভিনেতা হিসেবে আমার আকাঙ্ক্ষা বেড়েছে। এই মাধ্যমে অভিনয়ের ফলে নানা ধরনের ভাবনা তৈরি হয় মনে। এই প্ল্যাটফর্মের জন্য নানা ধরনের চরিত্র সৃষ্টি করেন নির্মাতা-লেখকরা। সেই হিসেবে অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছি গত দুই বছরে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার সর্বশেষ কাজ 'বোধ', যা পরিচালনা করেছেন অমিতাভ রেজা। 'বোধ' আমার কাছে আকর্ষণের বিষয় হওয়ার কারণ, ওটিটিতে অন্য যে ধরনের চরিত্রগুলো করেছি, তা থেকে এটি সম্পূর্ণরূপে আলাদা। একজন অভিনেতা হিসেবে যখন একটি আলাদা চরিত্র মনে করবেন, তখন এক ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়।

এই সিরিজে আমাকে দেখা যাচ্ছে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের ভূমিকায়। চরিত্রটি আলাদা বলছি এ কারণে, একজন বিচারক অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। অবসরে যাওয়ার পর তাঁর জীবনটা একই রকম থাকে না। এখানে ভেতরের গল্প রয়েছে। স্ত্রীকে নিয়ে নানা সংকট আছে। তাঁর কন্যার সঙ্গে সম্পর্কের নানা দিক আছে। এসব বিষয় যদি চরিত্রের চেয়ে ভিন্নভাবে গল্পের ভেতর দিয়ে বের হয়ে আসে, সেই চরিত্রে অভিনয় করাটা খুব সাদামাটা নয়; কিন্তু সাদামাটা ধরনেরই। অভিনয়ের চ্যালেঞ্জ এটাই, আপনার বাড়তি কিছু করার নেই। কিন্তু আপনার অসহায়ত্ব, লড়াইয়ের ইচ্ছা, আবার বয়সকে মানা, সময়কে মানা- সবকিছু মেনে একটি চরিত্রকে রূপায়ণ করা আলাদা একটা ব্যাপার; একই সঙ্গে উপভোগ্যও। নতুন কিছু করার আনন্দই অন্য রকম। সে হিসেবে আমার কাছে 'বোধ' আলাদা একটা প্রযোজনা এবং অমিতাভ রেজার দক্ষতা সম্পর্কে আমরা কমবেশি জানি। সেখানে তাঁর গল্পকে কীভাবে সে পর্দায় উপস্থাপন করে, সেটাও আমরা খুব ভালোভাবে দেখি। সব মিলিয়ে এ কাজটি আমার কাছে আবেগের। অনেক নতুন, অনেক আলাদা।

অমিতাভ রেজা

মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক আর ভালোবাসার গল্প 'বোধ'। ক্ষমতার জোরে অবৈধভাবে ভূমি দখলের ঘটনাকেও তুলে এনেছি গল্পে। ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কথা বলতে চেয়েছি। কিছু আগ্রাসী মানুষের গল্পও রয়েছে। অনেকে বিচার পায়, কিন্তু ন্যায়বিচার পায় না- এটা দেখানোর চেষ্টা করেছি। সিরিজটির চিত্রনাট্য যৌথভাবে লিখেছেন রফিকুল ইসলাম পল্টু ও জাহিন ফারুক আমিন। গল্পের ভেতর তাঁরা সুনিপুণভাবে অনেক কিছু তুলে এনেছেন। 'বোধ' মুক্তি পেয়েছে বেশিদিন হয়নি। সিরিজটি নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। নিজের সৃষ্টি দিয়ে জনপ্রিয়তা পাব কিংবা কাজটি নিয়ে হইচই পড়বে- এটি মাথায় রেখে কখনও নির্মাণ করিনি। সাধারণ মানুষ ওয়েব সিরিজটি দেখছেন, এটুকুই যথেষ্ট। ভালো কাজের দর্শক ধীরে ধীরে বাড়ে। এ সিরিজের ক্ষেত্রে সেটাই হচ্ছে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই এক ধরনের বোধ আছে। সেটি জাগ্রত করার জন্যই গল্প তৈরি করা হয়েছে, যে কারণে এটি দর্শকের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে।

এটা আমার নির্মাণের উদ্দেশ্য। আমার কাছে সিরিজ বানানো কোনো পরীক্ষা কিংবা প্রতিযোগিতা নয়, এটি দর্শকের সঙ্গে গল্পকার ও শিল্পীর একটি কথোপকথন। আমি শুধু আমার কথোপকথন করেছি; এখন দর্শক ভালো বলবে, না খারাপ বলবে- এটা নিয়ে আমি খুব বেশি চিন্তিত নই। যে কোনো কাজ কিছু মানুষের ভালো লাগে, কিছু মানুষের ভালো লাগে না- এটাই স্বাভাবিক। ভালো লাগুক কিংবা খারাপ, আমি যে কথা বলতে চেয়েছি, সেই কথাটা যদি দর্শকের জীবনে কোনো বোধ সৃষ্টি করে, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বের। এই সিরিজে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা সবাই পরীক্ষিত অভিনয়শিল্পী। তাঁরা যে শুধু দারুণ অভিনয়শিল্পী তাই-ই নয়, তাঁদের সঙ্গে আমার সম্পর্কও বন্ধুত্বপূর্ণ। আমি তাঁদের নিয়ে কাজ করতে পেরেছি, এটাই আমার বড় পাওয়া। আমাদের টিমের সব শিল্পীর কাজ নিয়েই আমি মুগ্ধ। যে যাঁর জায়গা থেকে সেরাটি দিয়েছেন, যা আমার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। গল্পের প্রয়োজনে এর দৃশ্যধারণ হয়েছে আদালত এলাকায়। সেই কাজটিও বেশ কঠিনই ছিল শুটিং টিমের জন্য। শুটিংয়ের আগে অনেক প্রস্তুতি নিয়েছি, এরপরও আমরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে যখন কোর্ট এলাকার শুটিং শেষ করে চলে আসি, পরে দেখি- একটি চরিত্রের শার্টের কলার ঠিক ছিল না, তাই সেই দৃশ্যটি আবার করতে হয়েছে। 'বোধ' দেখার পর অনেকেই দ্বিতীয় মৌসুমের অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়েছেন। এটাই ভালো লাগার।

রুনা খান
'বোধ' সিরিজের গল্প ও চরিত্রই আমাকে কাজে আগ্রহী করেছে। এখানে নতুন গল্প বলতে চেয়েছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা। গল্পটি সবাই পছন্দ করেছেন। যাঁরা কাজটি দেখেছেন, তাঁরা ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন। সিরিজের একজন অভিনেত্রী হিসেবে এটি ভালো লাগার ব্যাপার। এখানে দীপ্তি রানী সাহা নামের এক শিক্ষিকার চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে চরিত্রটি এগিয়ে গেছে। শুটিং হয়েছে পুরান ঢাকায় একটি বাড়ি, বাফাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। চরিত্রটি নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যেতে চাই না। আমি চাই, দর্শক চরিত্রটি পর্দায় দেখুক। তাঁদের ভালো লাগা-মন্দ লাগার কথা তুলে ধরুক। অমিতাভ ভাই দেশের গুণী নির্মাতাদের একজন। তাঁর কাজ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। একটি কাজের গল্প ও নির্মাণ যদি ভালো হয়, সেই গল্পে যাঁরা অভিনয় করেছেন তা যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়, তাহলে দর্শক সেটি পছন্দ করবেন বলে আমি মনে করি।

এটি শুধু বোধ নয়, যে কোনো ভালো কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অনেক গোছালো টিমের সঙ্গে কাজ করেছি। যে জন্য কাজ করতে গিয়ে বিশেষ চ্যালেঞ্জ বা অসুবিধা- কোনো কিছুরই মুখোমুখি হতে হয়নি। সবাই মিলে ভালো কাজ করার চেষ্টা ছিল। যে জন্য সিরিজটির প্রশংসা সবার মুখে। প্রস্তুতি, রিহার্সেল, লুক টেস্টসহ একটি শুটিংয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার- সবই করেছেন নির্মাতা। অমিতাভ ভাই কাজের ক্ষেত্রটা সুন্দর করে তৈরি করেন, যা অভিনয়শিল্পীদের জন্য আরামদায়ক। এ সিরিজের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন বরেণ্য অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন। এ রকম একজন গুণী অভিনেতার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাই আলাদা। সবকিছু মিলিয়ে শুরু থেকে এ সিরিজটি ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। নতুন সময় এসেছে; 'বোধ' নতুন করে জোয়ার সৃষ্টি করেছে। ওটিটির প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বেড়েছে। পয়সা খরচ করে আমাদের কাজগুলো দেখছেন দর্শক। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কনটেন্টগুলো পশ্চিমবঙ্গেও আলোড়ন তুলেছে। সেখানকার দর্শকের কাছে দেশের সিরিজের রয়েছে আলাদা কদর।

আরও পড়ুন

×